গাইবান্ধার মাহফুজার জার্মানি সফর
তথ্যকল্যাণী মাহফুজা আক্তারের নিবাস বাংলাদেশের গাইবান্ধা জেলার প্রত্যন্ত গ্রামে৷ সেই গ্রাম থেকে মাহফুজার জার্মানি সফরের গল্প তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিঘরে৷
ডয়চে ভেলের আমন্ত্রণ
তথ্যকল্যাণী মাহফুজা আক্তার এবং ‘তথ্যকল্যাণী গ্লোবাল’ প্রকল্পের পরিচালক মোশাররফ হোসেন জার্মানির বন শহরে পৌঁছান ১৬ জুন৷ উদ্দেশ্যে ডয়চে ভেলের ‘দ্য বব্স – বেস্ট অনলাইন অ্যাক্টিভিজম’ অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ৷
মহাপরিচালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ
জার্মানি সফরের শুরুর দিনেই ডয়চে ভেলের মহাপরিচালক এরিক বেটারমানের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পান মাহফুজা আক্তার৷ গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম উপলক্ষ্যে আয়োজিত বিশেষ ডিনারে মাহফুজাকে অভিনন্দন জানান বেটারমান৷ পাশাপাশি তিনি স্মরণ করেন ১৯৭৩ সালে তাঁর বাংলাদেশ সফরের কথা৷ সেসময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন এরিক বেটারমান৷
লাজুক মাহফুজা
ডয়চে ভেলের দ্য বব্স প্রতিযোগিতার ‘গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম’ বিভাগে পুরস্কার জয়ের খবর প্রথম ধাক্কায় বিশ্বাসই করেননি মাহফুজা৷ পরর্বতীতে ডয়চে ভেলে থেকে সরাসরি ফোন পেয়ে আস্বস্ত হন তিনি৷ বনে আসার পরও ঠিক যেন স্বাভাবিক হতে পারছিলেন না তিনি৷ বিশেষ ডিনারে তাই বাঙালিদের সঙ্গ পেয়েও তাঁর লাজুক ভাব কাটে না৷
গ্রাফিটি আঁকা
দ্য বব্স প্রতিযোগিতায় জুরি অ্যাওয়ার্ড বিজয়ীরা গ্রাফিটি আঁকবেন, এমন পরিকল্পনা ছিল আগেই৷ ১৭ জুন তাই মাহফুজাও অন্য পাঁচ বিজয়ীকে নিয়ে যাওয়া হয় বনের এক ফুটবল মাঠের পাশের দেয়ালে৷ ইংরেজি ‘The Bobs’ শব্দ দুটিকে রং করেছেন বিজয়ীরা৷
তথ্যকল্যাণী
মাহফুজাকে বলা হয়েছিল, নিজের পছন্দের একটি শব্দ দেয়ালে লিখতে৷ তিনি লিখেছেন, ‘তথ্যকল্যাণী’৷ ডয়চে ভেলের মাল্টিমিডিয়া বিভাগের কর্মীরা তাঁর এই লেখালেখি প্রয়োজনমত ভিডিও করেছে, ছবি আকারে ধারণ করেছে৷
ওয়াও, বিউটিফুল!
ডয়চে ভেলে আয়োজিত গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামে এবার অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল দু’হাজারের বেশি৷ স্বাভাবিকভাবেই তাই ফোরামের নৌভ্রমণে ভিড় হবে প্রচুর, এমন একটা ধারণা ছিল আগে থেকেই৷ ভিড় এড়াতে মাহফুজা আগেভাগেই হাজির হন জাহাজের কাছে৷ রাইনে থাকা জাহাজের দিকে তাকিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘ওয়াও, বিউটিফুল!’
জার্মান খাবারে অরুচি
জার্মানি কেমন লাগছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে মাহফুজার ছোট্ট জবাব, ‘খুব ভালো লাগছে৷’ তবে জার্মানি খুব ভালো লাগলেও জার্মান খাবার তেমন একটা পছন্দ হয়নি তাঁর৷ নৌভ্রমণে অনেকটা জোর করে এই আলুর অংশবিশেষ খেয়েছেন তিনি৷
প্রশংসা
গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম সম্মেলনেকে কেন্দ্র করে আয়োজিত এই নৌভ্রমণে অনেকের দেখা পেয়েছেন মাহফুজা৷ তাদের একজন ডয়চে ভেলের এশিয়া বিভাগের প্রধান আলেকজান্ডার ফ্রয়েন্ড৷ মাহফুজার সঙ্গে আলাপকালে তিনি বাংলাদেশে তথ্যকল্যাণীদের কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেন৷
ওয়ার্কশপে মাহফুজা
১৮ জুন সকালে গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামে এক ওয়ার্কশপে অংশ নেন মাহফুজা আক্তার৷ এসময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ‘ইনফোলেডি গ্লোবাল’-এর পরিচালক মোশাররফ হোসেন, জার্মান সংস্থা ‘ফ্রেইসার’-এর লুকাস ক্রিস্টিয়ান ফিশার এবং ‘চেঞ্জ.অর্গ’-এর পাউলা হানেরমান৷ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন ডয়চে ভেলের ইংরেজি বিভাগের প্রধান ক্রিশ্চিয়ান সায়ার৷
সাক্ষাৎকার পর্ব
দ্য বব্স প্রতিযোগিতায় তথ্যকল্যাণী প্রকল্পের বিজয়ের খবর আগেই পৌঁছে গিয়েছিল দেশিবিদেশি মিডিয়ার কাছে৷ ডয়চে ভেলে বিভিন্ন ভাষায় এই বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ মিডিয়া ফোরামে রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনাল মাহফুজা এবং মোশাররফের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে৷
অবশেষে মাহেন্দ্রক্ষণ
গ্লোবাল মিডিয়া ফোরামের মাঝেই একটি অনুষ্ঠানে দ্য বব্স-এর জুরি অ্যাওয়ার্ড বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়৷ মাহফুজা আক্তারের হাতে সম্মাননা তুলে দেন ডয়চে ভেলের প্রধান সম্পাদক উটে শেফার৷ বাংলাদেশের তথ্যকল্যাণীদের প্রতিনিধি হিসেবে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন মাহফুজা৷
আমরাও পারি
দ্য বব্স পুরস্কার হাতে নিয়ে জানানো তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মাহফুজা বলেন, ‘‘শুরুতে তথ্যকল্যাণী হিসেবে আমাদের কাজ মোটেই সহজ ছিল না৷ তবে এখন গ্রামের মানুষ আমাদের সম্পর্কে জানে৷ আমরা গ্রামের মেয়ে হয়েও সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারছি, মানুষের তথ্য জানার অধিকার নিশ্চিত করতে পারছি৷’’
দ্য বব্স বিজয়ীরা
চলতি বছর দ্য বব্স প্রতিযোগিতায় জুরি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণকারীদের মধ্যে মাহফুজাসহ অন্যরা হচ্ছেন সেরা ব্লগ ক্যাটেগরিতে লি চেনপেং, ‘সেরা সামাজিক আন্দোলন’ ক্যাটেগরিতে মরক্কোর তরুণ প্রজন্মের উদ্যোগ ‘৪৭৫’-এর সদস্য হুদা লামকাদাম, ‘সেরা উদ্ভাবন’ ক্যাটেগরিতে ফ্রি উইবোর কার্ল লি এবং রিপোটার্স উইদাআউট বর্ডার্স ক্যাটেগরিতে সাংবাদিক ফাবি কুসাই-এর ভাই৷
মোশাররফ ও মাহফুজা
ডয়চে ভেলের দ্য বব্স প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ উপলক্ষ্যে অনেকবার ছবির জন্য পোজ দিতে হয়েছে মাহফুজাকে৷ মাঝামাঝে তাঁর সঙ্গী হয়েছেন মোশাররফ৷ ফ্লিকারে ডয়চে ভেলের পাতায় এসব ছবি পাওয়া যাবে৷
সবাইকে ধন্যবাদ
জার্মানিতে মাহফুজা বেশ লাজুক ছিলেন৷ তবে নিজ গ্রামে তিনি পরিচিত স্পষ্টবক্তা হিসেবে৷ জার্মানি থেকে বিদায়ের প্রাক্কালে মাহফুজা ডয়চে ভেলের সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি৷ মোশাররফের সঙ্গে ২০ জুন দুপুরে জার্মানি ত্যাগ করেন তিনি৷