1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গ্যোটিঙ্গেন: করোনা নিয়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির শহর!

১১ জুন ২০২০

মধ্য জার্মানির শহর গ্যোটিঙ্গেন মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের শহর হিসেবে পরিচিত৷ করোনা সংকটকে ঘিরে সেখানেই চলছে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি৷ কসোভো থেকে আসা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াচ্ছে ডানপন্থিরা৷ গণমাধ্যমের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ৷

https://p.dw.com/p/3dd8u
গ্যোটিঙ্গেনের ইদুনা হাউজিং কমপ্লেক্সছবি: DW/O. Pieper

ইদুনা হাউজিং কমপ্লেক্স : অহঙ্কার থেকে ঘৃণার লক্ষ্যবস্তু

করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসায় ম্যার্কেল সরকার যখন লকডাউনের কড়াকড়ি শিথিল করার সিদ্ধান্ত নেয় ঠিক তখনই নতুন করে সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করে লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের গ্যোটিঙ্গেনে৷ নগরকর্তৃপক্ষ বলছে, ইদুনা হাউজিং কমপ্লেক্সের এক ঈদ পুনর্মিলনী জমায়েত থেকেই নতুন করে শুরু হয় সংক্রমণ৷

জানা গেছে, জনা ত্রিশেক তরুণ-তরুণী এলাকার এক হুক্কা বারে পবিত্র রমজান মাস শেষের আনন্দে মেতেছিলেন৷ হুক্কাবারে এক পাইপে অনেকে ধুমপান করেন৷ সেদিন ওই তরুণ-তরুণীরাও তাই করেছিলেন এবং তাতেই বাধে বিপত্তি৷

একসময় ইদুনা হাউজিং কমপ্লেক্স ছিল স্থানীয়দের অহঙ্কার৷ এক ইনস্যুরেন্স কোম্পানির নামে সত্তরের দশকে গড়ে তোলা দৃষ্টিনন্দন আবাসিক এলাকাটির ছবি শোভা পেতো পোস্টকার্ডে৷ খুব কাছে সুইমিং পুল, শপিং কমপ্লেক্স আছে বলে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের নতুন ঠিকানা হয়ে যায় ইদুনা হাউজিং কমপ্লেক্স৷

সেই আবাসিক এলাকা এখন যেন গ্যোটিঙ্গেনের অভিশাপ৷ নগরবাসীদের একাংশের জোর দাবি- পুরো হাউজিংটাই কোয়ারান্টিন করা হোক৷

ইদুনার বাসিন্দা (পুরো নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) হাইকো জানালেন, রাস্তায় বেরোলে কিছু মানুষ এমন আচরণ করে যে বেরোতে ভয় করে তার, ‘‘রাস্তায় অনেকে আমাকে সন্দেহের চোখে দেখে, বাঁকা চোখে তাকায়, আমি পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে মাটিতে থুথু ফেলে!’’

হাইকোর এখন একটাই কামনা, ‘‘গ্যোটিঙ্গেনের বাকি অংশের মানুষেরা যেন আমাদের সঙ্গে এমন অন্যায় আচরণ বন্ধ করেন৷’’

সাংবাদিকদের তারা সবজি ছুঁড়ে মারেন

কসোভো সংকটের সময় সেখান থেকে অনেক মুসলিম পরিবার চলে এসেছিলেন জার্মানিতে৷ তখন ইদুনা হাউজিং কমপ্লেক্সে বেশ কিছু পরিবারের থাকার ব্যবস্থা করে জার্মান সরকরা৷ সম্প্রতি গ্যোটিঙ্গেনে নতুন করে সংক্রমণ শুরুর পর থেকে খুব খারাপ অবস্থায় আছেন তারা৷

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াচ্ছে ডানপন্থি দল এএফডি৷ সংগঠনটি মনে করে, ‘‘আরব বংশীয়দের পরিষ্কার উস্কানিমূলক এবং মূর্খের মতো আচরণের কারণেই’’ গ্যাটিঙ্গেনের এখন এই অবস্থা৷

গণমাধ্যমের ভুমিকা নিয়েও ক্ষুব্ধ ইদুনা হাউজিং কমপ্লেক্সের বাসিন্দারা৷ ক্ষোভে সাংবাদিকদের ওপর শাক-সবজি ছুঁড়ে মারেন তারা৷

আসলে কে দায়ী?

কসভো থেকে আসা মানুষরা মনে করেন, সংক্রমণ নতুন করে বাড়ার জন্য তাদের অন্যায়ভাবে দায়ী করা হচ্ছে৷ তাদের দাবি, হুক্কা বারে বিশাল কোনো জমায়েত হয়নি, সুতরাং শুধু সেই জমায়েতের দিকে আঙুল তোলা ঠিক নয়৷ তারা করোনা পরীক্ষা এড়িয়ে চলেন- এমন অভিযোগও ভিত্তিহীন বলে দাবি তাদের৷ বরং কসোভান বংশোদ্ভুতদের অভিযোগ, করোনা পরীক্ষা করাতে গেলে তাদের তাড়িয়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটে৷

কসোভো থেকে আসা মানুষদের অনেকে মনে করেন, শুরু থেকে সবার প্রতি কঠোর হলে হয়ত এই অবস্থা হতো না৷ তাদের দাবি, ইদুনায় প্রথম সংক্রমিত ব্যক্তিটি কসোভান বংশোদ্ভূত ছিলেন না এবং সেই ব্যক্তি কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে সব জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছিলেন৷

Deutschland Coronaausbruch in Göttingen  Petra Broistedt  Stadträtin
ওটা তো কারাগার নয়: সিটি কাউন্সিলর পেত্রা ব্রোইস্টেড্টছবি: DW/O. Pieper

সক্রিয় নগরকর্তৃপক্ষ

শহরে নতুন সংক্রমিতদের বেশির ভাগই ইদুনা হাউজিং কমপ্লেক্সের৷ তাই সেখানে ভ্রাম্যমাণ করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে নগর কর্তৃপক্ষ৷ ডাক্তার, নার্স, মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন সেখানে৷ এক লাখ ২০ হাজার মানুষের শহরটির সব স্কুল, ডে কেয়ার সেন্টার, সুইমিং পুল বন্ধ, সব ধরনের দলীয় খেলাও আপাতত নিষিদ্ধ৷

তারপরও উঠছে কঠোর লকডাউনের দাবি৷ বিশেষ করে পুরো ইদুনা হাউজিং কমপ্লেক্স কোয়ারান্টিনের দাবি জানাচ্ছেন অনেকেই৷ তবে সিটি কাউন্সিলর পেত্রা ব্রোইস্টেড্ট ইদুনায় কোয়ারান্টিনের বিপক্ষে, ‘‘ওই জায়গাটা আমরা বেড়া বা কাঁটা তার দিয়ে ঘিরে দিতে পারি না৷ ওটা তো কারাগার নয়৷’’

নতুন কিছু নয়

পৌরসভায় পাইরেট পার্টির প্রতিনিধি মাইনহার্ট রামস্বামী দীর্ঘ দিন ধরে কসোভো থেকে আসা মানুষদের জন্য কাজ করছেন৷ করোনাকে ঘিরে ডানপন্থিদের তৎপরতা এবং স্থানীয় মানুষদের মাঝে তার প্রভাব দেখে তিনি বিস্মিত নন৷ তিনি বলেন, এমন ‘অসন্তোষ' সবসময়ই ছিল৷ তবে এখন তা অনেক বেড়েছে৷’’ তার মতে, অনেক বছর ধরেই কসোভো থেকে আসা মানুষরা অনিশ্চয়তায় রয়েছেন এবং ‘‘অতীতে পুলিশ কখনো তা কমানোর চেষ্টা করেনি৷’’

গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি, ‘‘গ্যোটিঙ্গিনের এক ডেন্টিস্ট করোনার প্রাদূর্ভাবের সময় অস্ট্রিয়ার এক স্কি রিসর্টে ছিলেন৷ ফিরে এসে অন্তত ৫০০ মানুষের দাঁতের চিকিৎসা করেছেন৷ তাকে নিয়ে কেউ কোনো প্রতিবেদন করেনি৷’’

অলিভার পিপার/ এসিবি