1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গোয়ায় ভোঁদড় সংরক্ষণে উদ্যোগ

৯ অক্টোবর ২০১৯

ভারতের মতো দেশে জনসংখ্যার চাপে অনেক প্রাণীর অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে উঠছে৷ এরই মাঝে গোয়া রাজ্যে ভোঁদড় সংরক্ষণের এক উদ্যোগের সুফল পাওয়া যাচ্ছে৷ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোরও চেষ্টা চালাচ্ছে সেই সংগঠন৷

https://p.dw.com/p/3Qv89
Global Ideas Indischer Fischotter
ছবি: Imago Images/Nature Picture Library/R. Williams

লোকচক্ষুর অন্তরালে

গোয়ার উত্তরে মাণ্ডবী নদীর উপর প্রায় নির্জন শোরা দ্বীপ ঘন ম্যানগ্রোভ অরণ্যে ঢাকা৷ এক বিরল প্রজাতির প্রাণী সেখানে বাসা বেঁধেছে৷ সেখানে লাজুক প্রকৃতির ‘স্মুথ কোটেড অটার' প্রজাতির ভোঁদড়ের বসবাস৷ ওয়াইল্ড অটার্স রিসার্চ সংগঠনের প্রধান ড. ক্যাটরিনা ফার্নান্ডেজ বলেন, ‘‘বছরখানেকের একটু বেশি সময় ধরে আমি গোয়ায় কাজ করছি৷ এই সময়ে হয়তো ১২ বার ভোঁদড় দেখেছি৷ ফলে বুঝতেই পারছেন, এখানে ভোঁদড় দেখা কত কঠিন৷''

ভোঁদড় সংরক্ষণের লক্ষ্যে ২০১৪ সালে শোরাও দ্বীপে ‘ওয়াইল্ড অটার রিসার্চ' নামের সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়৷ মাঝারি মাপের এই স্তন্যপায়ী প্রাণী গোয়ার বেশিরভাগ নদীনালা ও উপকূলবর্তী এলাকায় বসবাস করে৷

৬ মাস ধরে এই সংগঠন শোরাও দ্বীপে ৬ থেকে ৭টি ভোঁদড় গোষ্ঠী বা পরিবারের উপর নজর রাখছে৷ প্রত্যেক পরিবারের সদস্যসংখ্যা সম্ভবত ৩ থেকে ৮৷ অন্যান্য অঞ্চলে এমন গোষ্ঠীর মধ্যে এর দ্বিগুণ বা তিন গুণ সদস্য দেখা যায়৷

গবেষণার কঠিন কাজ

প্রকৃতির কোলে লাজুক প্রকৃতির এই প্রজাতির উপর নজর রাখা কঠিন কাজ৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বন্দি ভোঁদড়দের আচরণ পর্যবেক্ষণ করা হয়৷ সেই ঘাটতি পূরণ করতে ওয়াইল্ড অটার্স রিসার্চ ম্যানগ্রোভ অঞ্চলের বন্য ও উর্বর পরিবেশে এই প্রাণীর বংশবৃদ্ধি সংক্রান্ত আচরণের উপর নজর রাখে৷ ড. ফার্নান্ডেজ বলেন, ‘‘২০১৭ সালের মে মাসে আমরা ভোঁদড়শাবক জন্মের প্রমাণ পেয়েছিলাম, যা ঐতিহাসিক তথ্যের সঙ্গে খাপ খায় না৷ এখন প্রশ্ন হলো, অত্যন্ত উর্বর এই পরিবেশে সারা বছর মাছের জোগানের কারণেই কি এমনটা ঘটে? সেকারণেই কি বছরের এই সময় তারা সন্তান ধারণ করে?''

ভোঁদড়দের বাসস্থানের চিহ্নের খোঁজ করে সংগঠনের কর্মীদের দিনের কাজ শুরু হয়৷ ওয়াইল্ড অটার্স রিসার্চ সংগঠনের ডিরেক্টর ক্ষীতিজ গর্গ বলেন, ‘‘এগুলি পায়ের ছাপ হতে পারে৷ এটা তাদের মলত্যাগের জায়গা বা বাসা হতে পারে৷ সার্ভে শিটে তা লিখে রাখা যায়৷ বিশ্লেষণের জন্য কোনো নমুনা পেলে সেগুলি ফিল্ড বেসে নিয়ে যাওয়া যায়৷''

ভোঁদড় রক্ষার লড়াই

ঘটনাস্থলে সমীক্ষা চালানো, ক্যামেরার ফাঁদ পাতা ছাড়াও তথ্য সংগ্রহের আরেকটি বড় সূত্র রয়েছে৷ ড. ক্যাটরিনা ফার্নান্ডেজ বলেন, ‘‘কোনো এলাকায় ভোঁদড়ের কতগুলি বাসা রয়েছে, বাসাগুলির মধ্যে তাদের যাতায়াতের প্রবণতা সম্পর্কে আমরা জানার চেষ্টা করছি৷''

সার্বিক সচেতনতার উদ্যোগ

ওয়াইল্ড অটার্স সংগঠন বড় প্রজাতির প্রাণীকে প্রতীক হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে৷ ইকোসিস্টেমে ভারসাম্যের ক্ষেত্রে ভোঁদড়ের মতো ছোট প্রাণীর গুরুত্ব সম্পর্কেও সচেতনতা বাড়াতে চায় তারা৷ ড. ফার্নান্ডেজ এর সঙ্গে একটি উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, ‘‘শোরাও দ্বীপে এমন কিছু মাছ রয়েছে, বাণিজ্যিকভাবে যেগুলি পুকুরে চলে যায়৷ সেইসঙ্গে মাদাগাস্কার তেলাপিয়া নামের এক মাছ বাইরে থেকে আনা হয়েছে, কারণ, এই প্রজাতির মাছ মশার শূককীট খায়৷ তারপর এই মাছ ইকোসিস্টেম দখল করে সব স্থানীয় মাছ মেরে ফেলতে শুরু করে৷ তারপর ভোঁদড় এসে বহিরাগত এই মাছ খেতে শুরু করে৷''

এর ফলে মূল ইকোসিস্টেম এই ধাক্কা সামলে নিতে সক্ষম হলো৷ তবে ভিটে হারানো, পানির দূষণ, মানুষ ও প্রাণীর সংঘাত এবং চামড়া ও শরীরের অংশ নিয়ে ব্যবসার কারণে এই প্রজাতির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে৷ প্রকৃতি সংরক্ষণের আন্তর্জাতিক ইউনিয়নের লাল তালিকায় এই ভোঁদড় স্থান পেয়েছে৷

এনজিও হিসেবে ওয়াইল্ড অটার্স সংগঠন ইতোমধ্যেই শিক্ষানবিশি, কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে ৫০০-রও বেশি মানুষকে সংরক্ষণের শিক্ষা দিয়েছে৷ তিন দিনের কর্মশালার জন্য ৭৫ থেকে ১২০ ইউরো ব্যয় হয়৷ শুধু বিজ্ঞানী নয়, বিশ্বের অনেক প্রান্তের মানুষ শুধু ভোঁদড় সম্পর্কে আগ্রহের কারণেই এমন কর্মশালায় যোগ দেন৷

হুমকি সত্ত্বেও আজ ছো্ট্ট শোরাও দ্বীপ এই প্রজাতির প্রাণীর পছন্দের আবাস হয়ে উঠেছে৷ তারা সেখানেই থেকে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷

স্বাতী আলী/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য