গ্যাসের বিকল্প উৎস হিসেবে আফ্রিকার দিকে জার্মানির নজর
২৩ মে ২০২২ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার পর থেকে জার্মানি তথা ইউরোপ জ্বালানির বিকল্প উৎসের খোঁজে নতুন করে ভাবনাচিন্তা করতে বাধ্য হচ্ছে৷ আরো দ্রুত গতিতে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা নিলেও আপাতত পরিস্থিতি সামাল দিতে পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে অর্থনীতির বিশাল ক্ষতির আশঙ্কা আছে৷ বিশেষ করে গ্যাস আমদানির ক্ষেত্রে রাশিয়ার উপর নির্ভরতা দূর করতে কাতারের উপর নির্ভর করছে জার্মানি৷ তবে আবার একটি দেশের উপর নির্ভর না করতে অন্যান্য উৎসেরও সন্ধান করছে সে দেশ৷
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস ইউক্রেন যুদ্ধের কোলা ছায়ার মধ্যে আফ্রিকার তিনটি দেশ সফর করছেন৷ রোববার তিনি সেনেগালের রাজধানী দাকার পৌঁছে বলেন, জার্মানি সেখানে প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন প্রকল্পে অংশ নিতে আগ্রহী৷ মাউরিতানিয়া সীমান্তের কাছে সেনেগাল উপকূলে বিশাল পরিমাণ গ্যাস জমা আছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷ ব্রিটিশ পেট্রোলিয়ামের নেতৃত্বে সেই সম্পদ বাজারজাত করার উদ্যোগ চলছে৷ তবে আগামী বছরের আগে গ্যাস উত্তোলন সম্ভব হবে না বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ জার্মানির চ্যান্সেলর হবার পর প্রথম আফ্রিকা সফরে শলৎস সেনেগাল ও দক্ষিণ আফ্রিকা যাচ্ছেন৷
শিল্পোন্নত দেশের গোষ্ঠী জি-সেভেনের বর্তমান সভাপতি হিসেবে জার্মানি আগামী জুন মাসের শেষে শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করছে৷ সেখানে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, আর্জেন্টিনার পাশাপাশি আফ্রিকার দেশ সেনেগাল ও দক্ষিণ আফ্রিকার শীর্ষ নেতাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷ উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির মতো কয়েকটি জি-সেভেন দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ‘ন্যায্য জ্বালানি রূপান্তর সহযোগিতা' চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যার আওতায় সে দেশ কয়লার ব্যবহার কমিয়ে বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারের উদ্যোগ বাড়াচ্ছে৷
আফ্রিকার দেশ মালিতে জাতিসংঘের ছত্রছায়ায় আন্তর্জাতিক সেনা অভিযানে জার্মানিও অংশ নিচ্ছে৷ তবে সে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির কারণে প্রাক্তন ঔপনিবেশিক শক্তি হিসেবে ফ্রান্স সৈন্য প্রত্যাহার করায় জার্মান সৈন্যদের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা দেখা দিচ্ছে৷ মালির ইইউ-প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাহিনী রুশ ভাড়াটে যোদ্ধাদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে৷ এমন পরিস্থিতিতে জার্মান সরকার তাদের প্রতিবেশী দেশ নাইজারে স্থানান্তরিত করতে চায়৷ চ্যান্সেলর শলৎসের সফর সেই প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করবে বলে মনে করা হচ্ছে৷ পশ্চিম আফ্রিকা থেকে ইউরোপে মানব পাচারের ক্ষেত্রে নাইজার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত৷ এমন প্রবণতা বন্ধ করতে সে দেশের সরকারের সহযোগিতা চাইছে ইইউ৷
চ্যান্সেলর হবার পর শলৎস তার বিদেশ সফরের গন্তব্য হিসেবে এখনো পর্যন্ত শুধু ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বেছে নিয়েছেন৷ ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্য সংকট এড়াতেও তাঁর সরকার উদ্যোগ নিতে চায়৷ সে কারণেও তাঁর আফ্রিকা সফর বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে৷ শলৎস বলেন, এমন সংকটের সময় জার্মানি মোটেই নির্বিকার থাকতে পারে না৷ তিনি ইউক্রেন থেকে আবার খাদ্য রপ্তানি শুরু করার উদ্যোগে সহায়তা করতে চান৷
এসবি/এসিবি (ডিপিএ, এপি)