চীনে আবর্জনা ও মানুষের সহাবস্থান
২৩ মে ২০১৮ভারত-বাংলাদেশে যা, চীনেও তাই: আবর্জনা আর প্লাস্টিকের স্তূপের উপর ‘শিশুরা করে খেলা’৷ আবর্জনা বেছে দিন গুজরান করেন এই মানুষেরা৷ ‘প্লাস্টিক চীন’ নামের একটি তথ্যচিত্র থেকে তার কিছুটা আন্দাজ পাওয়া যাবে৷
তথ্যচিত্র নির্মাতা ওয়াং জিউলিয়াং চার বছর ধরে চীনের ছোট ছোট ‘ল্যান্ডফিল’ – অর্থাৎ আবর্জনা ফেলার জায়গায় ক্যামেরা নিয়ে ঘোরেন এবং যা দেখেন, তা তাঁকে গভীরভাবে নাড়া দেয়৷
নিজের মেয়ের যদি এ অবস্থা হত
ওয়াং বললেন, ‘‘আমার নিজের একটি মেয়ে আছে৷ সে যে এ ধরনের পরিবেশে মানুষ হচ্ছে, তা আমি সহ্য করতে পারতাম না৷ কিন্তু এই সব বাচ্চাদের মধ্যে কয়েকজন আজন্ম এই আবর্জনার মধ্যে রয়েছে৷ বাচ্চাদের যে এই আবর্জনার মধ্যে বাঁচতে হচ্ছে, তা আমি চাই না৷’’
কিন্তু রিসাইক্লিং ব্যবসার অন্ধকার দিকটা হল তাই; যারা আবর্জনা বাছে, তাদের নানা ধরনের ঝুঁকি: বিষাক্ত গ্যাস বা অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়৷ ওয়াং যে সব বাচ্চাদের দেখেন, তাদের কয়েকজন ইস্কুল-পাঠশালার দুয়ার পর্যন্ত মাড়ায় না৷
যা রিসাইক্লিং করা যায় না, তা প্রায়ই মাঠেঘাটে গিয়ে পড়ে, ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত করে৷ জীবজন্তুরা অসুস্থ হয়ে পড়ে৷ কোথাও কোথাও আবর্জনার স্তূপে আগুন লেগে জ্বলতে থাকে৷ দুর্গন্ধে এখানে নিঃশ্বাস নেওয়া যায় না, মানুষ অসহায় বোধ করে: বাতাসে বিষ, পানিতে বিষ৷ একমাত্র ভালো দিকটা হল রোজগার৷
আবর্জনা আসে কোথা থেকে?
ছবি তুলতে গিয়ে ওয়াং আরেকটি মহাসত্য আবিষ্কার করেন: এই প্লাস্টিক আবর্জনার একটি বড় অংশ আসে বিদেশ থেকে৷
ওয়াং শোনালেন, ‘‘একদিন আমি হেবেই প্রদেশে একটি ময়লা ফেলার জায়গা দেখতে গিয়েছিলাম – সুবিশাল একটি ‘ল্যান্ডফিল’, চতুর্দিকে আবর্জনা৷ তারপর দেখলাম বহু প্যাকেট বা বোতলের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানি, ফ্রান্স ইত্যাদি দেশের ছাপ৷ তখন বুঝলাম যে, সারা দুনিয়ার আবর্জনা আমার সামনে পড়ে রয়েছে৷’’
চীন এযাবৎ বিশ্বের অর্ধেক আবর্জনা কিনে নিয়েছে৷ ওয়াং অ্যামেরিকাতেও ছবি তুলেছেন৷ চীনে মার্কিন রপ্তানির তালিকায় আবর্জনা রয়েছে ষষ্ঠ স্থানে৷ শুধুমাত্র জার্মানি থেকেই প্রতি বছর এক লাখ টনের বেশি প্লাস্টিক আবর্জনা চীনে পাঠানো হয়৷
কিন্তু এ বছরের শুরু থেকে চীন তথাকথিত বিদেশি আবর্জনা কেনা বন্ধ করেছে – সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার কল্যাণে৷
বিশিষ্ট পরিবেশ আন্দোলনকারী মা জুন-এর মতে, ‘‘রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার ফলে চীনে দূষিত আবর্জনার পরিমাণ হ্রাস পাবে – যা পরিবেশের পক্ষে শুভ৷ অপরদিকে এই নিষেধাজ্ঞার ফলে কাগজ বা প্লাস্টিকের মতো কাঁচামালের অভাব দেখা দিতে পারে৷’’
ইতিমধ্যে চীন নিজেই বড় বেশি আবর্জনা সৃষ্টি করছে – এছাড়া দেশে পরিবেশ সচেতনতাও বাড়ছে, সর্বত্র অত্যাধুনিক রিসাইক্লিং ও ময়লা পোড়ানোর ‘ইনসিনারেটর' তৈরি হচ্ছে৷ অপরদিকে যে ২৪ ধরনের আবর্জনা আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তার ফলে বহু দেশ এখন তাদের আবর্জনা নিয়ে বিপদে পড়েছে৷
মা জুন বললেন, ‘‘জার্মানি, ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ অথবা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ভেবে দেখতে হবে, বিশ্বের বাজারের উপর নির্ভর করে আবর্জনা শুধু রপ্তানি না করে কীভাবে নিজে থেকে এই আবর্জনা সমস্যার সমাধান করা যায়৷’’
চীনে ইন্টারনেটের ওপর কড়া সরকারি নিয়ন্ত্রণের দরুন ওয়াং জিউলিয়াং তাঁর তথ্যচিত্রে এর বেশি দেখাতে পারেননি৷ তবুও তাঁর তোলা ছবি চীনে মানসিকতা পরিবর্তনে অবদান রেখেছে বলে তাঁর বিশ্বাস – অন্তত মানুষজন বুঝতে পেরেছেন যে, এভাবে চলতে পারে না৷
মারিও স্মিট/এসি