গণতন্ত্র সূচকে দুই ধাপ পেছাল বাংলাদেশ
লন্ডনভিত্তিক সংস্থা ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট গণতন্ত্র সূচক ২০২৩ প্রকাশ করেছে৷ সূচকে দুই ধাপ পিছিয়ে এবারও ‘‘হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা’’ তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ৷
গণতন্ত্র সূচক কী?
২০০৬ সাল থেকে নিয়মিত এই সূচক প্রকাশ করছে ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ গ্রুপের গবেষণা ও বিশ্লেষণ বিভাগ ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট৷ এই সূচক তৈরিতে বিশ্বের ১৬৫টি দেশ এবং দুইটি অঞ্চলের শাসনব্যবস্থাকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে৷
যেসব বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয়
পাঁচটি মানদণ্ড অনুসরণ করে তালিকাটি প্রকাশ করা হয়েছে৷ এগুলো হলো নির্বাচন প্রক্রিয়া ও বহুত্ববাদ, সরকার পরিচালনা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং নাগরিক অধিকার৷
চার ধরনের শাসন
গণতন্ত্র সূচকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়৷ পূর্ণ গণতন্ত্র, ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র, হাইব্রিড বা মিশ্র শাসনব্যবস্থা এবং কর্তৃত্ববাদী শাসন৷ ২০২৩ সালের সূচকে দেখা গেছে, বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষই কর্তৃত্ববাদী শাসনের অধীনে বাস করছেন৷ মাত্র আট শতাংশ মানুষ বাস করছেন পূর্ণ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায়৷
হাইব্রিড রেজিম মানে কী?
এই ধরনের শাসনব্যবস্থার একটা চিত্র তুলে ধরেছে ইআইইউ৷ এগুলো হলো, নির্বাচনে অনেক অনিয়ম হয়, যা অনেকসময় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাধা তৈরি করে৷ বিরোধী দল এবং প্রার্থীর ওপর সরকারি চাপ সাধারণ ঘটনা৷ দুর্নীতির মারাত্মক বিস্তৃতি ও দুর্বল আইনের শাসন৷ দুর্বল সুশীল সমাজ৷ সাধারণত সাংবাদিকদের হয়রানি ও চাপের মুখে থাকতে হয়৷ বিচারব্যবস্থাও স্বাধীন নয়৷
বাংলাদেশের পরিস্থিতি
গত দুই বছরের মতো এবারও বাংলাদেশের শাসনব্যবস্থাকে হাইব্রিড রেজিম হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ বাংলাদেশ স্কোর - ৫.৮৭৷ ১৬৭টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৭৫তম স্থানে৷ পাঁচটি ধাপের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে কম স্কোর করেছে নাগরিক স্বাধীনতা (৪ দশমিক ৭১) ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণে (৫ দশমিক ৫৬)। সবচেয়ে বেশি স্কোর করেছে নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও বহুত্ববাদে (৭ দশমিক ৪২)।
তলানিতে দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশ
২০২৩ সালের গণতন্ত্র সূচকে তলানিতে (১৬৭তম) রয়েছে আফগানিস্তান। দেশটির স্কোর শূন্য দশমিক ২৬। এর ওপরের দুই অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে মিয়ানমার (১৬৬তম) ও উত্তর কোরিয়া (১৬৫তম)।
দক্ষিণ এশিয়ায় বাকিদের কী অবস্থান?
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে ভারত ও শ্রীলঙ্কা। সূচকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের অবস্থান ৪১তম। শ্রীলঙ্কার ৭০তম। অন্যদিকে বাংলাদেশের পরে রয়েছে ভূটান (৮১তম), নেপাল (৯৮তম) ও পাকিস্তান (১১৮তম)।
২৪টিতে পূর্ণ গণতন্ত্র রয়েছে
সূচকে মাত্র ২৪টিতে পূর্ণ গণতন্ত্র রয়েছে। ৫০টির গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ। বাংলাদেশসহ ৩৪টি দেশ ও অঞ্চলে হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা বিদ্যমান। আর সবচেয়ে বেশি ৫৯টির শাসনব্যবস্থা কর্তৃত্ববাদী। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও রাশিয়ার কথা উল্লেখ করে বলেছে, এসব দেশের নির্বাচনে বিরোধী দলগুলো রাষ্ট্রীয় দমন–পীড়নের শিকার হয়েছে, হচ্ছে। এসব দেশে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকারে পরিবর্তন কিংবা পূর্ণ গণতন্ত্রের সুযোগ নেই।