চিকিত্সা প্রযুক্তিতে জার্মানির স্থান
১ আগস্ট ২০১১অবশ্য এশিয়া বিশেষ করে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিযোগীরাও কিন্তু ঘুমিয়ে নেই৷
জার্মানির গাড়ি ও যন্ত্রপাতির সুনাম যে বিশ্বব্যাপী তা বোঝা যায় এগুলির রপ্তানির পরিমাণ দেখে৷ কিন্তু চিকিত্সা প্রযুক্তিতেও জার্মানির সাফল্য যে কম নয়, সেটা হয়তো অনেকেরই জানা নেই৷ চিকিত্সা ক্ষেত্রে গবেষণা ও উন্নয়নের সাফল্যটা বিশেষ লক্ষণীয়৷ চিকিত্সা প্রযুক্তিতে পেটেন্টের ক্ষেত্রেও এগিয়ে আছে জার্মানি৷
কোলনস্থ জার্মান অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অলিভার কপেল এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘গত ১৫ বছরে চিকিত্সা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে জার্মান পেটেন্টের আবেদন তিন গুণ হয়েছে৷ বিক্রিও বেড়েছে অনেক৷ আন্তর্জাতিক বাজারে জার্মানির বিক্রির আনুপাতিক হার আনুমানিক ১০ শতাংশ বলা হলেও প্রকৃত সংখ্যাটা অনেক বেশি হবে বলে মনে করা হয়৷''
চিকিত্সা প্রযুক্তিতে জার্মানির প্রতিযোগীরাও এগিয়ে আসছে
ইলেকট্রনিক মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি, প্রতিস্থাপনের যন্ত্রপাতি, কৃত্রিম হিপের জয়েন্ট ইত্যাদি সামগ্রীর বিক্রির পরিমাণ বছরে ২০ বিলিয়ন ইউরো৷ এর মধ্যে ১২ বিলিয়ন বিক্রি হয় বিদেশে৷ এবং ঠিক এখানেই প্রতিযোগীরা প্রবেশ করছে৷ বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের প্রতিযোগীরা জোরেসোরে নেমেছেন বাজারে৷ অলিভার কপেলের ভাষায়, ‘‘চিকিত্সা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে প্রধানত চীনের পেটেন্ট আবেদন বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্রমাগত৷ সাধারণত মনে করা হয়, চীনে বুঝি পেটেন্ট রক্ষা ব্যবস্থাকে পদদলিত করা হয়৷ কিন্তু একথা এখন আর ঠিক নয়৷ ২০০০ সাল থেকে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় প্রবেশ করার পর থেকে চীনে পেটেন্ট সুরক্ষার ব্যাপার নজর দেয়া হচ্ছে৷ চিকিত্সা প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও একথা প্রযোজ্য৷''
অর্থনীতি ও গবেষণা ক্ষেত্রে সহযোগিতা
জার্মানিতে অর্থনীতি ও গবেষণা ক্ষেত্র পারস্পরিক সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে৷ গড়ে উঠেছে বহু উদ্যোগ৷ এ প্রসঙ্গে কপেল বলেন, ‘‘হামবুর্গের চিকিত্সা প্রযুক্তি এক্ষেত্রে এগিয়ে আছে৷ অর্থনীতি ও বিজ্ঞানের মধ্যে এরকম সহযোগিতমূলক কর্ম তত্পরতার নজির আর কোথাও নেই৷ এর ফলে উত্পাদনের গুণগত মান উন্নত হয়, বিশ্ববাজারে চাহিদাও বৃদ্ধি পায়৷''
গবেষণাগারের সামগ্রীর দিক দিয়ে ইউরোপের মধ্যে বিশাল বাজার জার্মানি৷ এ ক্ষেত্রে আলগোয়ের ভাল্ডনার কোম্পানির স্থান ইউরোপের মধ্যে প্রথম ও বিশ্বব্যাপী দ্বিতীয়৷ গত কয়েক বছরে ১৩ কোটি ইউরো বিক্রি করেছে এই ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটি৷ এ প্রসঙ্গে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলমুট হির্নার বলেন, ‘‘বিশ্বের বড় বড় ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান আমাদের গ্রাহক৷ যেমন ব্রিটেনের গ্লাসগোস্মিথক্লাইন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফিজার কোম্পানি৷ এছাড়া দেশের বেশ কিছু ডাকসাইটে গবেষণা প্রতিষ্ঠানও আমাদের ক্রেতা৷ এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ফ্রাউয়েনহোফার ইন্সটিটিউট, হাইডেলব্যার্গের ক্যানসার গবেষণা কেন্দ্র ও বড় বড় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কেন্দ্র ইত্যাদি৷''
বিদেশে বিক্রির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে
২০১০ সালে মোট বিক্রির অর্ধেকটাই হয়েছে বিদেশে৷ হেলমুট হের্নার জানান, ‘‘আমরা বছর দুয়েক আগে ভারতের মুম্বইয়ে একটি সমিতি গড়ে তুলেছি৷ কেননা গবষণাগারের বিভিন্ন সামগ্রীর দিক দিয়ে চীনের তুলনায় ভারতীয় বাজার অনেক বেশি শক্তিশালী৷ আমরা ভারত থেকে গোটা এশিয়ায় আমাদের উত্পাদন সামগ্রী রপ্তানি করতে চাই৷ সম্প্রতি দুবাইতেও আমরা একটি দপ্তর খুলেছি, আগামী ১০ বছরে আরব দেশের বাজারও ফুলেফেঁপে উঠবে বলে আমরা মনে করি৷''
সবশেষে বলা যায়, আগামী বছরগুলিতে স্বাস্থ্যকে ঘিরে ব্যবসা বাণিজ্য আরো প্রসারিত হবে৷ শিল্পোন্নত দেশের মানুষদের গড় আয়ু ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আরো বেশি অর্থ ব্যয় করতেও দ্বিধা করছেন না তাঁরা৷
প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক