বায়ার্নকে চিনলেন গুয়ার্দিওলা
১১ এপ্রিল ২০১৪স্পেন এক ব্যাপার আর জার্মানি, না, জার্মানি না বলে বাভারিয়া বলাই ভালো! – সেই বাভারিয়ার ফুটবল ফ্যানদের মনস্তত্ত্ব আরেক ব্যাপার৷ ট্রিপল জিতেও যেন এদের মন ভরে না৷ আবার এক বছর জিতলেই পরের বছর যে পুনরায় ট্রিপল জিততে হবে, এটাই যেন স্বাভাবিক ব্যাপার৷ তার মধ্যে কোচ বদলে ইয়ুপ হাইনকেস থেকে পেপ গুয়ার্দিওলা হয়ে গেলেই বা কি হয়েছে, বায়ার্ন তো বায়ার্নই থাকছে৷
বায়ার্ন দল অবশ্য বর্তমানে যেখানে, সেখানে তাদের কাছ থেকে আকাশের চাঁদ পেড়ে আনতে বললে যে তারা আকাশের চাঁদ পেড়ে আনবে, এমন প্রত্যাশা করায় দোষ নেই৷ বলতে কি, ইউরোপে দলগত ফুটবলের পরাকাষ্ঠা এখন জার্মান ফুটবল, যেখানে বুন্ডেসলিগায় পয়েন্টের তালিকায় দ্বিতীয় ডর্টমুন্ড – অন্তত নিজেদের মাঠে - রেয়াল মাদ্রিদকে খাবি খাওয়াতে সক্ষম৷ সেই জার্মান ফুটবলের তুঙ্গে আবার বায়ার্ন মিউনিখ, যাদের ক্লাব প্রেসিডেন্ট কর ফাঁকি দিয়ে জেলে গেলেও দৃশ্যত খেলোয়াড়দের মনোবলে আঁচড় লাগে না৷
আসলে বায়ার্ন একটা রসায়ন: এক দঙ্গল প্রকৃতিগতভাবে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধাতের প্লেয়ার যে মাঠে নামলে কিভাবে লাল-কালো পিঁপড়েদের সংহতি নিয়ে খেলে যেতে পারে, বায়ার্ন তারই নমুনা৷ এই ফিটনেস, এই লড়ে যাওয়ার ক্ষমতা এবং এই ডিসিপ্লিন হয়ত একটি গভীরভাবে জার্মান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, যার সঙ্গে আবার বাভারিয়া যুক্ত হলে তো সোনায় সোহাগা হয়! নয়ত বায়ার্নে আজ বাস্তবিক এমন কোনো প্লেয়ার নেই, যাকে মেসি-রোনাল্ডো-নেইমারের পর্যায়ে ফেলা চলে৷
তবে বৈশিষ্ট্য তো শুধু বায়ার্নের একারই নয়, গুয়ার্দিওলা সেটা ভালো করেই জানেন৷ সেমিফাইনালে বাকি যে তিনটি দল উঠেছে, তাদের সম্পর্কে পেপের মন্তব্য: ‘‘সব ক'টি দলের কোনো না কোনো বিশেষত্ব আছে৷ রেয়ালের আছে অসাধারণ সব একক খেলোয়াড়৷ অ্যাটলেটিকোর আছে প্যাশন বা আবেগ৷ চেলসির কোচের আছে অনন্ত অভিজ্ঞতা৷'' বায়ার্নের যে কী আছে, সেটা আর নিজের মুখে বলতে চাননি গুয়ার্দিওলা৷
তবে বায়ার্নে আসার আগেই যে কোচ জার্মান শিখতে শুরু করেছিলেন – নিউ ইয়র্কে বসে! – সেই কোচই আবার এখন দেখছেন যে, বাভারিয়ানদের ভাষাটা যেমন ‘হাই জার্মান' থেকে কিছুটা আলাদা, সেরকম তাদের মনোভাবও কিছুটা আলাদা৷ যেমন বুধবারের খেলার শেষ আধঘণ্টা ফ্যানদের গরম হতে দেখা গিয়েছিল, গুয়ার্দিওলা যে বিষয়ে মন্তব্য পর্যন্ত করেছেন: ‘‘এ ক্লাবের পক্ষে কোনো কিছুই যথেষ্ট নয়৷ হয়ত আমাদের আরো ভালো খেলতে হবে৷ প্যাট্রিস এভরা (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড-এর হয়ে) গোল দেবার পরেই দর্শকরা উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন৷ ওরা সেমিফাইনালেও তা করবেন বলে আমি আশা করব, কেননা আমাদের পাবলিকের সাপোর্ট দরকার৷ সকলের একত্র হওয়া চাই৷ ফ্যানদের ছাড়া আমরা ফাইনালে যেতে পারব না, আমরা এ কাজ একা করতে পারব না৷ আমাদের প্রয়োজন এই ফ্যানদের এবং তাঁরা যে আমাদের সাহায্য করবে, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত৷''
অর্থাৎ শুধু বায়ার্নের প্লেয়ারদেরই নয়, বায়ার্নের ফ্যানদেরও মানুষ করার ভার নিচ্ছেন পেপ গুয়ার্দিওলা৷ তাহলে আর চিন্তা কোথায়?
এসি/ডিজি (ডিপিএ, রয়টার্স)