গুয়ানতানামোর দুই উইগুরকে আশ্রয়ে সুইস সিদ্ধান্তে চীনের অসন্তোষ
৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র স্পষ্টত এই কথাই জানিয়ে দিয়েছেন এক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে৷
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মা ঝাওজু বলেই দিয়েছেন চীনের সঙ্গে করমুক্ত বাণিজ্য নিয়ে যে আলোচনা চলছে, সুইজারল্যান্ডের এই সিদ্ধান্ত ঐ আলোচনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে৷
কিউবার গুয়ান্তানামো মার্কিন বন্দি শিবির বন্ধ করে দেবার সিদ্ধান্তের পর এই কারাগারের নির্দোষ প্রমাণিত বন্দিদের গ্রহণ করার আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র৷ এই আহ্বানে সাড়া দেয় বিভিন্ন দেশ৷ এরই অংশ হিসাবে সুইজারল্যান্ড দুই উইগুর ভাইকে গ্রহণ করার সিদ্ধান্তের কথা জানায় বুধবার৷ সুইজারল্যান্ড বলেছে, এই দুই জন তাদের নিরাপত্তার জন্য কোন ঝুঁকি সৃষ্টি করবে না এবং তাদেরকে গ্রহণ করাটা একটি মানবিক দায়িত্ব৷
চীনা মুখপাত্র মা ঝাওজু জানিয়েছেন, চীন কর্তৃপক্ষ সুইসদের এই সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করছে৷ তিনি বলেন, বেইজিং এ নিযুক্ত সুইস রাষ্ট্রদূত তাঁদের সরকারের সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করতে বৃহস্পতিবারই চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলেন৷ অবশ্য রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠনো হয়নি, তিনি স্ব-উদ্যোগেই সেখানে যান, দাবি ঐ চীনা সরকারি মুখপাত্রের৷
আরকিন মাহমুদ এবং বাতিয়ার মাহমুদ নামের চীনা উইগুর সম্প্রদায়ের দুই ভাইকে মার্কিন সেনারা আটক করে আফগানিস্তান থেকে৷ এ দুইজনই জাতিসংঘ কর্তৃক নিষিদ্ধ ইস্ট তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্টের সদস্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে৷ ২০০২ সালে এদেরকে আটক করা হয়৷ নির্বাসিত চীনা উইগুরদের সংগঠন উইগুর অ্যামেরিকান এসোসিয়েশনের বক্তব্য অনুসারে চীনে দমন পীড়নের শিকার হয়ে ছোটভাই বাতিয়ার মাহমুদ চীনে ঝিনজিয়ান প্রদেশ থেকে পাড়ি জমান আফগানিস্তানে৷ এরপর ছোটভাইকে দেখতে সেখানে গিয়েছিলেন আরকিন মাহমুদ৷ সেখানেই দুই ভাইকে আটক করে মার্কিন বাহিনী৷
গুয়ান্তানামো বন্দি শিবিরে থাকার সময়ই মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন বড় ভাই আরকিন মাহমুদ৷ গুয়ান্তানামো থেকে দুইজনকে পৃথক পৃথক দেশে পাঠিয়ে দেবার কথা প্রথমে ভাবা হয়েছিল৷ কিন্তু কনিষ্ঠ ভ্রাতা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তিনি তার অসুস্থ ভাইকে একা রেখে কোথাও যাবেন না৷ ফলে বাধ্য হয়ে মার্কিন কর্তৃপক্ষ তাদেরকে একই দেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়৷ প্রথমে পালাউকে গ্রহণ করার অনুরোধ করা হলে, তারা এই দুই সহোদরকে নিতে অপারগতার কথা জানিয়েছিল৷ পরে সুইজারল্যান্ড তাদেরকে গ্রহণ করতে রাজি হয়৷ বর্তমানে গুয়ান্তানামো বন্দি শিবিরে পাঁচ উইগুর সদস্য রয়েছে৷ এরআগে বারমুডায় পাঠানো হয়েছে চারজনকে৷ আর গত বছর পালাউ নিয়েছে ছয় উইগুর বন্দিকে৷ অবশ্য চীন দাবি করছে, গুয়ানতানামোর বন্দি উইগুরদের স্বদেশে তাদের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হোক৷ চীন বন্দি উইগুরদের সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী হিসেবে দেখছে এবং চীনে ফিরে গেলে চীনা আইনে তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে৷
প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক