1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গানে প্রচার অথবা রাজনীতির ‘চাপ’

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

রাজনৈতিক প্রহসনের ধাঁচে তৈরি এক ছবিতে আচমকা বদলে গেল গানের লাইন!‌ কেউ বলছেন, সস্তা প্রচারের আশায় এমন উদ্যোগ, আবার কারো সন্দেহের তির রাজনীতির দিকে৷

https://p.dw.com/p/3ovsk
‌হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী ছবির শ্যুটিংয়ের একটি দৃশ্য
ছবির শ্যুটিংয়ের একটি দৃশ্যছবি: Aniket Chattopadhyay

বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা এবং মেদিনীপুরের ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল সাংসদ দেব অধিকারী, ওরফে দেব এই ছবির প্রযোজক৷ তিনি পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন অনিকেত চট্টোপাধ্যায়কে, যিনি ঘোষিতভাবেই বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বিরোধী৷ ‘‌হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী’ নামে রূপকথার মোড়কে বানানো এই ছবির বিষয়ও আদ্যন্ত রাজনৈতিক৷ মন্ত্রী গবুচন্দ্র–কে দেখানো হয়েছে গুর্জর প্রদেশ, অর্থাৎ আজকের গুজরাট থেকে আসা এক দুরাচারী ক্ষমতালোভী হিসেবে৷ তার আছে এক ‘‌কমলা বাহিনী’, যারা বোম্বাগড়ের রাজা হবুচন্দ্রের প্রজাদের জীবন অত্যাচারে অনাচারে দুর্বিষহ করে তোলে৷ এই বাহিনীর মুখে বসানো হয়েছে গান, যার কথা হলো, ‘‌ঝড়, ঝড়, আমরা কমলা রংয়ের ঝড় / আমরা আসছি মানেই করছে সবকিছু নড়বড় /‌ঝড়, ঝড়, আমরা কমলা রংয়ের ঝড়৷’

পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায় এবং ছবির সুরকার কবীর সুমন মিলে এই গানের কথা লিখেছিলেন, যার মধ্যে স্পষ্টতই হিটলারের ‘‌ব্রাউন শার্টস’, বা বিজেপির তথাকথিত গেরুয়া বাহিনীর ইঙ্গিত আছে৷ ভারতের ফিল্ম সার্টিফিকেশন বোর্ডের কাছে ছবিটি ‘‌ইউ’, অর্থাৎ সর্বজনের দেখার উপযুক্ত হিসেবে ছাড়পত্র পেয়ে যায় এই গানটি সমেতই৷ পরিচালকের অভিযোগ, প্রযোজক দেব হঠাৎই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, গানটি থেকে ‘‌কমলা রঙের ঝড়'‌ শব্দগুলি সরিয়ে দেওয়ার৷ তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ এবং মমতা ব্যানার্জির অন্যতম তারকা প্রচারক হওয়া সত্বেও সম্প্রতি হলদিয়ায় প্রধানমন্ত্রী মোদীর একটি সভায় যিনি ডাক পাওয়ার পর রাজনৈতিক জল্পনা শুরু হয়েছে৷ দেব যদিও জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি ওই সভায় যেতে পারছেন না৷

ওই ধরনের বিতর্কে আমি পড়তে যাব না: অনিকেত চট্টোপাধ্যায়

কিন্তু এই গানটির কথা বদলানো নিয়েও প্রযোজক হিসেবে দেব কিছু প্রকাশ্যে জানাচ্ছেন না৷ হোয়াটসঅ্যাপ করা হয়েছিল তাকে, নির্দিষ্টভাবে জানতে চেয়ে যে, কোনো দলের প্রতি পক্ষপাতিত্বের বশে, বা রাজনৈতিক চাপে পড়েই কি গানের কথা বদলালেন তিনি?‌ তারকা সাংসদ উত্তর দেননি৷ তবে জনান্তিকে তিনি নাকি বলেছেন, ‘‌কমলা রঙের ঝড়’ বদলে দেওয়ার সঙ্গে বিজেপির কোনো সম্বন্ধ নেই৷ জানিয়েছেন বিশিষ্ট চিত্র সমালোচক অনিরুদ্ধ ধর৷ তার ব্যক্তিগত মত, ছবিটিকে বাড়তি প্রচার পাইয়ে দিতেই অযথা বিতর্ক খুঁচিয়ে তোলা হচ্ছে, যেমনটা আজকাল চল হয়েছে৷ তার কথায়, ‘‌‘‌এটা ওই ছবিটির একটা সস্তা প্রচার ছাড়া কিছু মনে হচ্ছে না৷’’ উদাহরণ হিসেবে কিছুদিন আগে আরেকটি ছবির প্রচার কৌশলের কথা মনে করিয়েছেন অনিরুদ্ধবাবু, যেখানে অভিনেত্রী নুসরৎ জাহান তার রিলিজের অপেক্ষায় থাকা ছবির নায়ক যশ দাশগুপ্তের সঙ্গে উদ্দাম প্রেম এবং বিবাহিত স্বামী নিখিল জৈন–এর সঙ্গে প্রায় বিচ্ছেদের বিতর্ক নিজেই ছড়িয়েছিলেন৷ অনিরুদ্ধ ধরের আক্ষেপ, ‘‌‘‌সিনেমার প্রচার এখন এই পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে এখন, যেখানে রাজনৈতিক যোগাযোগ থাকা খুব কঠিন৷’’

সিনেমার প্রচার এখন এই পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে: অনিরুদ্ধ ধর

পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায় অবশ্য প্রচার পেতে বিতর্ক তৈরির এই সন্দেহ একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন৷ তার যুক্তি, ছবিতে শব্দ সংযোজনের অনেক কাজ এখনো বাকি৷ পারিপার্শ্বিক শব্দ থেকে নেপথ্য সঙ্গীত, কোনও কাজই হয়নি৷ ফলে এখনই সেটি নিয়ে প্রচার শুরুর সন্দেহ অমূলক৷ অনিকেতের বক্তব্য, ‘‌‘‌রিলিজ এবং রিলিজের বিতর্কের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই৷ এবং ওই ধরনের বিতর্কে আমি পড়তে যাবো না৷ ওটা আমার কাজ নয়৷ আমি বিতর্ক তৈরি করে মানুষের কাছে নিয়ে যাব!‌ আই অ্যাম সরি৷ ওরকম যদি কোনো প্ল্যান থাকতো, আমি সেটাকেও রিজেক্ট করতাম৷’’

আর কমলা ঝড় নিয়ে প্রযোজকের আপত্তি প্রসঙ্গে পরিচালকের একটাই বক্তব্য৷ ‘‌হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী’' আগাগোড়া রাজনৈতিক ছবি৷ তার অসংখ্য রাজনৈতিক অনুষঙ্গ আছে, যা মানুষ বুঝতে পারবেন৷ কাজেই হঠাৎ একটা গানের কিছু শব্দ বদলে দিলে সেই রাজনৈতিক বার্তার কোনো হেরফের হবে না৷