1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাহসিকতার দৃষ্টান্ত

১৫ জুন ২০১৩

কোনো কাজেরই ছিল না মেয়েটি৷ নয়টি ছাগল চড়ানোর দায়িত্ব দেয়া হলো৷ সব গেল হায়নার পেটে৷ বাবা ভাবছিলেন, ‘‘এ মেয়েকে কোনো বুড়োর সঙ্গে বিয়ে দিয়ে যদি বাঁচা যায়!'' কেনিয়ার সেই মেয়ে জেন মেরিওয়াস এখন প্রাণ বাঁচান দুঃখী মেয়েদের৷

https://p.dw.com/p/18qKC
ছবি: picture alliance / Kai-Uwe Wärner

কেনিয়ার সমতল অঞ্চল কিপসিংয়ের সামবুরু জনগোষ্ঠীতে দুঃখী মেয়ে কে নয় বলা কঠিন৷ মেয়েরা শুধুই যেন পুরুষের ভোগসামগ্রী৷ নারী সেখানে প্রতিবাদী হবে কী, চার কোটিরও বেশি মানুষের দেশের শতকরা এক দশমিক ছয় ভাগ এই সামবুরু সমাজের পশ্চাৎপদতা এত স্বাভাবিক যে চলমানকে অলংঘ্য মেনে নারীও দাঁড়ায় নারীর বিরুদ্ধে৷

গরিব বাবার নয়টি ছাগলের একটিকেও হায়নার কবল থেকে বাঁচাতে না পেরে নয় বছর বয়সেই জেন মেরিওয়াস হয়েছিল কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন৷ বাবার সম্পদ বিনষ্ট হয়েছে, তার জন্য সে দায়ী, সুতরাং ক্ষতিপূরণও দিতে হবে তাকে৷ বিয়ে দিলে যৌতুক হিসেবে টাকা পাওয়া যাবে৷ যত বুড়ো বর তত বেশি যৌতুক৷ বুড়ো বর ধরতেও অকাজের মেয়েটিকে কিছুটা কাজের বানাতে হয় বলেই মেরিওয়াসকে দেয়া হলো স্কুলে৷ গাছতলার স্কুল৷ খ্রিষ্টান যাজক এসে পড়ান৷ মেরিওয়াস সেই যে লেখাপড়া শুরু করে আলোর পথে গেলেন আজও সেই পথ ছাড়েননি৷

Kenia Aufklärung Weibliche Genitalverstümmelung Beschneidung
আফ্রিকার অনেক দেশে জনন অঙ্গচ্ছেদ আজও বড় সমস্যাছবি: picture-alliance/dpa

লেখাপড়া খুব বেশি করেননি৷ তাতে কী, কলেজপর্ব পেরিয়েই নির্মম কুসংস্কারের আঁধারে ঢাকা কিপসিংয়ে ফিরে যে কাজ করছেন তা কজন উচ্চশিক্ষাপ্রাপ্ত করতে পারেন! মূলত গবাদি পশুপালক সামবুরুদের প্রাচীন কাল থেকে ধরে রাখা অদ্ভুত সব নিয়মের শৃঙ্খল ছিড়ে বের করা প্রায় অসম্ভব৷ সেখানে মেয়েদের কী দশা তা বুঝতে জনন অঙ্গচ্ছেদ (এফজিএম)-এর হারে একটু চোখ রাখুন৷ জেনে অবাক হবেন, সামবুরু নারীদের একশজনের মধ্যে একশজনেরই একটা সময় বাধ্য হয়ে জননাঙ্গ ফেলে দিতে হয়৷

গর্ভপাতের হারও ভয়ঙ্কর৷ না হয়ে উপায়ও নেই৷ সেখানে একটা ছেলে জীবনে নারীকে পেয়ে যায় খেলাচ্ছলে৷ সামবুরুদের মধ্যে যাঁরা যোদ্ধা তাঁদের বলা হয় মোরান৷ মোরান পুরুষ যদি ১০ কেজি পুঁতি কিনে তা দিয়ে একটা মালা তৈরি করে কোনো মেয়েকে পরায় সঙ্গে সঙ্গেই সেই মেয়েটি তার৷ এভাবে ৯ থেকে ১৫ বছর বয়সি মেয়েরা মোরানদের অবাধ যৌনাচারের শিকার হয়ে কয়েকদিনের মধ্যেই গর্ভধারন করে৷ যে সমাজ এমন অপনিয়মের ধারক সেই সমাজই তখন দাঁড়িয়ে যায় মেয়েটির বিরুদ্ধে৷ মেয়েটির কোনো নিকটাত্মীয়া তাকে ধরে নিয়ে যায় জঙ্গলে৷ সেখানে নিয়ে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে চেপে ধরে মেয়েটির পেট৷ যন্ত্রণায় নীল মেয়েটি দেখে তার শরীর থেকে নেমে যাচ্ছে রক্তের ধারা, যার মানে পৃথিবীর আলো দেখার অনেক আগেই সন্তানটি শেষ৷ পেট চেপেও যদি ভ্রুণ হত্যা না করা যায়, তাহলে বিষপ্রয়োগ৷ কিশোরী মা রাজি নয়? তাহলে ঘরের গোপন কোণে ভূমিষ্ঠ হবে সন্তান, তাকে পাশে রেখে মা ঘুমাবে, সুযোগ বুঝে টুপ করে শিশুটিকে তুলে রাতের আঁধারে রেখে আসা হবে জঙ্গলে৷ সদ্যজাত মানবশিশু তখন হায়নাদের জন্য পরিবেশন করা খাবার!

জেন মেরিওয়াস নিজের যৌনাঙ্গ রক্ষা করতে পারেননি৷ তবে লেখাপড়া কিছুটা শিখে নিজের এলাকায় ফিরে নেমেছেন সচেতনতা বাড়ানোর কাজে৷ অন্য মেয়েদের জননাঙ্গ রক্ষা, গর্ভপাতরোধসহ অনেক কর্মকাণ্ডে মেরিওয়াস এখন পরিচিত মুখ৷ মেয়েদের মধ্যে শিক্ষা এবং পরিবেশ সচেতনতার আলো ছড়াতে প্রতিষ্ঠা করেছেন সামবুরু উয়োম্যান ফর এডুকেশন অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট অরগ্যানাইজেশন৷ বাবার ছাগল বাঁচাতে পারেননি, এখন মানুষ বাঁচাচ্ছেন জেন মেরিওয়াস৷

এসিবি/ডিজি (আইপিএস)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য