ঘুস লেনদেন চক্রের সন্ধান
৩০ মে ২০১৩আবার কর্পোরেশনের সাসপেন্ড বা চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের চাকরি ফিরে পাওয়ার তদবিরে বাণিজ্যও করেন তারা৷
গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে জানা যায় এই চক্রের কথা৷ এই ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ হওয়ার পর, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে থানায় জিডি করা হয়েছে৷ চিহ্নিত করা গেছে চক্রের অন্তত সাত জনকে৷ চক্রের সদস্যরা হলেন ঠিকাদার বিল্লাল হোসেন, মো. মিলন, আসাদুজ্জামান আসাদ, ফারুখ হোসেন ওরফে ভাগ্নে ফারুক, সালাউদ্দিন পাপ্পু এবং সিটি কর্পোরেশনের কম্পিউটার অপারেটর মো. শহীদ৷
তারা সিটি কর্পোরেশনে নানা ধরণের কাজ পাইয়ে দেয়া এবং পুরনো বিল তোলার জন্য টাকার লেনদেন করে থাকেন৷ শুধু তাই নয়, ঐ লেনদেনের সময় কর্পোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিজ বন্ধু বা আত্মীয় বলে পরিচয় দেন তারা৷ তাদের মধ্যে বিল্লালের স্ত্রী আবার সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারী৷ তিনি একটি পক্ষের কাছ থেকে পুরনো বিল পাইয়ে দেয়ার জন্য মোট ১ লাখ টাকা নেন৷ তবে তার দাবি, কাজ শেষে ৫ লাখ টাকা দিতে হবে৷ ভিডিও ফুটেজ ধরে তাকে এই অভিযোগের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি অবশ্য দাবি করেন যে, তিনি ব্যবসার জন্য টাকা নিয়েছেন৷
ওদিকে, আসাদুজ্জামান এবং ফারুক সিটি কর্পোরেশনের সাসপেন্ড হওয়া কানুনগো মোহাম্মদ আলির সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন ঠিকাদার সালাউদ্দিন এবং পাপ্পুকে৷ এ জন্য তারা ২ কোটি টাকার প্রস্তাব দেন৷ আসাদুজ্জামান এবং ফারুখ এরপর বিষয়টি নিয়ে কাজ করার আশ্বাস দেন৷ তাদের মূল শক্তি হলো, তারা সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক নজরুল ইসলামের বন্ধু৷ এ ব্যাপারে আসাদুজ্জামনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নজরুল ইসলাম তার বাল্যবন্ধু৷ আর ফারুক জানান, আপন ভাগ্নে না হলেও তিনি প্রশাসককে মামা বলে ডাকেন৷ তবে তারা দু'জনই দাবি করেন যে, তাদের ঘুসের প্রস্তাব দেয়া হলেও তাতে তারা সম্মত হননি৷
এ নিয়ে প্রশাসক নজরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসাদুজ্জামান এবং ফারুককে তিনি চেনেন৷ আসাদুজ্জামান এবং তার গ্রামের বাড়ি একই এলাকায়৷ তবে তারা তার কাছে কোনো তদবির নিয়ে যান না এবং তাদের তদবিরে তিনি কাজও করেন না৷ তিনি দাবি করেন, কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় তারাই এখন তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে৷
এদিকে সিটি কর্পোরেশনের কানুনগো মোহাম্মদ আলির চাকরি রক্ষায় ঘুসের প্রস্তাব দেন দু'জন ঠিকাদার সালাউদ্দিন এবং পাপ্পু৷ মোহাম্মদ আলি অবশ্য দাবি করেন যে, তিনি ঐ দু'জনকে চেনেন না৷ তিনি আদালতের মাধ্যমেই চাকরি ফিরে পেয়েছেন৷
এই পুরো চক্রের অফিশিয়াল কাজ করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কম্পিউটার অপারেটর শহীদ৷ তবে তার দাবি যে, তাকে বিল্লাল বিভিন্ন কাজে নিয়ে যায়৷ অবশ্য তারা টাকা লেনদেন করেন কিনা, তিনি তা জানেনা৷
ঢাকা মাহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, তারাও বিষয়টি জেনেছেন এবং ভিডিও ফুটেজ তারাও পেয়েছেন৷ তারা তদন্ত শুরু করেছেন৷ পুলিশের দাবি, অচিরেই প্রতারক চক্রটিকে গ্রেপ্তার করা হবে৷