খুলনায় বিএনপির সমাবেশের আগে ভোগান্তি
২১ অক্টোবর ২০২২ধর্মঘটের ফলে চাকরির পরীক্ষায় অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছেন ৷ তবে খুলনায় গণসমাবেশে যোগ দিতে মাগুরার অধিকাংশ নেতা-কর্মী এরই মধ্যে খুলনা পৌঁছে গেছেন বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন৷ নেতা-কর্মীরা যশোর পর্যন্ত বাসে গিয়ে, সেখান থেকে ট্রেনে করে খুলনা গেছেন৷ বাকিরা যাচ্ছেন ছোট যানবাহনে ভেঙে ভেঙে; অনেকে আবার ট্রলারে করে৷
কথিত আন্তঃজেলা বাস ধর্মঘটের কথা উল্লেখ করে মাগুরা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইসহাক মল্লিক এবং মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ইমদাদুর রহমান জানান, তাদের জেলায় এর কোনো প্রভাব পড়েনি৷ সরাসরি খুলনা বাদে সব জেলার সঙ্গে বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে৷
বিভিন্ন দাবিতে বিভাগীয় পর্যায়ে গণসমাবেশের ধারাবাহিকতায় শনিবার খুলনা মহানগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বরে সমাবেশের আয়োজন করেছে বিএনপি৷ এরই মধ্যে অনুমতি পেয়েছেন তারা; সমাবেশ ঘিরে চলছে প্রচারণা৷
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আক্তার হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার রাতেই অনেক নেতা-কর্মী বাসে করে খুলনা চলে গেছেন৷ অনেকে শুক্রবার যশোর পর্যন্ত বাসে গিয়ে, সেখান থেকে ট্রেনে করে খুলনা গেছেন৷ বাকিরা শুক্রবার ও শনিবার বাসে করে যশোর যাবেন৷ পরে সেখান থেকে ছোট যানবাহন ও মোটর সাইকেলে করে খুলনা যাবেন৷ তিনি বলেন, ‘‘দুর্ভোগ ও কষ্ট করে করে হলেও মাগুরা বিএনপির নেতা-কর্মীরা খুলনার সমাবেশে যোগদান করবেন৷ সরকার শুধু শুধু খুলনার সঙ্গে বাস যোগাযোগ বন্ধ করে তামাশা করেছে৷”
এদিকে শুক্রবার ভোরে খুলনার সোনাডাঙ্গা থানা পুলিশ মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির ১০ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে বলে আক্তার হোসেন দাবি করেছেন৷
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘‘ওই নেতা-কর্মীরা বাস থেকে খুলনায় পৌঁছানোর পরপরই পুলিশ তাদের আটক করে৷ এছাড়া হোটেলে থাকা মাগুরা থেকে যাওয়া নেতা-কর্মীদের পুলিশ নানাভাবে হয়রানি করছে৷”
এদিকে মহম্মদপুর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যক্ষ মৈমুর আলী মৃধা ও সদস্য সচিব আক্তারুজ্জামান সমাবেশ সফল করতে এবং কর্মীদের উৎসাহ দিতে শুক্রবার সকালে উপজেলা সদরে নেতা-কর্মীদের নিয়ে লিফলেট বিতরণ করেছেন৷
শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি বদরুল আলম হিরো জানান, তিনি নেতা-কর্মীদের নিয়ে খুলনা যাওয়ার জন্য আটটি বাস ও পাঁচটি মাইক্রোবাস ভাড়া করেছিলেন কিন্তু সরকার দলের ‘চাপে' বৃহস্পতিবার বাস ও মাইক্রোবাস মালিকরা ভাড়া বাতিল করেছে৷ যে কারণে শুক্রবার রাতেই অনেক নেতা-কর্মী বাসে করে খুলনা পৌঁছেছেন৷
তিনি বলেন, ‘‘২০০ নেতা-কর্মীকে পাংশা দিয়ে ট্রেনে করে পাঠানো হয়েছে৷ এ ছাড়া নদী পথে দুইটি ট্রলারে করে দুই শতাধিক নেতা-কর্মীকে খুলনা পাঠানো হয়েছে৷”
সমাবেশের আগের দিন শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে খুলনায় কোনো বাস প্রবেশ করতে পারছে না৷ শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলবে এ পরিবহন ধর্মঘট৷
শুক্রবার সকালে খুলনার বাস টার্মিনাল ঘুরে অধিকাংশ পরিবহণ কাউন্টার বন্ধ দেখা গেছে৷ সেখানে সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা-খুলনা রুটের বাস ঢাকা থেকে যশোর ও গোপালগঞ্জ পর্যন্ত চলছে৷ সাতক্ষীরামুখী যেসব বাস যশোর হয়ে চলে, সেগুলো চলছে তবে যেগুলো খুলনা হয়ে চলে, সেগুলো বন্ধ রয়েছে৷ মূলত খুলনায় কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে ও খুলনা থেকে কোনো রুটে গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে না৷
সড়ক ও মহাসড়কে নছিমন, করিমন, ভটভটি ও ইজিবাইকসহ সব অবৈধ যান চলাচল বন্ধের দাবিতে এ ধর্মঘটের ডাক দেয় জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস মালিক সমিতি৷ এ ধর্মঘটের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন৷
এদিকে বিএনপি বলছে, তাদের গণসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতে ও বিপুল মানুষের উপস্থিতি ঠেকাতে ষড়যন্ত্র করে এ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে৷ তবে সমাবেশ সফল করতে নেতা-কর্মীরা আগেই খুলনা শহরে আসতে শুরু করেছেন৷
এদিকে খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বিপ্লব বলেন, ‘‘বাস মালিক সমিতির সিদ্ধান্তের সঙ্গে মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন একাত্মতা প্রকাশ করেছে৷ সে কারণে আমরা কোনো গাড়ি চালাচ্ছি না৷”
তবে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ৷ বিশেষ করে নিয়োগ পরীক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েন সবচেয়ে বেশি৷ সব রুটের বাস বন্ধ থাকায় সকাল থেকে ইজিবাইক ও ভ্যানে করে ভেঙে ভেঙে খুলনায় আসেন তারা৷
খুলনা শহরে সমাজকর্মী নিয়োগ পরীক্ষা দিতে আসা সাতক্ষীরার আরজু রহমান বলেন, ‘‘খুলনায় কোথাও থাকার জায়গা নেই তাই পরীক্ষা দিতে বাড়ি থেকেই আসতে হয়েছে৷ গাড়ি না চলায় ইজিবাইক, ভ্যানে কষ্ট করে খুলনায় পৌঁছেছি৷ পরীক্ষা শেষে আবার আমাকে কষ্ট করে বাড়ি ফিরতে হবে৷”
ঢাকা থেকে সুন্দরবন ভ্রমণে আসা তানভীর আহমেদ বলেন, ‘‘রাজনৈতিক কারণে বাস ধর্মঘট ডেকে যাত্রীদের হয়রানি করা হচ্ছে৷ এখন আমি কি ভাবে ঢাকায় যাবো তাই ভাবছি৷ আমার যত কষ্টই হোক যেতেই হবে৷”
বিএনপির সমাবেশের ব্যাপারে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘‘সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে৷ সমাবেশের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকবে৷”
খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুদরত-ই-আমির এজাজ খান বলেন, ‘‘খুলনার বিভিন্ন উপজেলা এবং বিভাগের অন্যান্য নয়টি জেলা থেকে গণসমাবেশে নেতা-কর্মীদের আসা বাধাগ্রস্ত করতেই পরিকল্পিতভাবে বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ সেজন্য দশ জেলার নেতাকর্মীদের বিকল্পভাবে সমাবেশে আসতে আহ্বান জানানো হয়েছে৷ বাধাবিপত্তি ঠেলে বিভাগের আশপাশের বিভিন্ন জেলার নেতা-কর্মীরা বৃহস্পতিবারই ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে খুলনা অভিমুখে যাত্রা করেছেন৷ ”
খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা বলেন, নেতাকর্মীরা পুলিশের ঝামেলা এড়াতে আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি, আবার কেউ কেউ হোটেলে অবস্থান করছেন৷ খুলনার এই সমাবেশ হবে স্মরণকালের বৃহৎ সমাবেশ৷
এদিকে বিএনপির অভিযোগ অস্বীকার করে খুলনা নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা বলছেন, ‘‘বিএনপি পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ আহ্বান করেছে৷ এটা প্রতিহত করতে হবে বা বাধা দিতে হবে, এটা আমরা বিশ্বাস করি না৷ বাস বন্ধ করেছে বাস মালিক সমিতি এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার৷”
খুলনায় বিএনপির ডাকা সমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদের ‘গ্রেপ্তার ও হয়রানি' করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷
শুক্রবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে তিনি বলেন, ‘‘আগামীকাল (শনিবার) খুলনায় আমাদের বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্রে করে সরকার ইতোমধ্যে একটা সন্ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে খুলনায়৷ তারা পথে পথে নেতা-কর্মীদেরকে, সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার করছে৷
সমাবেশে বাধা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘‘যদি কোনো রকম সমস্যা তৈরি হয়, তার সকল দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে সরকারকে নিতে হবে৷”
সংবাদ সম্মেলনে এ বিএনপি নেতা বলেন, ‘‘গতকাল রাতে তারা আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যেখানে তিনি এটার (সমাবেশের) দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা হিসেবে গিয়েছেন, তিনি যে বাসায় অবস্থান করছেন, সেখানে পুলিশ রেইড করেছে এবং সেখান থেকে ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে৷
এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)