চলুন ঘুরে আসি পানাম নগর থেকে
ছবিগুলো বাংলাদেশের এক প্রাচীন শহরের৷ ঢাকা থেকে দূরত্বও বেশি নয়৷ তবে সংরক্ষণের অভাবে শহরটি ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসেছে৷ বাকিটা দেখুন আমাদের ঢাকা আলোকচিত্রী মুস্তাফিজ মামুনের চোখে৷
প্রাচীন নগরী সোনারগাঁও
নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁওয়ে অবস্থিত প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শহর পানাম নগর৷ ১৫ শতকে ঈসা খাঁ বাংলার প্রথম রাজধানী স্থাপন করেছিলেন এই সোনারগাঁওয়ে৷ কয়েক শতাব্দী পুরনো অনেক ভবন সমৃদ্ধ এই পানাম নগর এখন ধ্বংসের প্রহর গুনছে৷
যা আছে পানাম নগরে
প্রায় ৫ মিটার চওড়া এবং ৬০০ মিটার দীর্ঘ একটি সড়কের দু’পাশে সুরম্য কিছু স্থাপনা নিয়ে পানাম নগর গড়ে ওঠে৷ সড়কের উত্তর পাশে ২১টি এবং দক্ষিণ পাশে ৩১টি, মোট ৫২টি বাড়ি এই নগরের অন্যতম আকর্ষণ৷
প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত পানাম পুল
পঙ্খীরাজ খালের ওপর কচুরিপানার আড়ালে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত পানাম পুল৷ ১৬১১ খ্রিষ্টাব্দে মোঘলদের সোনারগাঁও অধিকারের পর রাজধানী শহরের যোগাযোগের জন্য কয়েকটি সড়ক ও সেতু নির্মাণ করা হয়৷ পঙ্খীরাজ খালের ওপর ১৭ শতকে এই পুলটি নির্মিত হয়েছিল, যা আমিনপুর ও দুলালপুর গ্রামের সংযোগ রক্ষা করছে৷ তিনটি খিলানের উপর পুলটি স্থাপিত৷
ইট দিয়ে বন্ধ প্রবেশদ্বার
জরাজীর্ণ হওয়ার কারণে পানাম নগরের অনেক ভবনেরই প্রবেশপথ ইটের গাথুঁনি দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের সংরক্ষিত পুরাকীর্তির তালিকায় স্থান পেলেও বহুকাল ধরে এ শহরটির সংস্কারের তেমন কোনো উদ্যোগে নেই তাদের৷ ফলে দিনে দিনেই হারিয়ে যেতে বসেছে মূল্যবান এ সব স্থাপনা৷
দাঙ্গায় ক্ষতির শিকার পানাম
১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় হিন্দু ব্যবসায়ীদের এই বসতিতে লুটেরারা দরজা-জানালাসহ অনেক কিছুই লুটে নিয়ে যায়৷ যুদ্ধের সময় বহু হিন্দু ব্যবসায়ী ভারতে পাড়ি জমালে পানাম প্রায় জনমানবহীন হয়ে পড়ে৷ বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর মূল্যবান এ বাড়িগুলো বসবাসের জন্য ১০-১৫ বছরের ইজারা দেয়া হয় এবং পরে তা নবায়নও করা হয়৷
পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় পানাম নগর
সরকারের অবহেলা থাকলেও পর্যকদের কাছে জনপ্রিয় এই পানাম নগর৷ প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে কয়েকশ’ মানুষ প্রাচীন এই শহরটি দেখতে আসেন৷
লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর
বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য রক্ষার্থে সোনারগাঁওয়ে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর৷ এ জাদুঘরের প্রবেশ পথে শিল্পাচার্যের কালজয়ী তৈলচিত্র ‘সংগ্রাম’ অবলম্বনে একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে৷ এটির স্থপতি শিল্পী মো. কাইয়ুম৷
বড় সর্দার বাড়ি
সোনারগাঁওয়ের লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের প্রবেশ মুখে প্রাচীন স্থাপনা বড় সর্দার বাড়ি৷ মুসলিম স্থাপনায় ঔপনিবেশিক শাসনামলের আবাসিক ভবনের অন্যতম নিদর্শন এটি৷ দীর্ঘদিনের অযত্ন অবহেলায় এ ভবনটিও ধ্বংসের প্রহর গুনছিল৷
চলছে সংস্কার কাজ
বড় সর্দার বাড়িতে সাম্প্রতিক সময়ে চলছে সংস্কারের কাজ৷ এ কাজে অর্থ সহায়তায় এগিয়ে এসছে কোরীয় বহুজাতিক কোম্পানি ইয়ংওয়ান কর্পোরেশন৷ কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) অংশ হিসেবে এটি সংস্কার ও পুনরুদ্ধারে তারা ব্যয় করছে প্রায় দুই মিলিয়ন মার্কিন ডলার৷
আগের অবস্থায় ফেরানোর চেষ্টা
সংস্কারের পর বড় সর্দার বাড়ির ভেতরের দৃশ্য৷ অনেক যত্নের সঙ্গে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন এ প্রকল্পের স্থপতিরা৷
গোয়ালদি মসজিদ
সোনারগাঁওয়ের পার্শ্ববর্তী গোয়ালদি গ্রামে এক গম্বুজ বিশিষ্ট গোয়ালদি মসজিদ৷ জানা যায়, মোল্লা হিজবার আকবর খান ১৫১৯ খ্রিষ্টাব্দে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন৷