চালকের দরকার নেই, গড়গড়িয়ে চলছে গুগলের গাড়ি
১২ অক্টোবর ২০১০ঘটনা অ্যামেরিকার৷ ঘটনার নেপথ্যে গুগল৷ সেই গুগল, যারা স্ট্রিট ভিউ বানিয়ে বেশ বিতর্ক তুলেছে ইতিমধ্যে৷ তারাই চালাল এই স্বয়ংক্রিয় গাড়ি৷ যে গাড়ির জন্য প্রয়োজন হয়নি কোন মনুষ্য চালকের৷ বেশ কিছু সেন্সর, রাডার, ভিডিও ক্যামেরা, নানান কম্পিউটারাউজড প্রোগ্রাম, এরাই দিব্যি চালিয়ে নিয়ে গেল গাড়িখানাকে৷ কোন দুর্ঘটনা নয়, নয় কোন বিপত্তি, নেই কোন গাড়ি চালানোর চাপ৷ বোঝা যাচ্ছে এতদিন যা ছিল কল্পবিজ্ঞানের গাঁজাখুরি, এবার সেটাই হতে চলেছে বাস্তব৷ বাস্তবটা প্রমাণও হয়ে গেছে৷
জিনিসটার নাম ‘ইলেকট্রনিক ব্রেন ডিভাইস৷' তার বলেই বলীয়ান হয়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় গুগলের গাড়িখানা এমন চলল যেন মাখনের ভিতর দিয়ে ছুরি৷ গুগলের এঞ্জিনিয়াররা জানিয়ে দিলেন, সব মিলিয়ে আমাদের এই স্বয়ংক্রিয় গাড়ি মোট ১৪০,০০০ মাইল রাস্তা অতিক্রম করেছে৷ আর গোটা পথে কোন সমস্যাই হয়নি৷ গুগলের মাউন্টেন ভিউ ক্যাম্পাস থেকে যাত্রা শুরু করে সেই গাড়িখানা চলতে থাকে হলিউড বুলেভার্ড ধরে৷ ল্যাম্বার্ড স্ট্রিট, গোল্ডেন গেট ব্রিজ পার হয়ে প্যাসিফিক কোস্ট হাইওয়েতে ওঠে গাড়ি, পার হয় লেক টাহোয়ে৷ তারপর ঢুকে পড়ে শহরের জনবহুল এলাকায়৷ সারাক্ষণ এক অপরূপ নারীকন্ঠ ধারাভাষ্য দিয়ে বলতে থাকে কোথায় এখন রয়েছে গাড়ি, সামনে কী আছে, ট্রাফিকের অবস্থা কী ইত্যাদি প্রভৃতি৷ যাত্রীরা বেশ আরামেই গাড়িতে সওয়ার হয়ে বেড়াতে থাকেন চমৎকার৷
তবে একটা ছোট্ট গোলমাল হয়েছিল৷ হতেই পারত একটা অ্যাক্সিডেন্ট৷ যার জন্য কিন্তু স্বয়ংক্রিয় গাড়ি দায়ী নয়৷ পথে এক বেপরোয়া সাইকেল আরোহী লালবাতির নিষেধ উপেক্ষা করে গাড়ির মুখে এসে পড়েছিলেন প্রায়৷ শেষ মুহূর্তে স্টিয়ারিং-এর পিছনে বসে থাকা গুগলের এক এঞ্জিনিয়ার ব্রেকে চাপ দিয়ে তাঁকে বাঁচান৷
‘স্টিয়ারিং-এর পিছনে সারাক্ষণই আমাদের একজন এঞ্জিনিয়ারকে এইজন্যই আমরা বসিয়ে রেখেছিলাম'- গুগলের ব্লগে গোটা ব্যাপারটা লিখে একথাই জানিয়েছেন গুগলের তরফে এঞ্জিনিয়ার সেবাস্টিয়ান থুরন৷ সেবাস্টিয়ান বলেছেন, ‘নিরাপত্তার জন্যই একজন মানুষকে স্টিয়ারিং-এর পিছনে বসানো হয়েছিল৷ গাড়িতে কিন্তু তাঁকে হাত ছোঁয়াতে হয়নি৷ গাড়ি সারাক্ষণ নিজেকে নিজেই চালিয়েছে৷ শুধু ওই একবার...তাও আবার মানবিক সাইকেলওলার ভুলে৷'
তো, ব্যাপারটা আসলে তাই৷ যন্ত্র তার কাজ ঠিকই করে যায়৷ ভুল করে মানুষ৷ ট্র্যাফিক কানুন ঠিকমত সবাই মানে না বলেই এত দুর্ঘটনা হয়৷ সেসবের হাত থেকে বাঁচতে আর পরিবেশের সংরক্ষণের জন্যই এই গাড়ি হচ্ছে মানুষের ভবিষ্যত৷
তাতে আর সন্দেহ কী? ভবিষ্যত আসলে কল্পবিজ্ঞানের বাস্তবতা৷ কিন্তু একবার কল্পনা করে দেখুন আমাদের দেশে এ ধরণের গাড়ি চড়ার স্বপ্ন কতদূর বিলাসিতা!
কারণ, ট্র্যাফিকের গুরুত্বপূর্ণ আইনকানুন না মানাটাই তো আমাদের নিজস্ব আইনকানুন৷ আশা করা যাক পরিস্থিতি বদলাবে৷ সেটাই আপাতত প্রত্যাশা থাকুক৷ তারপর একদিন ঢাকা, কলকাতাতেও আমার হয়ত দেখব চালকবিহীন একখানা গাড়ি নিজেই নিজেকে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মসৃণ রাজপথ বেয়ে৷
প্রতিবেদন: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: সাগর সরওয়ার