গ্রামীণ নারীদের ভাগ্য বদলাতে ইইউ প্রকল্প
৩১ জুলাই ২০১০বেশ কয়েক বছর আগে পরলোকে চলে গেছেন হাসনা বেগমের স্বামী৷ ছেলেপুলে নিয়ে তিনি অসহায়৷ সিরাজগঞ্জের এই হাসনা বেগমের বয়স চল্লিশ৷ দেখলে মনে হবে আরও বেশি৷ দারিদ্র্য তাঁকে জেঁকে ধরে ছিল৷ স্বামী মারা যাবার পর বাড়ি বাড়ি ঝিয়ের কাজ করতেন৷ পেটেভাতে৷ সংসার চলে না তাতে৷ তাই কাজ নিলেন রাস্তার মাটি কাটার৷ এখানে মাসে তাঁর আয় হতো দুই থেকে তিনশত টাকা৷ পুরুষরা তাঁর একই সমান কাজ করে পেতো আরো বেশি৷ মজুরিবৈষম্য যাকে বলে৷ এভাবে চলছিল অনেকদিন৷ তারপর তাদের সেই এলাকায় চালু হলো কাজের বিনিময়ে টাকা নামের একটি প্রকল্প৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে৷
হাসনা বেগম আর থেমে রইলেন না৷ তিনি যোগ দিলেন সেই প্রকল্পে৷ একই কাজ৷ একই সময়৷ কিন্তু অর্জন অনেক বেশি৷ যতকাজ তত টাকা৷ এতে সংসারে এসেছে সুখ৷ প্রতি মাসে তাঁর আয় হচ্ছে গড়ে ২৩শ টাকা৷ এই টাকায় তার পরিবারের বেশ চলে যাচ্ছে৷ তার সন্তানরা এখন যাচ্ছে স্কুলে৷ বাড়িতে ছোট্ট ঘরটিও মেরামত করেছেন৷ হাসনা বেগমের মতো প্রায় ২৪ হাজার নারী এই প্রকল্পের আওতায় কাজ করে নিজের ভাগ্য বদলে দিচ্ছেন৷ একই সঙ্গে সমাজে তাদের জন্য এসেছে খেটে খাওয়া মানুষের সম্মান৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে এটিই একমাত্র প্রকল্প নয়, সারা বাংলাদেশ জুড়ে এ ধরণের প্রকল্পের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করার কাজ চলছে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই প্রকল্পের কর্মকর্তা কাজল চ্যাটার্জি জানালেন, আমরা নারীদের জন্য যে কেবল কাজই যোগাড় করছি, কাজের ব্যবস্থা এবং মজুরি নিশ্চিত করছি, তাই নয়৷ আমরা তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করছি, বোঝাবার চেষ্টা করছি ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় গড়তে, বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে৷ আমরা সব কিছুই করছি গ্রামীণ নারীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য৷ এই পর্যায়ে এসে আমাদের বলতেই হচ্ছে, আমরা সফলতার পথেই হাঁটছি৷ তিনি জানালেন, চলমান এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষের দিকে৷ শিগগিরই আমরা দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রবেশ করবো৷ আর সেই পর্যায়ে নারী কর্মীদের মজুরীরও বৃদ্ধি করা হবে, বিষয়টি চূড়ান্ত৷
প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক