চুক্তি ছাড়াই সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি দিলো ব্রিটেন
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০চলতি সপ্তাহে প্রথমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, তারপর ব্রিটেন দুই পক্ষের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের রূপরেখা তুলে ধরেছে৷ ব্রেক্সিট প্রক্রিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন পর্যায় শেষ হবার পর ২০২১ সাল থেকে ব্রিটেন ও ইইউ-র মধ্যে বাণিজ্যসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সম্পর্ক কী হবে, আগামী সপ্তাহ থেকে সে বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা শুরু হবে৷ বৃহস্পতিবার লন্ডনে ব্রিটেনের সরকার আলোচনার যে ম্যানডেট প্রকাশ করেছে, তার ফলে সংঘাতের আশঙ্কা আরো জোরালো হলো৷
ব্রেক্সিট পুরোপুরি কার্যকর হবার পরও ব্রিটেন ইইউ-র বিধিনিয়ম মেনে চললে সেই রাষ্ট্রজোটের অভ্যন্তরীণ বাজারে অবাধ প্রবেশের প্রস্তাব দিয়েছে ইইউ৷ ব্রিটেন শুরুতেই সেই প্রস্তাব পুরোপুরি নাকচ করে দিয়েছে৷ অর্থাৎ, এমন শর্ত নিয়ে আলোচনা করতেই নারাজ বরিস জনসনের সরকার৷ ইইউ-র সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দরকষাকষি করতে আগ্রহ দেখালেও তার মৌলিক শর্ত মানতে নারাজ লন্ডন৷ ব্রেক্সিটের পর প্রধানমন্ত্রী জনসন ব্রিটেনের ‘সার্বভৌমত্ব' পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা করতে বদ্ধপরিকর৷ এমনকি নিজস্ব জলসীমানার মধ্যে মাছ ধরার অধিকার নিয়েও কড়া অবস্থান নিচ্ছে ব্রিটেন৷
ব্রিটেনের এই কড়া অবস্থানের প্রেক্ষিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়েছে, সবরকম পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে৷ এমনকি কোনো চুক্তি ছাড়াই ২০২১ সালে ব্রেক্সিট পুরোপুরি কার্যকর হতে পারে, এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছে না ব্রাসেলস৷ সে ক্ষেত্রে ব্রিটেনকে অন্য যে কোনো দেশের মতো শুল্ক দিয়ে ও অন্যান্য নিয়ম মেনে ইইউ-র সঙ্গে বাণিজ্য করতে হবে৷ ইইউ-র বহির্সীমানায় ব্রিটেনের ট্রাক, জাহাজ ইত্যাদি থামিয়ে নথিপত্র পরীক্ষা করা হবে৷ ব্রিটেনে রপ্তানির ক্ষেত্রে ইইউ-কেও সেই একই বাধার সম্মুখীন হতে হবে৷ ক্যানাডা ও ইইউ-র মধ্যে বাণিজ্যিক চুক্তির আদলে ব্রিটেনের সঙ্গে বোঝাপড়া চায় না ব্রাসেলস৷ ভৌগোলিক দূরত্ব ও নিবিড় অর্থনৈতিক সম্পর্কের কারণে ইইউ সেই পথে যেতে চায় না৷
ব্রিটেন এরই মধ্যে অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির উদ্যোগ শুরু করে দিয়েছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট লাইটহাইজার বৃহস্পতিবার লন্ডন সফর করেছেন৷ ব্রিটেনের সরকার তাঁকে জানিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিকে চূড়ান্ত অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে৷
জনসন সরকারের এমন বেপরোয়া মনোভাব নিয়ে ব্রিটেনের মধ্যেও দুশ্চিন্তা দেখা দিচ্ছে৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, এতকাল রপ্তানিবাণিজ্য ও আর্থিক পরিষেবার ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপর অনেকটা নির্ভরশীল থাকার পর কোনো বোঝাপড়া ছাড়াই আচমকা বিচ্ছেদের পরিণতি মোটেই সুখকর হবে না৷ বিরোধী পক্ষ এ কারণে সরকারের কড়া সমালোচনা করছে৷ বাণিজ্য ছাড়া অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিন্ন করলেও ব্রিটেনের মারাত্মক ক্ষতি হবে বলে তাঁরা সতর্ক করে দিয়েছেন৷ ব্রিটেন ইউরোপীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কাঠামো ত্যাগ করায় এমন আশঙ্কা আরো জোরালো হচ্ছে৷
এসবি/কেএম (এএফপি, এপি)