গাঁজা নিয়ে লুকোচুরি
৩০ অক্টোবর ২০১০ক্যানাবিস৷ বাংলায় বললে- গাঁজা৷ একে গঞ্জিকা, গাঞ্জা, সিদ্ধি নামেও ডাকা হয়৷ দেশে বিদেশে এর হরেক নাম, নানা যত্ন-আত্মি৷ নানান নামেই ডাকা হয় এই নেশা-দ্রব্যটিকে৷ কেউ ডাকেন - মারিহুয়ানা বলে৷ বাংলাদেশের হাংরি জেনারেশনের অনেক কবিই মারিহুয়ানা নিয়ে কবিতা লিখেছেন৷ এর বৈজ্ঞানিক নামটি হচ্ছে- ক্যানাবিস স্যাটিভা৷
জার্মান আইনে গাঁজা নিয়ে যেন খানিক ধোঁয়াটে অস্পষ্টতাই রয়েছে৷ মজার ব্যাপার হচ্ছে- আইনের হিসেবে স্কুলের কাছে কিংবা সাধারণ্যে হল্লা না করে যদি কেউ যৎসামান্য এই ক্যানাবিস বা গাঁজা টানে বা খায় তাহলে পরে সেটি কিন্তু জার্মানিতে শাস্তিযোগ্য কোন অপরাধ নয়! অবশ্য কেউ যদি সেটি বিপুল পরিমাণে বহন করেন, বিক্রি কিংবা তা অনেক পরিমাণে কারো পকেটে পাওয়া যায় তাহলেই রক্ষে নেই!
সঙ্গে রাখার জন্য বৈধ গাঁজার ‘যৎসামান্য পরিমাণ'টিও কিন্তু জার্মানির একেক জায়গায় একেক রকমের৷ যেমন, বার্লিনে এর পরিমাণটি অর্ধেক আউন্স বা পনেরো গ্রামের বেশি নয়৷ আবার ম্যুনিখে এটির পরিমাণ? মাত্র ছয় গ্রাম৷ জানা গেছে, গাঁজা বৈধকরণ ঢেরদিন ধরে জার্মানিতে একটি মামুলি রাজনৈতিক বিষয় হলেও সম্প্রতি তার পালে আবারো হাওয়া লেগেছে৷
সাম্প্রতিক নির্বাচনের সময় ‘ধূমপানের অধিকার' এই শ্লোগান নিয়ে জার্মানির বামপন্থী লিংকসপার্টাই উত্তর রাইন ভেস্টফালিয়া রাজ্যে গাঁজার বৈধতা দেওয়ার জন্য আওয়াজ তুলেছিল৷ বার্তামাধ্যমগুলো তাদের সংবাদ শিরোনামের জন্য বিষয়টি এককথায় লুফেই নিয়েছিল সেসময়৷ আর কে না জানে আড়ালে আবডালে অনেক গাঁজা প্রেমিকই রয়েছেন! তাদের ভোটটা যদি মেলে!
গ্রিনপার্টির এই দশ বছর কর্মসূচির মধ্যেও কিন্তু গাঁজা তার ঠাঁই করে নিয়েছে৷ নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট অটো শিলি যদিও ব্যক্তিগত পর্যায়ে গাঁজা বৈধ করে দেওয়ার পক্ষে কথা পেড়েছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পরে আর এ বিষয়ে কোনো রা কাড়েননি৷ যদিও প্রায় ২০ লক্ষ গেঁজেল রয়েছেন, কিন্তু গাঁজা নিয়ে এতোকাল সবাই খানিক যেন লুকোচুরিই খেলেছেন এই জার্মানিতে৷
বাম দলের এক সংসদীয় নেতা তো একবার বলেই বসেছিলেন, গাঁজা খুব নরোম ধাঁচের নেশাদ্রব্য৷ অ্যালকোহলের চাইতে এটি নিকৃষ্টও নয় আবার খুব ভালোও নয়৷ কেবল ভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গে এটি জড়িয়ে আছে বিধায়ই আমরা এর দিকে বাঁকা চোখে তাকাই৷ তার কথা - আমাদের যা করা উচিৎ সেটি হচ্ছে- অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছ থেকে গাঁজাকে দূরে রাখা আর প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এটি বৈধ করে দেওয়া৷ তিনি মনে করেন, এর ফলে মাদক বিক্রি সংক্রান্ত অপরাধ কমে আসবে৷ আর যে বিপুল অর্থ এই মাদক ব্যবসায় খাটছে, তাও কমে আসবে৷এদিকে বাভারিয়া অঞ্চলে আবার গাঁজার ব্যাপারে বেশ কড়াকড়িই রয়েছে৷
সব মিলিয়ে জার্মানির বিভিন্ন অংশে গাঁজার ধোঁয়ার অস্পষ্টতার মতোই এর বৈধতা নিয়েও যেন খানিক অস্পষ্টতাই রয়েছে, আর জনমানসে গাঁজার চরিত্রটিও আধেকলীন৷ সাম্প্রতিক এক জরিপের তথ্যে দেখা গেছে- জার্মানির ঠিক অর্ধেক মানুষ এর পক্ষে আর বাকি অর্ধেক রয়েছেন গাঁজা টানার বিপক্ষে! সর্বার্থে একে লুকোচুরি ছাড়া আর কিইবা বলা যায় বলুন!
প্রতিবেদন: হুমায়ূন রেজা
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক