গার্জভাইলারের উন্মুক্ত কয়লা খনি
জার্মানিতে জ্বালানি কোম্পানিগুলোর আগ্রাসনের কারণে রাইনের নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের বাড়ি ছাড়তে হয়েছে৷ গত বছর সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ের ফলে পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে বটে৷ তবে অনেকেই মনে করেন এটা ‘যথেষ্ট নয়’৷
অধিকার রক্ষায় সক্রিয় সুপ্রিম কোর্ট
গার্জভাইলারের লিগনাইট খনি নিয়ে মামলা চলেছিল কয়েক বছল ধরে৷ গত বছর জার্মানির কার্লসরুয়েতে অবস্থিত সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে, কয়লা খনিতে কাজ করার ফলে ক্ষতিগ্রস্তরা অবশ্যই অভিযোগ দাখিলের সুযোগ পাবেন এবং তাঁদের সঙ্গে আগেভাগেই পুর্নবাসনের ফয়সালা চূড়ান্ত করতে হবে৷ আদালত অবশ্য একইসঙ্গে কয়লা খনির কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ারও অনুমতি দিয়েছে৷
যেভাবে সংগ্রহ করা হয় কয়লা
রাইন অঞ্চলে একটু মাটি খুড়লেই পাওয়া যায় লিগনাইট বা ব্রাউন কয়লা৷ উদ্ভিদ অঙ্গারে পরিণত হওয়ার আগের অবস্থাকে বলা হয় ‘লিগনাইট’৷ এই নরম, বাদামি, কালচে রঙের কয়লা এক ধরনের বিশালাকৃতির খননযন্ত্র ব্যবহার সংগ্রহ করা হয়৷ বিশেষ বেল্ট ব্যবহার করে কয়লার বড় বড় টুকরাগুলো একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে রাখা গুদামে নিয়ে যাওয়া হয়৷ তারপর সেগুলো পুড়িয়ে তৈরি হয় বিদ্যুৎ৷
শ্রমিকের বদলে যন্ত্র
জার্মানির এই কয়লা খনিতে শ্রমিকের সংখ্যা কম৷ কয়লা তোলার মূল কাজটা করে এ রকম বিশাল আকারের যন্ত্রগুলো৷ আর সেগুলো চালাতে প্রয়োজন হয় মাত্র অল্প কয়েকজন কর্মীর৷
পরিবেশ হত্যাকারী
গার্জভাইলার খনির পরিধি ১১৪ বর্গ কিলোমিটার৷ ফ্রিমার্সডর্ফ পাওয়ার প্লান্টের সঙ্গে অবস্থিত খনিটি ইউরোপের দশটি ‘পরিবেশ হত্যাকারী’, মানে ভীষণমাত্রায় পরিবেশ দূষণকারী খনির একটি৷ লিগনাইট কয়লা অন্য যে কোনো জ্বালানি উৎসের চেয়ে বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন করে৷ এরপরও অবশ্য জার্মানির একটি বড় অংশ এ ধরনের কয়লার উপর নির্ভরশীল৷
নিষ্ফল প্রতিবাদ
উন্মুক্ত এই কয়লাখনি এমন একটি জায়গায় প্রতিষ্ঠা হয়েছে, যেখানে একসময় জনবসতি ছিল৷ তাই শুরুর দিকে এ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে অনেক৷ ‘ফ্রেন্ডস অফ দ্য আর্থ’ নামের পরিবেশ বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার (সংক্ষেপে ‘বুন্ড’) শাখা রয়েছে জার্মানিতেও৷ তাদের তৈরি একটি তাঁবুর ছবি এটি৷ জার্মানিতে এভাবে প্রতিবাদ জানানোর পরও কোনো কাজ হয়নি৷
ভুতুড়ে শহর
কয়লা খনির আগ্রাসনের শিকার যে গ্রামগুলো, সেগুলো ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়৷ এরকেলেঞ্জ শহরের প্রত্যন্ত জেলা বোর্শেমিখের কথাই ধরুন৷ যাঁরা এখানে থেকে যেতে চান, তাঁদের ওপর মানসিক চাপ বাড়তে থাকে৷ ফলে একসময় সবই চলে যান নিজের আবাস ছেড়ে৷ তাঁদের জন্য বিকল্প বাড়ির ব্যবস্থা করা হয় ঠিকই, কিন্তু নিজের ঘর ছাড়ার ব্যথা তাতে কি কমে?
সবুজ চারণভূমি?
ইমেরাথ গ্রামটি গড়ে উঠেছিল সেই ১২ শতকে৷ কিন্তু ৮২৬তম জন্মদিনে এসে গ্রামটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়৷ সেখানকার ৪০০ বাসিন্দাকে সরিয়ে আনা হয় ‘নিউ ইমেরাথে’৷ ছবিটি সেখানকারই সবুজ চারণভূমির৷
নির্যাতিত ল্যান্ডস্কেপ
বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর কয়লা উত্তোলনের এই আকাঙ্খা শুধু মানুষকেই তাঁদের নিজ বাসভূমি থেকে সরিয়ে দিচ্ছে না, তাদের অধিগ্রহণকৃত এলাকাতে অন্য কোনো জীবও টিকতে পারছে না৷ জার্মানির নর্থ রাইন ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের অন্যতম বড় জঙ্গলটি একসময় এখানে ছিল৷ অথচ আজ এই দৃশ্য৷ এখানে আবারো বনায়ন করা হবে, জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷ কিন্তু তাতে যে লেগে যাবে কয়েক দশক৷
এনার্জি জায়ান্ট
জানা গেছে, ২০২২ সাল নাগাদ পারামাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সরে আসবে জার্মানি৷ আর তারপর ২০৫০ সাল নাগাদ দেশটির ৮০ শতাংশ বিদ্যুতের উৎস হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি৷ তবে বর্তমানের প্রচলিত জ্বালানি উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর কার্যক্রম সে’সময় পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে৷