গর্ভবতী অবস্থায় মৃত্যু মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমতুল
২ জুলাই ২০০৯একজন নারীর যদি স্বাধীনতা খণ্ডিত হয়, শারীরিক, মানসিক অথবা বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ যদি ব্যাহত হয় - তাহলে স্বাভাবিকভাবেই তার অমিত সম্ভাবনার দ্বারগুলি রুদ্ধ হয়ে পড়ে৷ কিন্তু এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের অসচেতনতা, শিক্ষার অভাব, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ার কারণে গর্ভবতী অবস্থায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটে৷
আবার বহুক্ষেত্রে কন্যাশিশুর খাদ্য ও পুষ্টির প্রতি অবহেলার কারণে, কিশোরদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হারে কিশোরীরা নানাবিধ রোগে ভোগে৷ আর পরবর্তীতে এদেরই ভিটামিন ‘এ' ঘাটতির কারণে গর্ভবতী অবস্থায় মৃত্যু ঘটে এবং কর্মক্ষমতা কমে যায়৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠনের মতে, বাংলাদেশ বা ভারতের মতো দেশে ২০ বছর বয়সী বা তার থেকে বেশি বয়সী নারীদের তুলনায় ১৮ বছর বয়সের কম প্রসূতি মেয়েদের মৃত্যুর সম্ভাবনা প্রায় দুই থেকে পাঁচ গুণ বেশি৷
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার ১১তম অধিবেশনেও উঠে এলো এই ছবি৷ তারা জানায়, যে বিশ্বের প্রায় পাঁচ লক্ষ নারী গর্ভবতী অবস্থায় মারা যান৷ আর এদের প্রায় আড়াই লক্ষই বাস করেন আফ্রিকা মহাদেশে৷ এর কারণ হিসেবে কম বয়সে বিবাহ, সন্তানধারণ, নির্যাতন, ভ্রণ হত্যা এবং নারীর অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতাকেই তুলে ধরলো জাতিসংঘের নারী বিষয়ক একটি রিপোর্ট৷
সাম্প্রতিকতম উদাহরণ হিসেবে ভারতের এক ১৩ বছরের কিশোরীর কথা বলা হয়েছে রিপোর্টটিতে৷ বিয়ের পরপরই সন্তানধারণ করে মেয়েটি এবং তার পরিণতি হিসেবে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করতে হয় মেয়েটিকে৷
তবে স্বস্তির বিষয়, আগের তুলনায় গর্ভকালীন মৃত্যুর হার কিছুটা হলেও হ্রাস পেয়েছে বিশ্বে৷ ৯০-এর দশকের তুলনায় ২০০৫-এ ল্যাটিন অ্যামেরিকায় এই হার কমেছে প্রায় ২৬ শতাংশ৷ এশিয়ায় অন্তত ২০ শতাংশ৷ তবে আফ্রিকায় এই পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে মাত্র এক শতাংশ৷ তাই পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার ক্যামেরুন, মৌরিতানিয়া ইত্যাদি দেশে ডাক্তার, ধাত্রী ও নার্সদের গর্ভধারণ সংক্রান্ত বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে ইউনিসেফ৷ এমনকি, গত ১৭ই জুন গর্ভবতী অবস্থায় মৃত্যুকে মানবাধিকার লঙ্ঘন আখ্যা দিয়ে একটি প্রস্তাব পাশ করেছে জাতিসংঘ৷
প্রতিবেদক: দেবারতি গুহ, সম্পাদনা: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী