অবৈধ অভিবাসী
১৩ এপ্রিল ২০১২নাগরিক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মিশায়েলিস ক্রিসোকোইডিস'এর তথাকথিত সংহতি আইন থেকেই যতো গোলমালের শুরু৷ সে আইন অনুযায়ী, বে-আইনী অভিবাসন-প্রয়াসীদের গ্রিস থেকে বহিষ্কার অবধি তাদের একটি সাবেক সেনা ছাউনিতে আটকে রাখা হবে৷ আইনটি ইতিমধ্যেই সংসদে গৃহীত হয়েছে৷ অথচ ২০০৯ সালের গ্রীষ্মেও তৎকালীন বিরোধী রাজনীতিক ক্রিসোকোইডিস অভিবাসীদের সেনা ছাউনিতে আটক করার বিরোধিতা করেছিলেন - মানবিকতার কারণে৷ আজ সরকারের সদস্য হিসেবে সেই ক্রিসোকোইডিস উদ্বাস্তুদের জন্য সারা গ্রিসে ৩০টি ঐ ধরণের শিবির সৃষ্টির নির্দেশ দিয়েছেন৷ তার খরচ আবার আসবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থ থেকে৷
বামপন্থি বিরোধী দলগুলি এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলির দৃষ্টিতে এই উদ্বাস্তু শিবিরগুলি কারাগারসুলভ বন্দিশিবির৷ মহম্মদি ইউনুস এথেন্সের আফগান অধিবাসী সমিতির যুগ্ম-সভাপতি এবং গ্রিসের উদ্বাস্তু সংগঠনগুলির সর্বোচ্চ সমিতির সদস্য৷ তার চোখে সরকারের এই পরিকল্পনা স্রেফ নির্বাচনী প্রচারণা ছাড়া আর কিছু নয়:
‘‘২০০১ সাল যাবৎ আমি গ্রিসে আছি এবং প্রত্যেকবারই ঠিক একই জিনিস দেখেছি: নির্বাচন এলেই বহিরাগতদের নিয়ে টান পড়ে৷ অভিবাসন গ্রিসের পক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কিন্তু খানাতল্লাসি আর গ্রেপ্তারের মাধ্যমে সে সমস্যার সমাধান করা যায় না৷ বরং যে সব আইন আছে, তা প্রয়োগ করা ভালো৷ গ্রিসের রাজনৈতিক আশ্রয় আইন ইউরোপের মধ্যে সেরা, কিন্তু সেটা প্রয়োগ করা হয় না, এ'ই যা দুঃখ৷''
যেমন গ্রিসে আমলাতন্ত্রের আধিক্যের ফলে একটি রাজনৈতিক আশ্রয় পাবার আবেদন গৃহীত কিংবা প্রত্যাখ্যাত হতে পাঁচ বছর অবধি সময় লেগে যায়৷ - অপরদিকে ক্রমবর্ধমান অপরাধবৃত্তির জন্যও অভিবাসীদের অংশত দায়ী করা হচ্ছে৷ এর থেকে রাজনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে তিনটি দল, যারা সর্বাধুনিক সমীক্ষা অনুযায়ী পাঁচ শতাংশ ভোট পাবার, অর্থাৎ সংসদে আসন নেবার আশা করতে পারে৷
ইউনুস নিজেও অস্বীকার করেন না যে, বিগত কয়েক বছরে এথেন্সে অপরাধের সংখ্যা লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে৷ কিন্তু অভিবাসনের সঙ্গে তিনি তার কোনো সম্পর্ক দেখেন না:
‘‘সত্যিই শহরের কেন্দ্রে একটি ব্যাপক নিরাপত্তার সমস্যা রয়েছে, কিন্তু আমরা অভিবাসীরাই তো তার থেকে সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়ি৷ রাতের দিকে শহরের কিছু এলাকায় হামলার আশঙ্কায় বিদেশি হিসেবে রাস্তায় বেরোতেই ভয় করে৷''
ভোটারদের প্রিয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী আন্দ্রেয়াস লোভের্ডোস'ও অভিবাসীদের নন্দ ঘোষ বানিয়ে হাওয়া গরম করতে পটু৷ সম্প্রতি একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি এই ধারণা ব্যক্ত করেন যে, অভিবাসীরা হল ‘‘একটি জনস্বাস্থ্যগত টাইম বোমা''; তাদের জন্যেই নাকি যক্ষ্মা, এমনকি এইডস'এর মতো রোগ ছড়াচ্ছে৷ বামপন্থি দল সিরিৎসা'র অভিবাসন সংক্রান্ত মুখপাত্র টাসোস কোরোনাকিস বলেন:
‘‘অর্থনীতি যখন ভালো চলছিল, তখন সরকার অভিবাসীদের বৈধ কাগজপত্র থাক আর না থাক, দেশে ঢুকতে দিয়েছেন, যা'তে সস্তার শ্রমিক হিসেবে তাদের শোষণ করা যায়৷ আজ এই মানুষগুলিকে তাড়ানোর প্রয়োজন পড়েছে, তাই হঠাৎ উদ্বাস্তু শিবির আর স্বাস্থ্যগত টাইম বোমার কথা বলা হচ্ছে৷ অভিবাসন নয়, নতুন দারিদ্র্যের কারণেই অপরাধবৃত্তি বেড়েছে৷ সেজন্য অভিবাসীদের দায়ী করাটা মিথ্যা: অপরাধমূলক কার্যকলাপের পিছনে সাধারণত যারা থাকে, তারা সবাই গ্রিক৷''
সমাজতন্ত্রীরা যেখানে রক্ষণশীলদের প্রাক্তন বিতর্কিত প্রস্তাবগুলি বাস্তবায়িত করতে চলেছে, রক্ষণশীলরা স্বয়ং কিন্তু সেক্ষেত্রে আশ্চর্যভাবে নীরব৷ কেননা তারা জানে যে, অভিবাসীদের নিয়ে বাড়াবাড়ি করলেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের তরফ থেকে শুনতে হবে: গ্রিস বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ থেকে তার নিজের এবং ইইউ'এর সীমানা রক্ষা করতে অসমর্থ৷ অথচ গ্রিসের অপর একটি দাবি ব্রাসেলসে প্রায় অশ্রুতই থেকে গেছে৷ সে'টি হল: সীমান্তের দেশগুলিতে অভিবাসীদের আগমনের ফলে সে'দেশগুলির উপর যে চাপ পড়ছে, বাদবাকি ইইউ'তে তা সমানভাবে ভাগ করে নেওয়া উচিৎ৷ কিন্তু তার প্রস্তুতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনৈতিক বিচারে শক্তিশালী দেশগুলিতেও প্রায় নেই বললেই চলে৷
প্রতিবেদন: ইয়ানিস পাপদিমিত্রিউ/অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ