1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্বজনদের লাশের খোঁজে ঢামেকে ভিড়

২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

পুরান ঢাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কারণ নিয়ে শুরু হয়েছে ধোঁয়াশা৷ মন্ত্রী বলছেন এককথা, তদন্ত কমিটি বলছে আরেক কথা৷ এদিকে ঢাকা মেডিকেল কর্তৃপক্ষ ৪৬টি লাশ হস্তান্তরের কাজ শেষ করেছে৷ নিখোঁজদের স্বজনদের ভিড় বাড়ছে হাসপাতালে৷

https://p.dw.com/p/3Dqmc
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/R. Asad

পুরান ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় যে ভবনে আগুন লেগেছে সেখানে রাসায়নিক দাহ্য পদার্থের (কেমিক্যাল) কোনও অস্তিত্ব নেই এবং কোনও গোডাউনও ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন৷ একইসঙ্গে  তিনি বলেন, পুরান ঢাকার কেমিক্যালের ব্যবসা বন্ধ করা যাবে না৷  বৃহস্পতিবার দুপুরে বার্ন ইউনিট পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি৷

এদিকে শুক্রবার বিস্ফোরক পরিদফতরের প্রধান পরিদর্শক শামসুল আলম বলেছেন, ‘‘আমরা ঘটনাস্থল থেকে অনেক ক্লু পেয়েছি৷ ধারণা করা হচ্ছে তিনটি কারণে আগুন লাগতে পারে৷ কারণগুলো হচ্ছে- ট্রান্সফরমার, গ্যাস সিলিন্ডার কিংবা কেমিক্যাল বিস্ফোরণ৷'' 

এছাড়া চকবাজারের ওয়াহিদ ম্যানশনে অবশ্যই কেমিক্যাল ছিল বলে মন্তব্য করেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লে. কর্নেল এস এম জুলফিকার রহমান৷ তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তদন্ত কমিটির একজন সদস্য৷ শুক্রবার ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শনে এসে তিনি এ মন্তব্য করেন৷

জুলফিকার রহমান বলেন, ‘‘ভবনে অবশ্যই কেমিক্যাল ছিল৷ ভবনের ভেতরে গ্যাস লাইটার রিফিলের পদার্থ ছিলো৷ এটা নিজেই একটা দাহ্য পদার্থ৷ এছাড়া অন্যান্য কেমিক্যাল ছিল৷ প্রত্যেকটা জিনিসই আগুন দ্রুত ছড়িয়ে দিতে সহায়তা করেছে৷ পারফিউমের বোতল রিফিল করা হতো এখানে৷ সেই বোতলগুলো ব্লাস্ট হয়ে বোমার মতো কাজ করেছে৷ এগুলো আগুনকে টিগার করেছে, যে কারণে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে৷ কেমিক্যালের কারণ এভাবে ছড়িয়েছে৷ না হলে কখনোই আগুনে এভাবে ছড়ায় না৷''

শিল্পমন্ত্রীর মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওয়াহিদ ম্যানশনে কেমক্যাল ছিল না-শিল্পমন্ত্রী কথাটা কোন আঙ্গিকে বলেছেন এটা আমার জানা নেই৷

একইদিনে সড়ক ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, পুরান ঢাকার নিমতলীর ঘটনার পর আরও সতর্কভাবে নজরদারি চালানো হলে চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডে বিপুল প্রাণহানি হয়ত এড়ানো যেত৷

তিনি বলেছেন, কোনো কিছু দেশে ঘটলে যেহেতু সরকার ক্ষমতায় আছে, দায় তো সরকার এড়াতে পারে না৷ কিন্তু জনসাধারণ যারা এই ব্যবসার সাথে জড়িত, তাদেরও সচেতন হওয়া দরকার৷ কারণ তাদের এখানে জীবিকার চেয়ে জীবনের ঝুঁকি বেশি৷ সেখানে সচেতনতাও একটা ব্যপার ছিল, সতর্কতার ব্যপার ছিল৷ 

চকবাজারের আগুনের ঘটনায় মামলা

আগুনে জীবন্ত দগ্ধ আরাফাত ইসলাম সিয়ামের (১৯) আত্মীয় হাবীবুর রহমান রুবেল শুক্রবার চকবাজার থানায় এ মামলা দায়ের করেন বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ কমিশনার মোহাম্মদ ইব্রাহীম খান জানান৷ তিনি বলেন, ‘অবহেলাজনিত প্রাণনাশ' অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে৷ 

চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত যেভাবে

এ মামলায় হাজী ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিক হাজি আবদুল ওয়াহেদের দুই ছেলে শহীদ ও হাসানসহ অজ্ঞাত পরিচয় ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়েছে৷

৪৬ লাশ হস্তান্তর, বাকিদের ডিএনএ সংরক্ষণ চলছে

চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের মধ্যে ৪৬ জনের পরিচয় শনাক্তের পর তাদের মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে স্বজনদের কাছে৷ চকবাজার থানার ওসি শামীমুর রশিদ তালুকদার জানান, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ৪৬ জনের মরদেহ শনাক্ত করা গেছে, সবগুলোই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে৷

এখনও ২১ জনের লাশ রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে৷ স্বজনদের খুঁজে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব লাশ বুঝিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা জেলা প্রশাসনের সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মনসুর৷

ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার সকালে মোট ৭০টি বডি ব্যাগ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে পাঠানোর কথা জানানো হলেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ ৬৭টি লাশ পাওয়ার কথা সাংবাদিকদের জানান৷

সংখ্যার গড়মিলের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক তারেক হাসান ভূইয়ার ভাষ্য, তাঁদের হিসাবে লাশ ৭০টি৷ তবে কয়েকটা ব্যাগে খণ্ড খণ্ড মরদেহ ছিল৷ সম্পূর্ণ ডেডবডি হয়ত ৬৭টি হতে পারে৷ কয়েকটি লাশ এতটাই পুড়েছে যে চেনার ‍উপায় নেই৷

এদিকে সোহেল মাহমুদ জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের কাছে ফুল বডি এসেছে মোট ৬৭টি৷ তবে আলাদা ব্যাগে কিছু খণ্ডিত দেহাবশেষ আছে৷ সেগুলো এই মরদেহগুলোরই কি না তা আমরা পরীক্ষা করে দেখব৷ আপাতত সবগুলো ডেডবডির স্যাম্পল রেখে দিচ্ছি৷''

এফএ/জেডএইচ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, বাংলা ট্রিবিউন)