‘গণহত্যা মামলা মিয়ানমারের রাজনৈতিক পরাজয়’
৯ ডিসেম্বর ২০১৯আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মিয়ানমারের রাজনৈতিক এবং সশস্ত্র নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনেছে গাম্বিয়া৷ মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক আদালতে এসংক্রান্ত শুনানিতে সশরীরে উপস্থিত থেকে তাঁর দেশের অবস্থান তুলে ধরবেন৷
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আন্তর্জাতিক আদালতে এ বিষয়ে কয়েক বছর ধরে আইনি প্রক্রিয়া চলবে৷ মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশ নীতির উপর এই মামলার প্রভাব কী হতে পারে তা জানতে মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মিশায়েল লুবিনার সঙ্গে কথা বলেছে ডয়চে ভেলে৷
ডয়চে ভেলে: গণহত্যা ইস্যুতে মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক আদালতে হাজির হতে হচ্ছে৷ দেশটির উপর এর প্রভাব কী হতে পারে?
মিশায়েল লুবিনা: মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক খ্যাতির উপর এটি আরেকটি আঘাত৷ আমি ঠিক জানি না দেশটির সাধারণ মানুষ এটা বুঝতে পারছে কিনা যে, রোহিঙ্গা সংকট তাদের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি যথেষ্ট ক্ষুন্ন করেছে৷ আমি ধারণা করি, অধিকাংশ মানুষ এ সম্পর্কে সচেতন নয়, কিংবা, বিষয়টিকে এড়িয়ে যাচ্ছেন৷ বিশেষ করে দেশটির সেনাবাহিনীর মধ্যে এই ধারনা রয়েছে যে, এই ইস্যুতে তারা পার পেয়ে যাবে৷ নিরাপত্তাবাহিনীগুলো মনে করছে, আগের অনেক অপরাধের মতো এবারও তাদের জবাবদিহিতার মুখে পড়তে হবে না৷
কিন্তু, যেহেতু বিষয়টি আন্তর্জাতিক আদালতে পৌঁছেছে, তাই সেটিকে আর হালকা করে দেখার সুযোগ নেই৷ এটাও ঠিক, এই মামলার ভবিষ্যত কী হবে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না, কেননা, গণহত্যা প্রমাণ করা বেশ কঠিন ব্যাপার৷ তবে, একথা এখনই বলা যায় যে, মামলার ফলাফল যা-ই হোক পুরো প্রক্রিয়াটির কারণে রাজনৈতিকভাবে মিয়ানমারের পরাজয় ঘটেছে৷
মিয়ানমারের পক্ষে সাফাই গাইতে সূ চি নিজেই আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার কারণ কী বলে আপনার মনে হয়?
আমি তার এই সিদ্ধান্তের কথা শুনে প্রথমে বিস্মিত হয়েছি৷ কিন্তু তারপর বুঝতে পেরেছি যে, এটি তাদের স্বার্থে একটি চমৎকার রাজনৈতিক পদক্ষেপ৷ আমার মনে হয়, এরসঙ্গে দেশটিতে আসন্ন নির্বাচনের সম্পর্ক রয়েছে৷ সু চি আগামী বছরে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের আগে তাঁর প্রতি জনসমর্থন বাড়াতে চাচ্ছেন৷ আর সেটা পেতে এই হেগ যাত্রা বেশ কাজে আসবে৷ কেননা, পুরো দেশ তার প্রতি সমর্থন জানিয়ে এক পতাকার নীচে চলে আসবে৷ আর এই জাতীয়তাবাদী অনুভূতিকে পুঁজি করে সু চি আগামী নির্বাচন জয়ের চেষ্টা করবেন৷
সূ চির এই সফরের পেছনে আরেকটি গোপন কারণও থাকতে পারে৷ দেশটির সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সু চি সরকারের সম্পর্ক উষ্ণ নয়৷ কিন্তু এখন যেহেতু তিনি আন্তর্জাতিক স্তরে সামরিক বাহিনীর পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন, সেহেতু দুই পক্ষের মধ্যকার সম্পর্কের উন্নতি ঘটতে পারে৷ আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটির সরকারকে যেকোনো সময় উৎখাত করতে পারে৷ সু চিও এটা জানেন৷
আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলা লড়ার রাজনৈতিক পরিণতি সম্পর্কে মিয়ানমার কতটা সচেতন বলে আপনি মনে করেন?
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়ে সামগ্রিকভাবে মিয়ানমারের মানুষের মধ্যে ধারণা খুব সীমিত বলে আমার মনে হয়৷ সু চি হচ্ছেন সেদেশের অল্প কয়েকজন মানুষ, যারা এই সম্পর্কের উপর মামলাটির প্রভাব সম্পর্কে বোঝেন৷ সেনা কর্মকর্তারা বিষয়টি বোঝেন না৷ তারা মনে করে, চীন এবং অন্যান্য এশীয় দেশ তাদের রক্ষা করবে৷ এই ধারণা অবশ্য গত কয়েক দশকের আলোকে চিন্তা করলে ভুল নয়৷ কেননা, অতীতে অনেক অপরাধ করেও তারা পার পেয়ে গেছেন৷
কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কিংবা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন৷ সেখানে মামলা চলাকালে বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরো আলোড়ন সৃষ্টি করবে এবং গণহত্যা ইস্যুতে মিয়ানমারের নাম স্থায়ীভাবে রুয়ান্ডা, কম্বোডিয়া কিংবা সার্বিয়ার মতো দেশগুলোর সঙ্গে যুক্ত হবে৷ এমনকি এটা যদি আইনিভাবে প্রমাণও করা না যায়, গণহত্যার সঙ্গে মিয়ানমারের নামটি থেকে যাবে৷
রোডিয়ান এবিগহাউসেন / এআই