চরম ডানপন্থি রাজনীতির রোষে ট্রান্স ব্যক্তিরা
জার্মানির চরম ডানপন্থি রাজনীতির রোষে পড়েছে ট্রান্সজেন্ডার বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা৷ কিন্তু এই ধারার প্রভাব পড়ছে সমাজের অন্যত্রও৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
জার্মানির আইন ও বিতর্কের সূত্রপাত
২০২৩ সালে জার্মান সরকার একটি বিল পাস করে নতুন আইন আনে৷ এই ‘সেলফ-ডিটারমিনেশন’ অ্যাক্টটি জার্মানিতে ট্রান্স, ইন্টারসেক্স বা নন-বাইনারি পরিচিতির মানুষদের লিঙ্গ বদলানোর কাজে সহায়তা করবে৷ এই আইন পাস হবার পর থেকেই এ বিষয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য, গুজব ও ঘৃণা ছড়ানো মন্তব্য উঠে আসছে দেশটির চরম ডানপন্থি রাজনৈতিক মহল থেকে৷
যা বলছে এএফডি
গত বছর, জার্মানির চরম ডানপন্থি দল, এএফডির নেত্রী বিয়াট্রিক্স ফন স্টর্শ বলেন যে, শারীরিক পরিচিতিই লিঙ্গ পরিচিতির ক্ষেত্রে শেষ কথা৷ তার মতে, ট্রান্স ব্যক্তিদের জন্য দেশজুড়ে লিঙ্গ সচেতনতা কেন্দ্র খোলা হচ্ছে যখন, তখন একই সময়ে দেশে অবসরপ্রাপ্তদের জন্য বা স্কুল-কলেজের জন্য পর্যাপ্ত অর্থায়ন সম্ভব হচ্ছে না৷
কী উদ্দেশ্যে এমন মন্তব্য?
সাশা ক্রানকে চরম ডানপন্থি রাজনীতি ও ট্রান্সভীতি নিয়ে গবেষণা করেন৷ তার মতে, এর আগেও, সমকামীদের আন্দোলনের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করতে দেখা যায় বলে জানান তিনি৷ ক্রানকে বলেন, ‘‘জার্মানিতে সমকামীদের অধিকারের বিষয়টি বর্তমানে এতটাই স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে এসেছে যে এই ইস্যুতে জনগণ এখন আর বিভক্ত হয় না৷ চরম ডানপন্থিরা তাই এখন আরো ছোট একটি গোষ্ঠীকে (ট্রান্স) আক্রমণ করছে, যাতে তাদের একতা ভাঙা যায়৷’’
সমকামী ও তৃতীয় লিঙ্গের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপপ্রচার
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বার্ষিক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে দেখা যায় যে ইইউ-তে এলজিবিটিকিউ প্লাস গোষ্ঠীকে নিয়ে ধারাবাহিকভাবে গুজব ও ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে৷ শুধু তাই নয়, বিদেশি শক্তিরাও অনেক ক্ষেত্রে ইইউ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে বোঝাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটাতে এমন গুজবের আশ্রয় নিচ্ছে, বলে জানিয়েছে প্রতিবেদনটি৷
চরম ডানপন্থি আদর্শের শিকড়ে সমকাম বিরোধিতা
জার্মান সংবিধান সংরক্ষণ ও অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা বিএফভি ২০২১ সাল থেকেই চরম ডানপন্থার অভিযোগে এএফডির কার্যকলাপকে খতিয়ে দেখছে৷ সংস্থাটির মতে, ট্রান্স ও সমকাম বিরোধিতা আসলে চরম ডানপন্থি রাজনীতির ভেতরে প্রোথিত৷ ফলে, আধুনিক সমাজ আজ যেভাবে লিঙ্গ ও পরিবারকে দেখে, এএফডির মতাদর্শ তা সরাসরি খারিজ করে৷
বাড়ছে তৃতীয় লিঙ্গের সাথে ঘটা অপরাধের সংখ্যা
ট্রান্স ব্যক্তিদের সংস্থা বুন্ডেসফেরবান্ড ট্রান্সের মুখপাত্র ক্যোনিগের মত, ট্রান্স ব্যক্তিদের সামাজিক হুমকি রূপে উপস্থাপন করে এএফডির রাজনীতি৷ অথচ জার্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১ সালে ৩৪০টি ঘটনা থেকে ২০২২ সালে সমকামবিরোধী ও ট্রান্সবিরোধী অপরাধের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪১৭৷ সমাজকর্মীদের মতে, এই সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে কারণ অনেক সময়েই, এই অপরাধগুলো নানা কারণে নথিভুক্ত হয় না৷
বিপদ শুধু কি ট্রান্স ব্যক্তিদের?
দেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া এএফডি জার্মানিতে কেবল ট্রান্স বা সমকামীদের অধিকারের লড়াইয়ের জন্য বাধা হবে না, জানাচ্ছেন ক্যোনিগ৷ তিনি বলেন, ‘‘গত কয়েক দশক ধরে লিঙ্গ বৈষম্য, বর্ণবাদ, সমকামভীতি বা ট্রান্সভীতির ক্ষেত্রে যত অগ্রগতি হয়েছে, তাকে নাকচ করতে চায় এএফডি৷’’ সব ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ওপর এর প্রভাব পড়বে৷