গাড়ির গায়ে মজার কথা থেকে উঠে আসে মালিকের জীবনবোধ
বাস, ট্রাক, গাড়ির গায়ে মজার কথা লেখার চল কলকাতায় আগের তুলনায় কমলেও এখনো আছে। তার থেকে বোঝা যায় মালিকের চিন্তাভাবনার কথা।
শব্দদূষণকে বুড়ো আঙুল
সবচেয়ে বেশি যেটা দেখা যায় তা হলো, ‘ব্লো হর্ন’। শব্দদূষণের তোয়াক্কা না করে শহরের যানবাহন ইচ্ছে মত হর্ন বাজিয়ে থাকে। তবু কেন পিছনের গাড়িকে হর্ন বাজানোর অনুরোধ করা হয়, তার উত্তর গাড়ির চালকেরা দিতে পারেন না। বোঝা য়ায়, হর্ন বাজানো নিয়ে এখনো অসচেতন এই শহর।
নিরাপদে গাড়ি চালানোর বার্তা
‘ব্লো হর্ন’ ‘আওয়াজ করো’ অথবা ‘হর্ন মারো’- এই শব্দবন্ধগুলোর বাইরে সব থেকে বেশি যেটা দেখা যায় তা হল, ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এই ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ প্রকল্পের সূচনা করেন। তার পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন রাস্তায় এই বাক্যটি চোখে পড়ে। বিভিন্ন গাড়ির পিছনেও এই উক্তিটি দেখা যায়।
গাড়িতে নিজের জীবনদর্শন!
‘বয়স বাড়ছে, বন্ধু কমছে, দায়িত্ব বাড়ছে। আদর কমছে, চাপ বাড়ছে, সুখ কমছে। হ্যাঁ এটাই জীবন।’ গাড়ির পিছনে এত ‘দর্শনমুখর’ লেখা খুব কম দেখা যায়, বললেন রাস্তায় দাঁড়ানো একজন। লেখাটিতে টোটোচালকের জীবনবোধ ধরা পড়েছে।
‘বউ ভগবান, স্বামী দারোয়ান’
‘বউ ভগবান, স্বামী দারোয়ান'। এই লেখা থেকে বোঝাই যাচ্ছে বাস মালিক পুরুষ। এই ধরনের লেখা নিছক মজা নাকি তার পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের প্রকাশ তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কোনো যাত্রাপালা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এটা লেখা হয়েছে কি না, তা জানা নেই।
বাদ যাননি সিরাজও
‘বাংলা বিহার উড়িষ্যার নবাব, তারও ছিল টাকার অভাব।’ বাস মালিকের বক্তব্য অনুযায়ী, বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবও কোনও এক সময়ে অভাবের তাড়নায় পড়েছিলেন। এই লেখার মাধ্যমে অন্যদের মনোবল বাড়ানোর একটা চেষ্টা আছে বলে মনে করা হচ্ছে। নবাবের যদি অর্থাভাব থাকতে পারে তাহলে সাধারণ মানুষ যেন অর্থাভাবে বিচলিত না হন।
চরম সত্য
গাড়ির লেখার বানান নিয়ে মাথা না ঘামানোই ভালো। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুল বানান দেখা যায়। তবে এই লেখাটায় একটা চরম সত্য বলা রয়েছে। বহু মানুষ গাড়ি চালাতে চালাতে মোবাইলে কথা বলেন বা চলমান অবস্থায় মেসেজ পড়েন। তাদের উদ্দেশেই এই লেখা। ‘জীবনের থেকে মোবাইলের দাম বেশি?
গর্বিত মালিক
এই গাড়িটিতে লেখা, ‘দেখতে থাকুন আর জ্বলতে থাকুন।’ বোঝাই যাচ্ছে লেখক এখানে নিজের শ্রীবৃদ্ধি নিয়ে গর্বিত।
আত্মতুষ্টির ছবি
‘তোমার হিংসা আমার জয়’ এই লেখা থেকেও ফুটে ওঠে বাস মালিকের আত্মতুষ্টির কথা।
'গাড়ি আমার অন্নদাতা।’
মূলত ভাড়ার গাড়িতেই এই লেখাগুলো চোখে পড়ে। ব্যক্তিগত গাড়িতে সাধারণত পরিবারের সদস্যদের নাম লেখার চল রয়েছে। এই গাড়ির মালিক পিতামাতার পরেই তার গাড়িকে সম্মান জানিয়েছে। ‘পিতা মাতা জন্মদাদা, গাড়ি আমার অন্নদাতা।’
'কাকু বাঁচাও’
ভোলেবাবা পার করাবেন এটা বোঝা গেলো, কিন্তু বাসমালিক এখানে বাঁচার জন্য কাকুর শরণাপন্ন হয়েছেন দেখা যাচ্ছে। এই কাকু কে তা নিয়ে একটা কৌতূহল থাকে।
'গাড়ি চলবে চার ট্রিপ’
কোন গাড়ি কটা ট্রিপ করবে তা রুটের দূরত্বের ওপর নির্ভর করে। এই গাড়িটির দূরত্ব অনুযায়ী দৈনিক ৪টি ট্রিপ সম্ভব বলে মনে হচ্ছে। সঙ্গে এও বোঝা যাচ্ছে যে মালিক তারা মায়ের ভক্ত। তাই তিনি গাড়িতে লিখে রেখেছেন, “মহাতীর্থ তারাপীঠ, গাড়ি চলবে চার ট্রিপ।”
নিরাশার কথা কেন?
২০২৫ আসতে আর কয়েকদিন বাকি। তার আগেই গাড়ির মালিক লিখে রেখেছেন, ‘সবাই ভালো থাকবেন, ২০২৫ আমার শেষ জীবন’। এত নিরাশাব্যঞ্জক লেখা দেখে কৌতূহল হওয়ায় বাসের কন্ডাক্টরকে জিজ্ঞাসা করে যা উত্তর পাওয়া গেল তা হল, ২০২৫ সালে শুধু এই বাসটিই নয়, শহরের বুক থেকে উঠে যাবে এমন অনেক বাসই। কারণ এই বাসগুলি পনেরো বছরের সময় অতিক্রম করে ফেলছে।
‘জেনো শেষ বলে কিছু নেই’
‘নাথিং ইজ ওভার’। কিছুই শেষ হয়ে যায়নি। বড় আশাব্যঞ্জক এই বাণী। নতুন বছর আগতপ্রায়। তার আগে এই বাসের লেখার মাধ্যমে সকলকে অভিনন্দন রইলো।