গুহামানবদের গুহার নকল
১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সের ভিজেয়ার উপত্যকা৷ এখানে লুকিয়ে রয়েছে লাসকো গুহার মতো একটি প্রাগৈতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন৷ সাবেক গুহাটি থেকে প্রায় ৮০০ মিটার দূরে লাসকোর গুহামানবদের আঁকা দেয়ালচিত্রের হুবহু নকল করে গুহা অঙ্কণশৈলীর নতুন আন্তর্জাতিক কেন্দ্রটিতে রাখা হয়েছে৷ এটি হলো লাসকো’র গুহার দ্বিতীয় অনুকরণ৷ ভিতরটা ঠান্ডা ও ভেজা; আওয়াজ কীরকম ফাঁকা শোনায়৷
‘ফাক্সিমিইয়ে দু পেরিগর’-এর আর্টিস্টিক ডিরেক্টর ফ্রান্সিস রিঙেনবাখ জানালেন, ‘‘এখানকার নির্মাণকার্যের জন্য আমরা লেজার মডেল ও ভিডিও প্রোজেকশনের মতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পেরেছি৷ আমরা সমগ্র গুহাটির মডেল বানিয়েছি, যা কিনা লাসকো দুই মডেলের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ৷ আমরা এমন সব অংশ নতুন করে তৈরি করেছি, যেগুলো আগে শুধু আন্দাজ করা যেত৷’’
ইস্পাতের উপর অ্যাক্রিলিক রেজিন লেপে তৈরি নকল পাথরের দেয়ালে সাবেক লাসকো গুহার দেয়ালচিত্রগুলি নিখুঁতভাবে এঁকেছেন ৩০ জন শিল্পী, তিন বছর ধরে কাজ করে৷ শিল্পীরা গুহামানবদের অঙ্কণপদ্ধতির হুবহু অনুকরণ করেছেন৷ ফ্রান্সিস রিঙেনবাখ বললেন, ‘‘এই কাজটা ছিল পুরোপুরি আবেগ৷ প্রতিবার আঁকার সময় আমাদের বোঝার চেষ্টা করতে হয়েছে, সাবেক শিল্পী কেন ওভাবে এঁকেছিলেন এবং কিভাবে এঁকেছিলেন৷ এমন সব মুহূর্ত এসেছে, যখন আমাদের গোটা দলটা কোনো একটা খুঁটিনাটি নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে, যদিও অন্য কারো কাছে সেই খুঁটিনাটি পুরোপুরি অকিঞ্চিৎকর মনে হতে পারত৷’’
লাসকো গুহা
বিশেষ করে লাসকো গুহার মডেল তৈরি করা হলো কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে প্রত্নতত্ত্ববিদ জঁ-পিয়ের শাদেল বললেন, ‘‘লাসকো গুহা সত্যিই অসাধারণ৷ ঐ অপেক্ষাকৃত ছোট্ট গুহাটিতে আমরা অবিশ্বাস্য রকম বেশি আঁকা আর খোদাই করা ছবি খুঁজে পেয়েছি, যেগুলো প্রায় অন্য সব গুহা অঙ্কণের চেয়ে ভালো অবস্থায় আছে৷ লাসকো থেকে আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের গুহা অঙ্কণ পদ্ধতি সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি, যা বিশ্বের অন্যন্য গুহামানবদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, কেননা সে সময় তো আর কোনো সীমান্ত ছিল না৷’’
শত শত আঁকা ও খোদাই করা জীবজন্তুর ছবি পাওয়া গিয়েছে লাসকোয়৷ ছবিগুলো থেকে প্রায় ৬০০ জীবজন্তুকে ইতিমধ্যেই শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে, যেমন ষাঁড় কিংবা ঘোড়া কিংবা হরিণ৷ লাসকোর ছবিগুলোর বয়স আনুমানিক ১৯ হাজার বছর৷ জঁ-পিয়ের শাদেল বললেন, ‘‘লাসকো গুহার ছবিগুলো দেখলে বোঝা যায় যে, এই গুহামানবরা শুধু শিকার করে আর ফলমূল কুড়িয়ে বাঁচতেন না, তারা শিল্পীও ছিলেন৷ তাঁদের প্রতিভা ছিল, রুচি ছিল৷ তাঁদের সামর্থ্য ছিল কম, এমনকি রং ছিল মাত্র তিনটি: হলুদ, লাল আর কালো৷’’
কিছু কিছু গবেষক গুহামানবদের ছবিগুলোকে গ্রহতারকার প্রতীক বলে মনে করেন৷ গত ৬০ বছর ধরে সাবেক লাসকো গুহাটি দর্শকদের জন্য বন্ধ আছে৷ শ্যাওলা পড়েছিল আর ছবিগুলোর রং উঠে যাচ্ছিল বলে গুহাটিকে বন্ধ রাখা হয়েছে৷ ‘লাসকো দুই’ নামের প্রথম মডেলটিও ইতিমধ্যেই সারাতে হয়েছে৷
নতুন মিউজিয়ামটি শুধু লাসকো গুহার একটি কপি বা অনুরূপ নয়৷ এখানে লাসকোর ইতিহাসও ডিজিটাল পদ্ধতিতে অভিজ্ঞতা করা যায় – যেমন কিভাবে চার কিশোর লাসকো গুহাটি আবিষ্কার করে৷ ১৯৪০ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর তারা তাদের কুকুরকে নিয়ে হেঁটে জঙ্গলে ঢুকেছিল, গুপ্তধন খুঁজে পাওয়ার আশায়৷ তার ৭০ বছর পরেও লাসকোর সব রহস্য ভেদ করা সম্ভব হয়নি৷
সেই লাসকো গুহা আজ আধুনিক শিল্পকলারও প্রেরণা৷
প্রতিবেদন: লিসা লুই/এসি
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী