কৃষিকাজে উন্নতি
১৯ জুলাই ২০১৩নিকারাগুয়ায় শুকনা মরশুমের শেষে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দাবানল ছড়িয়ে পড়ছে৷ এনজিও কর্মী সোফিয়া কাস্তিয়ো মনে করেন, ‘‘এর ফলে বিশাল পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করছে৷ অর্থাৎ, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে৷ এক আত্মঘাতী প্রবণতা৷ জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে৷ পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে৷ উষ্ণায়ন বাড়িয়ে তুলছে৷''
নিকারাগুয়ার চাষিরা খরার বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাচ্ছেন৷ অনেক কুয়া শুকিয়ে গেছে৷ অনেক অঞ্চলে প্রায় মাস ছয়েক কোনো বৃষ্টি হয় নি৷
হুয়ানা রামিরেস-ও কপাল পুড়েছে৷ তাঁর কলার বাগান প্রায় শুকিয়ে গেছে৷ বৃষ্টি না পড়লে ভুট্টা ও বিনস চাষও সম্ভব নয়৷ চাষবাস না হলেও এই বাক্সের সাহায্যে হুয়ানা কিন্তু অন্য কিছু শস্য উৎপাদন করতে পারেন৷ প্রকল্পের প্রধান সোফিয়া কাস্তিয়ো ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সাহায্যে সোলার ড্রায়ার লাগাচ্ছেন৷
খোলা জায়গায় দারুচিনি শুকানো হয়৷ বিক্রি করে কিছু বাড়তি রোজগার হয়৷ ১,০০০ ওয়াটেরও বেশি ক্ষমতার এই সোলার কালেক্টর থাকায় হুয়ানাকে কোকো বিনস আর রোদে শুকাতে হয় না৷ ফলে আর আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার উপরও নির্ভর করতে হয় না৷
পাশের গ্রামে চাষিদের এক সমবায়ও এই নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে৷ সেখানকার চাষিদের কাছে আরও বড় আকারের সোলার ড্রায়ার আছে৷ তা দিয়ে মাত্র দু'দিনের মধ্যে প্রায় ৪৫০ কিলো ভুট্টা, বিনস বা ধান শুকানো যায়৷
আদ্রতা মাপার যন্ত্রও খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ এর মাধ্যমেই চাষিরা জানতে পারেন, তাদের পণ্য সত্যি শুকিয়েছে কি না৷ স্থানীয় এক চাষি এ প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘একবার আমি প্রায় অর্ধেক শস্য হারিয়েছিলাম৷ চাষের সময় প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি হয়েছিল৷ তখন বস্তায় বিনস পুরে ফেলতে হয়েছিল৷ কিন্তু তখন দেখি নি, যে সেগুলি ঠিকমতো শুকায় নি৷ ফলে ছাতা ধরে গিয়েছিল৷''
রাজধানী মানাগুয়ার কাছে সোলার ড্রায়ার অ্যাসেম্বল করা বা জোড়া লাগানো হয়৷ অস্ট্রিয়ার কোনা কোম্পানি আগে থেকে তৈরি যন্ত্রাংশগুলি পাঠায়৷ সত্ত্ব আছে তাদেরই কাছে৷ তাদেরই প্রতিনিধি সেসিলিয়া ক্রুস বলেন, ‘‘আমাদের এই ব্যবস্থায় সৌর শক্তি কাজে লাগিয়ে কোকো বিনস শুকানো যায়, কাঠ জ্বালানোর প্রয়োজন পড়ে না৷ যেমন চাহিদা মেটাতে হুলালা অঞ্চলে কাঠ কাটার ফলে জঙ্গল প্রায় মুছে গেছে৷ নতুন করে গাছ লাগানোর কথা কেউ ভাবে না৷ ফলে আর কয়েক বছর পর সেখানে আর কোনো গাছপালাই থাকবে না৷''
দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী যন্ত্রের একটি রয়েছে লেয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ ৪০ বর্গ মিটার আয়তনের সোলার কালেক্টার যথেষ্ট গরম বাতাস সৃষ্টি করতে পারে৷ খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ এই পরীক্ষামূলক সোলার ড্রায়ার বসিয়েছে৷
ছাত্রছাত্রী ও অধ্যাপকরা এর মাধ্যমে চাষিদের জন্য নতুন প্রক্রিয়া পরীক্ষা করতে চান৷ যেমন ড্রাই ফ্রুট তৈরি করার পদ্ধতি৷ এভাবে আনারস বা কলা শুধু সংরক্ষণ করাই সম্ভব হবে না, আরও বেশি দামে সেগুলি বিক্রি করা যাবে৷
এসবি/ডিজি