1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গরমের তীব্রতার মাঝেই খুলছে স্কুল

২ মে ২০২৪

আবহাওয়া দপ্তর বলছে, ৫ মে'র পর থেকে বাংলাদেশে তাপের তীব্রতা কমবে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। সেই সময়ের অপেক্ষায় না থেকে তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যেই শনিবার মাধ্যমিক এবং রবিবার খুলে দেয়া হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়।

https://p.dw.com/p/4fR9e
বন্ধ স্কুলের সামনের রাস্তায় চলছে একটি রিকশা
তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যেই খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

এদিকে এই তাপপ্রবাহে এ পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হিট স্ট্রোকে ১১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।

বাংলাদেশে এপ্রিল মাস জুড়ে রেকর্ড তাপপ্রবাহ চলেছে। মে মাসে তা কমে আসার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়াবিদরা বলছেন ৭৬ বছরে এমন তাপপ্রবাহ আর হয়নি।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও হালকা বৃষ্টিপাত হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, "এখন যে তাপপ্রবাহ আছে তাকে আমরা তীব্র তাপপ্রবাহ বলি। এবার পুরো এপ্রিল মাস জুড়েই তাপ প্রবাহ ছিল। আমাদের কাছে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত রেকর্ড আছে, তাতে এটা সর্বোচ্চ। এবারের তাপপ্রবাহের সময় ও এলাকার ব্যাপ্তি সর্বোচ্চ।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "এই তাপপ্রবাহে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা উচিত কিনা তা চিকিৎসকরা বলতে পারবেন।”

আবহাওয়া অফিস জানায়, ৩৬.০ থেকে ৩৭.৯ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড মৃদু,৩৮.০ থেকে ৩৯.৯ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড মাঝারি, ৪০.০ থেকে ৪১.৯  ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তীব্র এবং ৪২.০  ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড ও তার বেশি হলে অতি তীব্র তাপ প্রবাহ। আব্দুর রশীদ বলেন, "বাতাসে এবার ৫০-৬০ শতাংশ আদ্রতা। এটা আরো বেশি অস্বস্তি তৈরি করেছে।”

আবহাওয়া অফিস বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলেছে, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগের দু-এএক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে, সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

অনেকটা ঝুঁকির মধ্যেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হচ্ছে: অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান

খুলে যাচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যেই শনিবার থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে। রবিবার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ও খুলে দেয়া হচ্ছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যাপারে বলা হয়েছে, এক শিফটে পরিচালিত বিদ্যালয়গুলো প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলবে। দুই শিফটে পরিচালিত বিদ্যালয়গুলো প্রথম শিফট সকাল ৮টা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা এবং দ্বিতীয় শিফট সকাল পৌনে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলবে। তাপপ্রবাহ সহনীয় পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত অ্যাসেম্বলি বন্ধ থাকবে।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার, সংশ্লিষ্টদের নিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পাঠানো রুটিন বিবেচনায় নিয়ে উপজেলাভিত্তিক শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সাপ্তাহিক রুটিন প্রণয়ন করবেন।পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

কিন্তু মাধ্যমিকের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। বিজ্ঞাপ্তিতে শুধু বলা হয়েছে পরিস্থিতি বিবেচনা করে কোনো কোনো জেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা যাবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ জানিয়েছেন, "প্রাথমিক বিদ্যায়গুলোতে সকালে ক্লাস নেয়া ছাড়াও স্বাস্থ্য সতর্কতার ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।”

পবিত্র রমজান, ঈদুল ফিতর ও পয়লা বৈশাখের দীর্ঘ ছুটি শেষে গত ২১ এপ্রিল স্কুল-কলেজ খোলার কথা থাকলেও দেশজুড়ে তাপপ্রবাহের কারণে তা এক সপ্তাহ পিছিয়ে যায়। গত রবিবার স্কুল-কলেজ চালু হলে শিক্ষার্থীরা অনেক দিন পর ক্লাসে ফেরে। কিন্তু প্রচণ্ড গরমে বিভিন্ন স্থানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর পাওয়া যায়। গত সোমবার বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনা হলে হাইকোর্ট প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২ মে (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেয়।

সবার আগে তাদের স্বাস্থ্যের বিষয়টি দেখতে হবে: জিয়াউল কবির দুলু

অভিভাক ও চিকিৎসকরা যা বলেন

বাংলাদেশ অভিভাবক ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, "এখনো তীব্র তাপ প্রবাহ চলছে। এর মধ্যেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া খুব যৌক্তিক বলে আমার মনে হয় না। আরো কয়েকটি দিন দেখা যেতো। শিক্ষার ক্ষতি পরে পোষানো যাবে।  সবার আগে তাদের স্বাস্থ্যের বিষয়টি দেখতে হবে।”

তিনি বলেন, "বাংলাদেশের অধিকাংশ স্কুলেই ফ্যান ও এসি নেই। শহরের কিছু স্কুলে আছে। আর পর্যাপ্ত পানি ও সেনিটেশন ব্যবস্থাও নাই। গ্রামে অনেক স্কুল এখনো টিনের। সেখানে তাপ আরো বেড়ে যাায়। তার উপরে স্কুলগুলোতে কোনো ডাক্তার বা নার্স থাকে না। কোনো বাচ্চা গরমে আক্রান্ত হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা নেই সেখানে। আর গ্রামের স্কুলগুলো থেকে হাসপাতাল অনেক দূরে।  তাই ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।”

"আমরা বলেছিলাম করোনার সময়ের মতো অনলাইনে ক্লাস চালু রাখতে। কিন্তু সেই ব্যবস্থাও করা হলো না,” বলেন তিনি।

আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের  সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, "অনেকটা ঝুঁকির মধ্যেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হচ্ছে। তাই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন। বিশেষ করে যে-কোনো পরিস্থিতিতে শিক্ষক-ছাত্রদের যাতে হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে নেয়া যায়, তার ব্যবস্থা রাখতে হবে। ক্লাস রুম শীতল রাখার ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো। সেক্ষেত্রে দুপুর ১২ টার আগেই ক্লাস শেষ করে ফেলতে হবে। পর্যাপ্ত পানি ও ছায়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে।”

সর্বশেষ পরিস্থিতি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুম থেকে বৃহস্পতিবার বিকালে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার সারা দেশে হিট স্ট্রোকে কোনো মৃত্যুর খবর তারা পাননি। তবে আক্রান্ত হয়ে পাঁচজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সারাদেশে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন ২১ জন। তাদের মধ্যে ১১ জন মারা গেছেন। যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে একজন নারী। এটা হাসপাতাল থেকে নেয়া  স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব। তবে সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, দুইজন শিক্ষকসহ সারা দেশে এ পর্যন্ত ১৮ জন মারা গেছেন।

অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, "পানিশূন্যতার কারণেই এই হিটস্ট্রোক হয়। আর এটা যখন হয়, তার আগে বোঝা যায় না। বিশেষ করে বাচ্চারা তো বুঝতেই পারে না। বয়স্ক ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।”

ঢাকা যেভাবে পরিণত হচ্ছে উত্তপ্ত দ্বীপে