চেক প্রজাতন্ত্র ঘুরতে গেলে যা জানতে হবে
শুধু রাজধানীর সৌন্দর্য্যই নয়, প্রাগ থেকে পিলসেন পর্যন্ত চেক প্রজাতন্ত্রে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে ঐতিহাসিক স্পা কালচার, বিস্তৃত পর্বতের জগত, আধুনিক স্থাপত্যকলা ও ঐহিত্যগত বিয়ারের স্বাদ৷
প্রাগ– পুরাতনের বেঁচে থাকা
রাজধানী প্রাগ হলো চেক রিপাবলিকের কেন্দ্রবিন্দু৷ একে সোনালি শহর বলা হয়৷ কারণ, এখানে ৫শ’রও বেশি সোনালি ডোম আছে৷ গোথিক ও বারোক ধরনের স্থাপত্যে ভরপুর শহরটি৷ সেই মধ্যযুগ থেকেই প্রাগ ইউরোপের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র৷ আজ পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষ দশ ইউরোপীয় শহরের একটি প্রাগ৷
চার্লস ব্রিজ– যেখানে পর্যটকদের ঢল
১৪শ’ শতকের ব্রিজটি প্রাগ শহরের একটি বিশেষ প্রতীক৷ ভ্লাতাভা নদীর ওপরে তৈরি এই সেতু দুর্গের সঙ্গে পুরোনো শহরের সংযোগ করে৷ দিনের বেলা এই ব্রিজটি যেন একটি আর্ট গ্যালারি৷ এখানে ৩০টি বারোক মূর্তি আছে৷
বোহেমিয়ান স্বর্গ
ঐতিহাসিক মোরাভিয়া ও সিলেসিয়ার সঙ্গে আজকের চেক রিপাবলিকে আছে বোহেমিয়া অঞ্চল৷ বোহেমিয়ান স্বর্গ নামে পরিচিত এই অঞ্চলে পাথুরে পাহাড়ি পথ আর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা দুর্গ ও প্রাসাদ হাইকিংয়ের আদর্শ জায়গা করেছে একে৷ কোনো কোনো দুর্গ এখন হোটেলে রূপান্তরিত হয়েছে৷ তাই ইতিহাসের সাক্ষী হতে এখানে থাকা যেতেই পারে৷
ছোট-বড় পর্বতগুলো
দেশটির উত্তর দিকে চোখে পড়বে বিরাট বিরাট পর্বতের সারি৷ ১৯৫৩ সাল থেকে এটি ন্যাশনাল পার্ক৷ বিশেষ করে বরফ পড়ার সময় স্কিসহ বিভিন্ন শীতকালীন খেলার জন্য এই জায়গাটি পর্যটকদের খুব পছন্দ৷ এছাড়া আছে থাকার চমৎকার সব জায়গা৷ তবে পাহাড়ি এই এলাকাটির ব্যাপ্তি খুব বেশি নয়৷ মাত্র ৩৬ কিলোমিটার৷
বোহেমিয়ান সুইজারল্যান্ড
এটি বেলেপাথরের পর্বতমালা৷ জার্মানির অংশে একে বলা হয় স্যাক্সন সুইজারল্যান্ড৷ পর্যটকদের কাছে এই জায়গাটিও খুব প্রিয়৷ ইউরোপের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বেলেপাথরের সেতু আছে এখানে৷ তবে ব্রিজটিতে এখন যাওয়া যায় না৷
নিরাময়ের আশায় গোসল
বোহেমিয়াতে স্বাস্থ্যকর স্পা’র ঐতিহ্য বহু পুরোনো৷ স্পা-কে কেন্দ্র করে এখানে অনেক বিখ্যাত রিসোর্ট গড়ে উঠেছে৷ মধ্যযুগ থেকে পানির খনিজ উপাদান ও ৬০ ডিগ্রি বা তার বেশি তাপমাত্রা গোসলের মাধ্যমে নিরাময়ের একটি সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে এখানে৷
প্রাসাদ ও দুর্গ
প্রাগের প্রাসাদ ও দুর্গের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি৷ দেশটিতে দুই হাজারেরও বেশি এমন স্থাপনা আছে৷ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের লেডনিসে ক্যাসেল এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়৷ এটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ৷ ১৭শ’ শতকে স্থাপিত এই অংশটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় পার্ক ল্যান্ডস্কেপ৷
ঐতিহাসিক শহর– তেল্চ
দক্ষিণের পুরোনো শহর তেল্চ ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত৷ রেনেসাঁ ও বারোক যুগের স্থাপত্যকলায় নির্মিত টাউন হাউসে ঘেরা এই শহরটি খুবই সুন্দর৷ এখানে একটি চমৎকার ক্যাসেলও আছে৷
আধুনিক যুগের স্থাপত্য
প্রাগের পর দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বির্নো৷ সেখানে আধুনিক যুগের বিশ্বসেরা স্থাপত্য শোভা পাচ্ছে৷ ১৯২৮ সালে জার্মান স্থপতি লুডভিগ মিজ ফান ড্যের রোহে ভিলা টুগেন্ডহাট নির্মাণ করেন৷ সেই থেকে শুরু৷ আধুনিক স্থাপত্যকলার অন্যতম স্থান বলা হয় এই শহরটিকে৷
চেক বিয়ার
বুডভাইজার, স্টারোপ্রামেন, গামব্রিনুজ বা পিলসনার উরকুয়েল, এমন নানা প্রকারের চেক বিয়ার বিশ্ববিখ্যাত৷ বোহেমিয়াতে শতকের পর শতক ধরে বিয়ার তৈরি করা হয়৷ এটা এতই ভালো যে, বিয়ার এখন দেশটির প্রধান পানীয়তে পরিণত হয়েছে৷ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিয়ার পান করা হয় এই দেশটিতে৷ তাই বিয়ার ভালোবাসেন যাঁরা, তাঁদের জন্য চেক প্রজাতন্ত্র ভ্রমণ করবার এটিও একটি কারণ হতে পারে৷