শিল্প ও সৃজনশীলতা
২৮ জুন ২০১৩দেখলে বিস্মিত হয়৷ চিত্রকলার ইতিহাস থেকে উঠে আসা জীবজন্তু৷ তবে ভাঙা কাচের টুকরো দিয়ে গড়া৷ প্রখ্যাত ডাচ চিত্রশিল্পী পিটার পল রুবেন্স-এর ছবিতে আছে একটি সারমেয়৷ চারশো বছরের পুরানো ছবি৷ পোলিশ ভাস্কর মার্তা ক্লোনোভস্কা সেই কুকুরটিকে আবার জাগিয়ে তুলেছেন – ভাঙা কাচের মধ্যে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি অতীতের ওস্তাদ চিত্রশিল্পীদের ছবির প্রদর্শনীতে যেতে খুব ভালোবাসি৷ সেখানে প্রতিবারই নতুন কিছু আবিষ্কার করা যায়৷ তারপর একদিন ভাবলাম, এই ছবিগুলো থেকে কোনো একটা ‘মোটিভ' নিয়ে সেটাকে আবার নতুন করে পরিবেশন করলে কেমন হয়?''
মার্তা ক্লোনোভস্কা পুরনো, সুবিখ্যাত সব ছবি থেকে শুধু জীবজন্তুদের বেছে নেন, তাদের নতুন রূপ দেন৷ মূল ছবির নগণ্য এই সব খুঁটিনাটি মার্তার ভাস্কর্যে মুখ্য হয়ে ওঠে৷ যেমন ফরাসি চিত্রশিল্পী ক্লোদ লুই দেসরে-র ছবির একটি কুকুর৷ তার মালিকের জুতোজোড়াও কিন্তু মার্তা রেখেছেন তাঁর ভাস্কর্যে৷
গ্যালারিস্ট হান্স-মার্টিন লর্শ বলেন, ‘‘গোটা বার্লিন ঘুরলে কাচের শিল্পকলার একটি বা দু'টি প্রদর্শনী পাবেন৷ কিন্তু প্রচলিত চিত্রকলা, আলোকচিত্র, ভিডিও, অন্যান্য নানা ইনস্টলেশন – এ সবের শত শত প্রদর্শনী পাবেন৷ আসলে কাচের শিল্পকলা দুষ্প্রাপ্য বলেই তা এতোটা ইন্টারেস্টিং৷''
মার্তা ক্লোনোভস্কা তাঁর ভাস্কর্যের জন্য বিভিন্ন ধরনের জীবজন্তু বেছে নেন – যেমন একটি ছাগল৷ বেলজিয়ামের চিত্রশিল্পী আলেক্সান্ডার কেরিঙ্কস ১৬৩০ সালে এই অতি খুদে ছাগলটিকে এঁকেছিলেন৷
মার্তা মিউজিয়ামগুলোতে ঘুরে ঘুরে তাঁর আইডিয়া সংগ্রহ করেন৷ যেমন ড্যুসেলডর্ফ-এর কুনস্টপালাস্ট মিউজিয়ামে৷ তিনি আর্ট নিয়েই এককালে পড়াশুনো করেছিলেন৷ আজ পঞ্চাশ ছুঁই-ছুঁই, কিন্তু ব্যারক চিত্রকলায় আগের মতোই আগ্রহী৷ যেমন রুবেন্স-এর ছবিতে একটি কুকুরের দাপট তার প্রভুর দাপটেরই প্রতিচ্ছবি৷ তিনি বলেন, ‘‘এ সব ফোটোগ্রাফির যুগের আগের বিষয়৷ সেকালে মানুষ চাইতো সব কিছু আঁকা হোক, সঠিকভাবে দেখানো হোক, ছবিতে ধরে রাখা হোক৷ সেটা তারা ভালোমনেই করতো৷ বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতি, বিশেষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দেখাতো৷ এভাবেই ছবিগুলো আঁকা হতো৷''
মার্তা তাঁর ড্যুসেলডর্ফ-এর স্টুডিওয় একটি নতুন ভাস্কর্য নিয়ে কাজ করছেন৷ এটি দেখানো হবে ভেনিসের একটি প্রদর্শনীতে৷ মোটিভ হিসেবে মার্তা ডাচ আঁকিয়ে ফ্রানস স্নাইডার্স-এর একটি স্টিল লাইফ থেকে একটি কাঠবিড়ালিটি বেছে নিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘কাঠবিড়ালি একটি ছোট্ট, নিরীহ প্রাণী বলেই ধরে নেওয়া হয়৷ কিন্তু আসলে সে একটি মাংসাশী পশু, বড় করে দেখলেই বোঝা যায়৷ ওর মুখের ভাবটা ভয় পাবার মতো! আমি কাঠবিড়ালির আদুরে, পোষ্য ভাবটি কমিয়ে তাকে বিমূর্ত করে তুলতে চাই, বিরাট করে দেখাতে চাই৷''
ভাঙা কাচ দিয়ে একটি কাঠবিড়ালি বানাতে তিন মাস অবধি সময় লাগে৷ প্রথমে মার্তা লোহার রড দিয়ে একটি খাঁচা বানান, তাঁর আগের করা স্কেচ অনুযায়ী৷ কাচের পাত ভেঙে খোঁচা খোঁচা টুকরোগুলো তৈরি করে নেন৷ তারপরে সেই টুকরোগুলো এঁটে এঁটে মূর্তিটা ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে৷ আবার হাত কেটে যাওয়ারও ভয় থাকে! মার্তা বলেন, ‘‘ঠিক সময়ে কাজ বন্ধ করা দরকার৷ খুব ক্লান্ত হয়ে পড়লে আর কাজে মন দেওয়া যায় না৷ তখন মানুষ অনেক কিছু করে বসে, যা একেবারেই করা উচিত নয়৷ ওভাবেই হাত কাটে৷''
এখনো পর্যন্ত মার্তা ক্লোনোভস্কার ভাঙা কাচে হাত কাটেনি৷ অন্যদিকে তাঁর কাচের ভাস্কর্য নিয়ে বার্লিনে এখন প্রদর্শনী চলেছে৷ বহু শতাব্দীর চিত্রকলার ইতিহাস থেকে উঠে আসা হালের নানা ভাস্কর্য৷
এসি / এসবি