সূর্যাস্তের ছটা
৯ এপ্রিল ২০১৩ইয়ুপ হাইনকেস'এর সঙ্গে বায়ার্নের সম্পর্ক বহুদিনের, যেমন বায়ার্নের সঙ্গে ইয়ুপ হাইনকেসের সম্পর্ক বহুদিনের৷ ১৯৭১'এ বায়ার্ন যখন বুন্ডেসলিগা খেতাব জেতে, তখন ফ্রাংকফুর্টের বিরুদ্ধে বায়ার্নের শেষ দুটি গোল করেছিলেন এই হাইনকেস, প্লেয়ার হিসেবে৷ এরপর ১৯৮৯ এবং ১৯৯০ সালে বায়ার্ন বুন্ডেসলিগা খেতাব জিতেছে হাইনকেসের তাঁবে, কোচ হিসেবে৷ ১৯৯১ সালে হাইনকেস'কে বিদায় দেওয়াটা ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় ভুল, বায়ার্ন প্রেসিডেন্ট উলি হ্যোনেস এবার স্বীকার করেছেন৷
যেমন ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমান এবং লুইস ফান খাল'এর পর হাইনকেস ফিরিয়ে আনাটা ছিল হ্যোনেসের সেরা সিদ্ধান্ত – যদিও সে'কথা তিনি নিজে বলেননি৷ সে'কথা বলছে জার্মানির প্রেস ও মিডিয়া, ফুটবল ফ্যান ও ফুটবল বিশারদরা৷ গতবছরই তো বায়ার্নকে লিগ এবং কাপে ডর্টমুন্ডের কাছে দ্বিতীয় হতে হয়৷ তারপর আবার বায়ার্ন চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে চেলসি'র কাছে অপ্রত্যাশিতভাবে হারে পেনাল্টি শুটআউটে – তাও আবার নিজেদের স্টেডিয়ামে, মিউনিখের আলিয়ানৎস আরেনায়৷
অপরূপ রূপান্তর
দান্তে'র মতো ডিফেন্ডার এবং মিডফিল্ডার হাভি মার্তিনেস'এর মতো নতুন খেলোয়াড় এনে বায়ার্ন এ মরশুমে এক অন্য রূপ ধারণ করেছে৷ ভেঙেছে রেকর্ডের পর রেকর্ড৷ শেষমেষ ২০ পয়েন্টের ফারাক নিয়ে মরশুম শেষ হবার ছ'সপ্তাহ আগেই খেতাবটা পকেটে পুরেছে৷ সাধে কি হাইনকেস বলেছেন, তিনি খেতাব জিতেছেন অনেকবার, কিন্তু এমন ঠাণ্ডার মধ্যে, অর্থাৎ শীত না কাটতে কোনোদিন জেতেননি৷
হাইনকেসের কোচিং স্টাইলটা যে ঠিক কী, তা বাইরে থেকে কারোর পক্ষে বলা সম্ভব নয়৷ বায়ার্নের প্লেয়াররা হয়তো জানতে পারে৷ কিন্তু রিবেরি-রবেনের মতো নামী-দামী, বহুমূল্য প্লেয়ারদের খুশি রাখার একটা সহজাত ক্ষমতা আছে এই ৬৮ বছর বয়সি শুভ্রকেশ প্রবীণের৷ অপরদিকে বায়ার্নের নতুন স্পোর্টস ডাইরেক্টর মাটিয়াস সামার সমালোচনা করলেও মাথা ঠাণ্ডা রেখে তা প্রত্যাখ্যান করার ক্ষমতা রাখেন এই হাইনকেস৷ এমনকি যেভাবে বায়ার্নের কোচ হিসেবে তাঁর জায়গায় বার্সেলোনার সাবেক কোচ পেপ গুয়ার্দিওলাকে আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে, তা'তে যে তিনি সুখী নন, তা'ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন হাইনকেস৷
বনাম নয়, স্বনামে এবং স্বমহিমায়
বায়ার্ন কেন হাইনকেসের পরিবর্তে গুয়ার্দিওলাকে আনছে, সে প্রশ্নের উত্তরটা খুবই সোজা৷ বার্সেলোনায় থাকাকালীন গুয়ার্দিওলা প্রমাণ করেছেন, তাঁকে অনায়াসে বিশ্বের সেরা কোচদের মধ্যে ফেলা চলে৷ বয়সেও গুয়ার্দিওলা হাইনকেসের চেয়ে সমবয়সী৷ তার ওপর গুয়ার্দিওলা স্বয়ং দৃশ্যত ইংল্যান্ডের পরিবর্তে জার্মানিতে, এমনকি বায়ার্নে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন - বা আভাস দিয়েছিলেন৷
পেপ'কে আনা মানে জার্মান জাতীয় একাদশের কোচ ইওয়াখিম ল্যোভ স্বয়ং যে স্প্যানিশ ফুটবলের ভক্ত, সেই ফুটবল শৈলীকে ঘরে আনা৷ পেপ'এর মিউনিখে আসাটা যেন মধ্যযুগের কোনো রাজবংশীয় সংযোগ, যার মাধ্যমে স্পেনীয় সূক্ষ্মতা ও জার্মান দক্ষতা একই বৈবাহিক সূত্রে বাঁধা পড়তে পারে৷
এসি / এসবি (ডিপিএ, এপি, রয়টার্স)