চার মাসে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ৮৭
৩ মে ২০১৪মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার'-এর গত চার মাসের পরিসংখ্যান নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে৷ ওই প্রতিবেদন অনুসারে এই সময়ে বিএসএফের হাতে ছয় বাংলাদেশি নিহত, ১২ জন আহত ও সীমান্ত থেকে ৩৭ জনকে অপহরণ করা হয়েছে৷
সংগঠনটির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত জানুয়ারিতে বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনের মাসে ৩৯ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ১৬ জন, মার্চ মাসে ১৪ জন এবং এপ্রিল মাসে ১৮ জনকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে৷ বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ধরনের মধ্যে র্যাব, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর ক্রসফায়ারে নিহত ৫৪ জন, পুলিশের নির্যাতনে নিহত তিনজন, গুলিতে নিহত ২৮ এবং পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে দুইজনকে৷
এপ্রিলে বিচার বহির্ভূতভাবে নিহত ১৮ জনের মধ্যে ১৪ জনই তথাকথিত ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার বা বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে৷ এদের মধ্যে র্যাবের হাতে পাঁচজন, পুলিশের হাতে চারজন, কোস্টগার্ডের হাতে তিনজন এবং র্যাব-বিজিবির হাতে দুইজন নিহত হয়েছেন৷
সংস্থাটি জানায়, গত চার মাসে গুম হয়েছে ১৯ জন৷ এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে একজন, ফেব্রুয়ারি মাসে ছয়জন, মার্চ মাসে দুইজন আর এপ্রিল মাসে ১০ জন গুম হয়েছে৷
অধিকার বলছে, আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর অনেকেরই কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না৷ পরিবারগুলোর দাবি, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই তাদের ধরে নিয়ে গেছে এবং এর পর থেকে তারা গুম হয়েছেন অথবা তাদের লাশ পাওয়া গেছে৷ যদিও আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা এই অভিযোগগুলো অস্বীকার করছেন৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রথমে ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরে আটক ব্যক্তিকে জনসমক্ষে হাজির করছে অথবা দূরবর্তী কোনো থানায় নিয়ে হস্তান্তর করছে৷
অধিকারের তথ্য মতে, এপ্রিল মাসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ১০ জন গুম হওয়ার অভিযোগ রয়েছে৷ তাদের মধ্যে গুম হওয়ার পরে তিনজনের লাশ পাওয়া গেছে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে সাতজনকে একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে৷
অধিকারের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভারতের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী বিএসএফ গত জানুয়ারি মাসে একজন, ফেব্রুয়ারি মাসে একজন, মার্চ মাসে দুইজন এবং এপ্রিল মাসে দুই বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে৷ ১২ জন আহত হয়েছেন এবং চার মাসে ৩৭ জন বাংলাদেশিকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷
রাজনৈতিক সহিংসতায় গত জানুয়ারি মাসে ৫৩ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ১০ জন, মার্চ মাসে ২২ জন এবং এপ্রিল মাসে ২৫ জন নিহত হয়েছে৷
সাংবাদিকদের ওপর হামলায় আহত হয়েছেন গত চার মাসে ৪৩ জন, হুমকির সম্মুখীন আছেন সাতজন, গ্রেফতার হয়েছেন চারজন এবং লাঞ্ছিত হয়েছেন তিনজন৷
ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৭০ জন, যৌন হয়রানির শিকার ৮০ জন, এসিড সহিংসতার শিকার হয়েছেন ১৫ জন নারী৷ এ ছাড়া তৈরি পোশাক শিল্প কারখানায় সহিংসতায় আহত হয়েছেন ৩১১ জন শ্রমিক৷
বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলোতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অধিকার৷ সংগঠনটি মনে করে ‘গণতন্ত্র' মানে নিছক নির্বাচন নয়, রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়া ও ভিত্তি নির্মাণের গোড়া থেকেই জনগণের ইচ্ছা ও অভিপ্রায় নিশ্চিত করা জরুরি৷ সেটা নিশ্চিত না করে যাত্রা শুরু করলে তার কুফল জনগণকে বয়ে বেড়াতে হয়৷ রাষ্ট্র পরিচালনার সব ক্ষেত্রে জনগণ নিজেদের ‘নাগরিক' হিসেবে ভাবতে ও অংশগ্রহণ করতে না শিখলে ‘গণতন্ত্র' গড়ে ওঠে না৷ নাগরিক হিসেবে নিজেদের ইচ্ছা ও অভিপ্রায় এবং মানবিক চাহিদা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা হিসেবে রাষ্ট্র গড়ে না উঠলে তাকে ‘গণতন্ত্র' বলা যায় না৷
আর সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকার এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না৷ তাই দেশের নাগরিকদেরই এখন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাতে হবে৷ সরকারের ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে হবে৷'' তিনি বলেন, ‘‘সরকারকে বাধ্য করতে হবে এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধ এবং দায়ীদের আইনের আওতায় আনতে৷''