অজানা প্রাণিজগত
১২ জুলাই ২০১৩ভূপৃষ্ঠের একটা বড় অংশই পানিতে ঢাকা৷ কিন্তু আজ পর্যন্ত সমুদ্রগর্ভ সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান সীমিত৷ সাগরের পানিতে যে সব জীব ও প্রাণী থাকে, তাদের প্রায় ৯৫ ভাগই আমাদের অজানা৷ একটি গবেষণা প্রকল্প সেই রহস্য সমাধানের চেষ্টা করছে৷
জার্মানির কিল শহরের সামুদ্রিক গবেষণা কেন্দ্র জিওমার-এর বিজ্ঞানীরা ইয়াগো নামের একটি সাবমার্সিবল যান তৈরি করেছেন৷ ইয়াগো নামের এই ছোট্ট ডুবোজাহাজটিতে মানুষেরও বসার জায়গা আছে৷ সিনিয়র পাইলট ইয়ুর্গেন শাউয়ার ও তাঁর সঙ্গীরা পরবর্তী অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন৷
ইয়াগো-কে সমুদ্রগর্ভে উদ্ভিদ ও প্রাণিজগত সম্পর্কে গবেষণার কাজে লাগানো হয়৷ ইয়াগো-র সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, তা সমুদ্রপৃষ্ঠের সঙ্গে তারের মাধ্যমে সংযুক্ত নয়৷ কাজেই ডুবোজাহাজটি নিজের মর্জিমতো ঘোরাফেরা করতে পারে৷ শাউয়ার বলেন, ‘‘ইয়াগো ডুবোজাহাজটি ছোট ও হালকা৷ এটি একটি দুই আরোহীর সাবমার্সিবল, যা ৪০০ মিটার গভীরে নামতে পারে৷ সাগরের আলোকিত অংশই আমরা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারি৷ আসলে ৪০০ থেকে ৫০০ মিটার গভীরেই সবচেয়ে আশ্চর্য সব জিনিস দেখতে পাওয়া যায়৷''
ডুবোজাহাজে পাইলট ছাড়া আরও একজনের বসার জায়গা আছে৷ অ্যাক্রিলিক কাচের তৈরি দুটো জানলা দিয়ে চতুর্দিক পর্যবেক্ষণ করা যায়৷ শাউয়ার বলেন, ‘‘ইয়াগো-র প্রযুক্তিটা খুব কঠিন নয়৷ ডুব দেওয়া কিংবা ভেসে ওঠা, সেটা করা হয় বাতাসের মাধ্যমে – পানির চৌবাচ্চাতে প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে যা নিজেরাই করে দেখা যেতে পারে৷ একটি সহজ ও নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তি৷''
সাগর থাকার ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি অত তাড়াতাড়ি ঘটছে না, কেননা সাগরের পানি কার্বন ডাইঅক্সাইড শুষে নেয়৷ তবুও সমুদ্রগর্ভে প্রাণী ও উদ্ভিদের উপর প্রভাব পড়ছে৷ ইয়াগো-র রোবোট হাত দিয়ে স্যাম্পল নিয়ে পরে জিওমার-এর গবেষণাগারে তা অনুসন্ধান করা সম্ভব৷
ইয়ানিনা ব্যুশার তাঁর স্নাতকোত্তর গবেষণায় প্রবাল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন৷ কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ, তাপমাত্রা, প্রবালদের খাদ্য বাড়লে কিংবা কমলে কী ধরনের প্রভাব পড়ে, এই হল তাঁর বিষয়৷ ইয়ানিনা বলেন, ‘‘আমরা মূলত জানতে চাইছি, সিওটু-র নির্গমন বাড়ার ফলে প্রবালদের উপর কী ধরনের প্রভাব পড়ে৷ কার্বন নির্গমন বাড়লে সাগরের পানির অ্যাসিডিটি বাড়ে, তাপমাত্রাও বাড়ে৷''
ইয়ানিনা ব্যুশার নিজে ইয়াগো'তে চড়ে সাগরের গভীরে নামার ও স্যাম্পল সংগ্রহ করার সুযোগ পেয়েছিলেন৷ সে এক আশ্চর্য অভিজ্ঞতা৷ তিনি বলেন, ‘‘ডুবোজাহাজের শব্দ সত্ত্বেও পানির নীচে সব কিছু ঠান্ডা, নিরিবিলি ছিল৷ বিশেষ কিছু চলাফেরা করে না৷ হয়তো একটা মাছ জানলার বাইরে দিয়ে সাঁতরে গেল৷ নয়তো খুবই শান্ত পরিবেশ৷''
কিল-এর সামুদ্রিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইউরোপে অগ্রণী৷ সারা বিশ্বে মাত্র স্বল্প কয়েকটি সাবমার্সিবল আছে৷ ইয়াগো ইতিমধ্যেই বিশ্বের প্রায় সব সাগরে ডুব দিয়ে এসেছে৷ ইয়ুর্গেন শাউয়ার বলেন, ‘‘আমি যেমন গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকা কিংবা লোহিত সাগরকে খুব ভালোভাবে চিনি৷ ওখানে অগভীর অংশে বহু প্রবাল গজায়, রিফ তৈরি হয়৷ সেখানে প্রচুর পরিমাণ আলো, পানিও বেশ গরম৷ উত্তর অ্যাটলান্টিকে শীতল, অন্ধকার পানিতে জাহাজ নিয়ে ডুব দিতে হয়৷ আর কয়েক মিটার নামলেই ঘুটঘুটে অন্ধকার, কোনো আলো নেই৷ কিন্তু আড়াইশো, তিনশো মিটার গভীরে রিফগুলো আছে, আছে নানাধরনের প্রবাল৷ মুগ্ধ হয়ে যেতে হয়৷ আমাদের এ ভাবে সাগরে নামার সুযোগ আছে৷''
এসি / এসবি