চীনে এক সন্তান নীতি কতটা কার্যকর?
২০ জুলাই ২০১৮প্রায় চার দশক পর দুই সন্তান নীতি গ্রহণ করার পর ২০১৭ সালে দেশটিতে জন্মহার বেড়েছে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ৷ চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশন বলছে, ২০২০ সাল নাগাদ শিশু জন্মের হার ১ দশমিক ৭ থেকে ২ কোটিতে পৌঁছাবে৷ ২০৫০ সাল নাগাদ ৩ কোটি তরুণ যোগ দেবে চীনের জনশক্তিতে৷
এক সন্তান নীতির ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঠেকানো গেলেও একই সাথে কমেছে তরুণ ও যুবকদের সংখ্যাও৷ অন্যদিকে চীনের জনশক্তিতে বেড়েছে বয়স্কদের সংখ্যা৷
তবে দুই সন্তান নীতি চীনের এই সমস্যার দ্রুতই কোনো সমাধান আনতে পারছে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷ অস্ট্রেলিয়া ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এক গবেষণা বলছে, এক সন্তান নীতির পরিবর্তনে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে মোটে বার্ষিক ০ দশমিক ৫ শতাংশ৷ বয়স্কনির্ভরতা বাড়বে খুব বেশি হলে ০ দশমিক ০৩ শতাংশ৷
সাফল্য, নাকি ব্যর্থতা?
অনেকেই এক সন্তান নীতিকে চীনের বয়স্কনির্ভরতার জন্য দায়ী করলেও বিশ্লেষকরা বলছেন, গত তিন দশকে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি এই নীতি৷
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. ফ্যাং ওয়াং বলছেন, এই নীতির ফলে বাবা-মাকে সন্তানের পেছনে কম খরচ করতে হয়েছে, ফলে তাঁদের সঞ্চয় বেড়েছে৷ পাশাপাশি সন্তানের শিক্ষার পেছনে বাবা-মা খরচও বেশি করতে পেরেছেন, ফলে মানসম্মত শিক্ষাও নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে৷
ওয়াং ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই প্রজন্মের বেশিরভাগই উচ্চশিক্ষিত এবং তাঁরা অর্তনীতিতে বেশ কার্যকর ভূমিকা রেখে চলেছে৷''
তবে আছে এর বিপরীত দিকও৷ এক সন্তান নীতির ফলে প্রচুর পরিবার বাস্তবে সন্তানহীন হয়ে পড়েছে৷ বৃদ্ধ বয়সে দেখভাল করার মতোও কেউ থাকছে না৷ ফলে চীনের যে পারিবারিক ঐতিহ্য, তা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে৷
ওয়াং বলছেন, ‘‘এক সন্তান নীতির ফলে চীন স্বল্পমেয়াদি লাভ পেয়েছে, কিন্তু এটা অনেকটা পুকুর সেচে মাছ সংগ্রহের মতো৷ পানি না থাকলে এক সময় মাছই মিলবে না৷''
এক সন্তান নীতি বাস্তবায়নে উঠেছে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগও৷ দেশজুড়ে বলপূর্বক এই নীতি কার্যকর করা হয়৷ গত শতকের আশির দশকে এই নীতি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অনেক নারীকে গর্ভপাত করাতে বাধ্য করা হয়েছে, অনেককে বরণ করতে হয়েছে বন্ধ্যাত্ব৷
মানুষকে শুধুই সংখ্যা হিসেবে বিবেচনা করার এ পদ্ধতির নীতিগত বিরোধিতা করছেন গবেষকরাও৷ তাঁরা বলছেন, ১৯৭০ সালে দক্ষিণ কোরিয়া এবং ১৯৮০-তে ভারত জন্ম নিয়ন্ত্রণে জোর দিলেও কেউই ‘এক সন্তান নীতি' বাস্তবায়নের কথা চিন্তাও করেননি৷
স্বল্পমেয়াদি লাভের বদলে পরিবার, দেশ এবং সমাজে এর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, তাতে এই নীতি কোনো দেশের জন্যই অনুসরণীয় হওয়া উচিত না বলেও মত গবেষকদের৷
উইলিয়াম ইয়াং (তাইপে থেকে)/এডিকে