ঘরে বসেই শ্যুটিং, করোনা সংকট নিয়ে ছবি
১১ এপ্রিল ২০২০পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র থেকে ধারাবাহিক প্রযোজনার সঙ্গে যুক্ত একটা বড় অংশের মানুষ থেকে যান পর্দার আড়ালে৷ এই কলাকুশলীদের অধিকাংশ প্রাত্যহিক পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে কাজ করেন৷ করোনার সংক্রমণ রুখতে লকডাউন চলায় বন্ধ রয়েছে সব ধরনের শ্যুটিং৷ এর ফলে কর্মহীন অবস্থায় বাড়িতে বসে থাকতে হয়েছে কলাকুশলীদের৷ তাদের আর্থিক সাহায্য দিতে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রথম সারির অভিনেতা-অভিনেত্রীরা৷ পরিচালনায় অরিন্দম শীল৷ তাঁর সঙ্গে রয়েছেন পদ্মনাভ দাশগুপ্ত৷
দেশের বিভিন্ন রাজ্যের শিল্পীদের নিয়ে মেগাস্টার অমিতাভ বচ্চনকে সামনে রেখে তৈরি একটি ভিডিও সম্প্রতি সামনে এসেছে৷ ভিডিওতে টেকনিশিয়ানদের পাশে থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে৷ এটি দেখে বাংলার কলাকুশলীদের জন্য ছবি তৈরির কথা মাথায় আসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের৷ করোনার আবহে তিনি একটি গানও রচনা করেছেন৷ গানের প্রথম লাইন ‘ঝড় থেমে যাবে একদিন'৷ সঙ্গীতশিল্পী কবীর সুমনের সঙ্গে মোবাইলে বার্তা আদানপ্রদানের সময় এই গানটির কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তাঁর কথায় সুরারোপ করেন সুমন৷ সেই গান হয়ে উঠেছে স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিটির অনুপ্রেরণা৷ ছবির নাম ‘ঝড় থেমে যাবে একদিন'৷
এই ছবিতে অভিনয় করছেন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, নুসরত জাহান, আবির চট্টোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, কোয়েল মল্লিক, মিমি চক্রবর্তী, রুক্মিণী মৈত্রসহ টলিউডের নামজাদা শিল্পীরা৷ লকডাউন চলাকালীন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে বলে শ্যুটিং করা যাচ্ছে না৷ তাহলে কীভাবে তৈরি হচ্ছে এই ছবি? প্রবীণ অভিনেতা পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চিত্রনাট্য তৈরি করে প্রত্যেকের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ সকলে বাড়িতে বসেই শ্যুটিং করছে৷ আমার অংশগুলি ছেলে মোবাইলে তুলে দিয়েছে৷ আমি শুধু ওকে বলে দিয়েছি আলো এবং ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল সম্পর্কে৷'' একইভাবে প্রসেনজিৎ থেকে কোয়েল, সবাই বাড়িতে কাউকে দিয়ে শ্যুট করিয়ে ছবি পাঠিয়ে দিচ্ছেন৷ বাকি কাজ পরিচালকের৷ পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, আমি সপরিবার বাড়িতে আটকে রয়েছি৷ এই পরিস্থিতিতে সেটাই কর্তব্য৷ এখনকার ঘটনাক্রম যেমন অভূতপূর্ব, তেমনই নতুন এভাবে ছবি তৈরির অভিজ্ঞতা৷ অতীতে কখনো এই পদ্ধতিতে শ্যুটিং করার প্রয়োজন হয়নি৷''
ছবির কাহিনিতে তুলে ধরা হয়েছে করোনা ভাইরাসের ফলে উদ্ভূত সংকটকে৷ বৃদ্ধ বাবা ও মেয়ে হঠাৎ লকডাউনের জেরে আটকে পড়েছেন ভিন্ন জায়গায়৷ একে অপরের সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না৷ এই দূরত্বের ফলে সংকট ঘনীভূত হয়৷ দু'জনই প্রচণ্ড উদ্বেগের মধ্যে পড়েন৷ প্রশাসন ও চিকিৎসকের সাহায্য পান তাঁরা৷ ছবির শেষে পিতা ও কন্যার সাক্ষাৎ৷ সঙ্গে বার্তা, করোনা রুখতে থাকতে হবে ঘরেই৷ মেনে চলতে হবে সামাজিক দূরত্ব৷ মিনিট দশেকের এই ছবির সম্পাদনার কাজ চলছে জোরকদমে৷ পরিচালক অরিন্দম শীলের কাছে একের পর এক ফুটেজ আসছে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের৷ তিনি ছবিকে চূড়ান্ত রূপ দিচ্ছেন৷ পরিচালক জানিয়েছেন, এই ছবির মাধ্যমে বিভিন্ন সংস্থার কাছে সাহায্যের আবেদন রাখা হবে৷ সেই সংস্থাগুলির লোগো ব্যবহার করা হবে ছবিতে৷ অর্থের পুরোটাই তুলে দেওয়া হবে কলাকুশলীদের হাতে৷
মুখ্যমন্ত্রীর ভাবনায় এই উদ্যোগে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন কলাকুশলীরা৷ ইতিমধ্যে তাঁদের হাতে অর্থ তুলে দিতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ গড়ে উঠেছে একাধিক তহবিল৷ ফেডারেশন অফ সিনে টেকনিশিয়ান্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া-র সাধারণ সম্পাদক অপর্ণা ঘটক বলেন, ‘‘টেকনিশিয়ানরা কষ্টে আছেন৷ চুক্তির ভিত্তিতে তাঁরা কাজ করেন৷ তাই মুখ্যমন্ত্রী ও টলিউডের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই৷''