চীনা প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফর
১২ অক্টোবর ২০১৬শুক্রবার ঢাকায় আসছেন শি জিনপিং৷ তাঁর এই সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চাইছে৷ চীন চাইছে তার প্রস্তাবিত রোড কানেকটিভিটিকে (সিল্ক রুট) সফল করতে৷ রবিবার বাংলাদেশের সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে এক বৈঠকের পর মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিক্যাট বলেন, ‘‘এটি একটি বড় ঘটনা৷ এ সফরে কী ঘটে সেটি আমরা কৌতূহল নিয়ে দেখছি৷'' আর আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষকরা মনে করেন, চীনা প্রেসিডেন্টের এই সফর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানেরও কৌতুহল আছে৷
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ সফরের মাধ্যমে অবকাঠামো, জ্বালানি, সন্ত্রাসবাদ দমন, যোগাযোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে দু'দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ তথ্য-প্রযুক্তি, সামুদ্রিক সহযোগিতা ও অন্য বিষয়গুলো প্রথমবারের মতো গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হবে৷ সফরের সময়ে ২০ বিলিয়ন ডলারের ২৫ টি চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে৷
এদিকে চীনের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী কং জুয়ানইউ দেশটির প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরের আগে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘চীনের প্রেসিডেন্টের সফরের সময়ে চীনের প্রস্তাবিত রোড ও বেল্ট উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য বেশ কিছু চুক্তি স্বাক্ষর করা হবে৷ এ চুক্তিগুলোর লক্ষ্য হচ্ছে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া ও ভারত মহাসাগর অঞ্চলে চীনের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার৷ এ সফর বাংলাদেশ-চীনের সম্পর্কের একটি মাইলফলক৷''
সাবেক কূটনীতিক এবং রাষ্ট্রদূত লিয়াকত আলী চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার চীন এবং ভবিষ্যতে এটি আরও বাড়বে৷ চীন ট্রেড , ইনভেস্টমেন্ট এবং কানেকটিভিটিকে গুরুত্ব দেয়৷ আর বাংলাদেশের সঙ্গে একটি কমপ্যাক্ট সহযোগিতার চুক্তি আগে থেকেই আছে৷ বাংলাদেশে বড় আকারে বিনিয়োগ করতে চায় চীন৷ তাই এই সফর বাংলাদেশ এবং চীন উভয় দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশের একটি ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব আছে৷ ছোট দেশ হলেও জনসংখ্যার কারণে বাজার বড়৷ বাংলাদেশে এই অঞ্চলের যে কানেকটিভিটির কথা বলা হচ্ছে, তার ‘হাব' হয়ে উঠবে কেন্দ্রে অবস্থানের কারণে৷ আর সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারে৷''
আর এ কারণে চীন বাংলাদেশের সঙ্গে সন্ত্রাস দমন চুক্তিও সই করতে চায়৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সূত্র জানায়, ‘‘সন্ত্রাস এখন একটি বৈশ্বিক সমস্যা এবং এটি প্রতিটি দেশকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে৷ এ প্রেক্ষাপটে দু'দেশ একটি সমঝোতা স্মারক সই করবে৷ তথ্য বিনিময়, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষনসহ বিভিন্ন বিষয় এ সমঝোতা স্মারকে থাকবে৷''
ঢাকা বিশববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষক ড, শান্তনূ মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলোর কাছে বাংলাদেশ এখন ভূরাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ দমনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে৷ যুক্তরাষ্ট্রের পর এখন চীনের মতো বড় শক্তিও বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিচ্ছে৷ তাই অনেকেরই দৃষ্টি এই সফরের দিকে৷ বাংলাদেশ এসব বিষয় নিয়ে এখন একটি ইউনিক অবস্থানে আছে৷''
তবে তিনি মনে করেন, ‘‘বাংলাদেশকে সতর্কও থাকতে হবে৷ কারণ এই সফরে অনেকগুলো অর্থনৈতিক চুক্তি হবে৷ ঋণ চুক্তি হবে৷ আমাদের বুঝতে হবে এগুলো অনুদান নয়, ঋণ৷ তাই ঋনের মধ্যে যদি অন্য কোনো প্যাকেজ থাকে, রাজনীতি থাকে তাহলে তা বুঝে শুনে গ্রহণ করতে হবে৷''
প্রসঙ্গত, গত ৩০ বছরে এটিই চীনের কোনো প্রেসিডেন্টের প্রথম বাংলাদেশ সফর৷ এর আগে ১৯৮৬ সালে চীনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লি শিয়াননিয়ান ঢাকা সফর করেন৷
২০১৪ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর করেন৷ সফরের সময়ে যৌথবিবৃতিতে বলা হয় দু'দেশ অংশীদারীত্ব এবং সহযোগিতার সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে৷
শি জিনপিং দু'দিনের সফরে কম্বোডিয়া থেকে ঢাকা আসছেন এবং এখান থেকে তিনি ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতে যাবেন৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷