গ্রেটা টুনব্যার্গ: ইকোলজির জাস্টিন বিবার?
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সোচ্চার সুইডেনের ১৬ বছর বয়সি শিক্ষার্থী গ্রেটা টুনব্যার্গ৷ সম্প্রতি তাঁর কারণে সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল৷
একাকিনী
২০১৮ সালের আগস্টে সুইডেনের গণমাধ্যম আসন্ন সংসদ নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত ছিল৷ সেই সময় প্রথমে তিন সপ্তাহ এবং পরে প্রতি সপ্তাহে শুক্রবার স্কুলে না গিয়ে সংসদের সামনে একাই বিক্ষোভ শুরু করেছিল গ্রেটা টুনব্যার্গ৷ তখন সে নবম শ্রেণিতে পড়তো৷
সম্ভাব্য নোবেলজয়ী
বিক্ষোভ শুরুর কয়েক মাসের মধ্যেই বিশ্বে আলোচিত হয়ে ওঠে গ্রেটা৷ জাতিসংঘের উদ্যোগে গতবছর ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সম্মেলনে সে জাতিসংঘের মহাসচিবসহ কয়েকজন বিশ্বনেতার সঙ্গে কথা বলে৷ এছাড়া গত জুলাইতে ফ্রান্সের সংসদে এবং সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দুটি হাউস কমিটির শুনানিতে অংশ নেয়৷ বারাক ওবামার সঙ্গেও দেখা করেছে সে৷ অনেকেই তাকে সম্ভাব্য নোবেলজয়ী হিসেবে দেখছেন৷ এ বছরের ‘বিকল্প নোবেল’ পুরস্কারও পেয়েছে সে৷
যেভাবে শুরু
আট কি নয় বছর বয়সে শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রথম জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে পারে গ্রেটা টুনব্যার্গ৷ তখন থেকে সে দুধ ও মাংস খাওয়া ছেড়ে দেয়৷ এমনকি ‘একেবারে প্রয়োজন’ না হলে নতুন কিছু কেনেনা৷ ছবিতে গ্রেটাকে গতবছরের জলবায়ু সম্মেলনে দেখা যাচ্ছে৷ সুইডিশ সংসদের সামনে এভাবেই বসে থাকতো সে৷
পরিবারে শুরু
গ্রেটার কারণে তার মা, বাবা ও ছোট বোন জীবনযাপনে পরিবর্তন এনেছেন৷ যেমন গ্রেটার মা অপেরা গায়িকা হওয়ায় একসময় সারা পৃথিবীতে কনসার্ট করতেন৷ কিন্তু বিমানযাত্রায় অনেক বেশি কার্বন নির্গত হওয়ায় এখন শুধু নরডিক দেশগুলোতে কনসার্টে যান তিনি৷ ছবিতে অভিনেতা বাবার সঙ্গে গ্রেটাকে দেখা যাচ্ছে৷
পালতোলা নৌকায় আটলান্টিক পাড়ি
মা যেমন বিমানযাত্রা কমিয়ে দিয়েছেন গ্রেটাও সেই পথ বেছে নিয়েছে৷ সম্প্রতি পালতোলা নৌকায় করে সে নিউইয়র্ক গিয়েছে৷ সোলার প্যানেল ও আন্ডারওয়াটার টারবাইন দিয়ে সেই নৌকার ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি চলেছে৷ মোনাকোর রাজকন্যার ছেলে পিয়্যা কাসিরাগি ও নৌকায় করে বিশ্ব ঘোরা জার্মানির বরিস হেয়ারমান টুনব্যার্গের নৌকাটি চালিয়েছেন৷ নৌকায় টুনব্যার্গের সঙ্গে তার বাবাও ছিলেন৷ সময় লেগেছে দুই সপ্তাহ৷
‘বিজ্ঞানীদের কথা শুনুন’
গ্রেটা সম্প্রতি মার্কিন সাংসদদের বিজ্ঞানীদের কথা শোনার আহ্বান জানিয়েছে৷ হাউস কমিটির এক শুনানিতে সে বলেছে, ‘‘আমি চাই না, আপনারা আমার কথা শুনুন৷ আমি চাই, আপনারা বিজ্ঞানীদের কথা শুনুন৷ আমি চাই, এরপর আপনারা বিজ্ঞানের পেছনে একত্র হোন... এবং তারপর আমি চাই, আপনারা উদ্যোগ নিন৷’’
শুধু প্রশংসা নয়, আছে সমালোচনাও
গ্রেটার কার্যক্রমে অনুপ্রাণিত হয়ে সারা বিশ্বের স্কুল শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে নেমেছে৷ সম্প্রতি গ্রেটার কাজকে স্বীকৃতি দিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও৷ তবে তার সমালোচকও আছে৷ গত জুলাই মাসে ফ্রান্সের সংসদে (ছবি) বক্তব্য দিয়েছিল গ্রেটা৷ ডানপন্থি সাংসদরা সেই সময় সংসদে উপস্থিত থাকেননি৷ তারা গ্রেটাকে ‘ইকোলজির জাস্টিন বিবার’ বলেও আখ্যায়িত করেছিলেন৷
দুর্বলতাকে শক্তিতে রূপান্তর
১২ বছর বয়সে গ্রেটার অ্যাসপার্গার্স সিন্ড্রোম (এক ধরনের লঘু অটিজম) আছে বলে জানা যায়৷ তবে এই অবস্থাকে নিজের শক্তি হিসেবে দেখে গ্রেটা৷ একসময় সে বলেছিল, ‘‘আমার মস্তিষ্ক একটু অন্যভাবে কাজ করে৷ তাই ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আমি বিশ্ব দেখি৷ আর আমি সব খোলাখুলি বলি৷ একটা বিষয় যেমন, আমি সেভাবেই বলি৷ যখন আমি কিছু করার সিদ্ধান্ত নেই, তখন মনে কোনো সন্দেহ না নিয়েই আমি তা করি৷’’
স্কুল থেকে ছুটি
গত জুন মাসে প্রায় সব বিষয়ে ‘এ’ গ্রেড নিয়ে নবম শ্রেণি পাস করেছে গ্রেটা৷ এরপর অ্যাক্টিভিজম চালিয়ে যেতে স্কুল থেকে এক বছরের ছুটি নিয়েছে সে৷