ছাত্র রাজনীতিতে ভয়?
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮কলকাতার প্রেসিডেন্সি ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগাতার ছাত্র আন্দোলনের জেরে তিতিবিরক্ত র রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী৷ সম্প্রতি রাজভবনে রাজ্যের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জির সঙ্গে এক বৈঠকে রাজ্যপাল স্পষ্টই নিজের অসন্তোষ প্রকাশ করেন৷ বলেন, শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতির অনুপ্রবেশ কাম্য নয়৷ ছাত্র সংগঠন গঠন এবং আন্দোলনের অধিকার থাকা উচিত নয়৷
এই প্রসঙ্গে উত্তর প্রদেশে চৌধুরি চরণ সিং মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন যে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেই ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দেন রাজ্যপাল ত্রিপাঠী৷ যদিও প্রায় একই সঙ্গে তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে তিনি তেমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুপারিশ করছেন না৷ কিন্তু বলা বাহুল্য, যে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের পদ থেকে এমন এক ইঙ্গিত আসা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পক্ষে আদৌ সুলক্ষণ নয়৷ বিশেষত যেখানে প্রবেশিকা পরীক্ষা থেকে শুরু করে হস্টেলে জায়গা পাওয়া, বা জীর্ণ হস্টেলের মেরামতি, সবেতেই শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের পথে হাঁটতে হচ্ছে ছাত্রদের৷ রাজ্যপালের সর্বশেষ বিরক্তির কারণ, হিন্দু হস্টেলের সংস্কারের দাবিতে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলন এবং তার জেরে এ বছর প্রেসিডেন্সির সমাবর্তন উৎসব কার্যত পণ্ড হওয়া৷
এবং এমনও মনে হতে পারে, যে রাজ্যপাল ত্রিপাঠী নেহাতই অভিভাবকসুলভ উদ্বেগ থেকে পড়ুয়াদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চাইছেন৷ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে কেবল পড়াশোনাই হয়, সেটা নিশ্চিত করাই তাঁর মূল উদ্দেশ্য৷
কিন্তু ব্যাপারটা সম্ভবত অতটা সহজ-সরল নয়, বলছেন প্রেসিডেন্সি,যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান এবং প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীরা৷ বরং তাঁরা এর মধ্যে গেরুয়া রাজনীতির দাপট কায়েম করার চেষ্টা দেখছেন, যার বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের অরাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলো, যারা প্রবণতার বিচারে বামপন্থি৷ এবং ওঁদের বক্তব্য, ঠিক যে কারণে দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় শাসক বিজেপির চক্ষুশূল, কারণ সেখানে বামপন্থার প্রভাব বেশি, ঠিক সেই কারণেই যাদবপুর এবং প্রেসিডেন্সি অপছন্দের৷ এবং রাজ্যপাল স্পষ্টতই বিজেপি তথা কেন্দ্র সরকারের নিযুক্ত লোক, যিনি ছাত্র রাজনীতির ওই বামপন্থি প্রবণতা আটকাতে চাইছেন ভাল পড়াশোনা হওয়ার দোহাই দিয়ে৷ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র উদ্দালক ভট্টাচার্য সাম্প্রতিক অতীতে অনেক ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন৷ তাঁর খুব সোজাসাপ্টা বক্তব্য, যে ‘‘এটা নতুন কিছু কথা নয়৷ এর আগেও বহু বার, বহু লোক একই কথা বলেছেন যে ছাত্র আন্দোলন করলে, ছাত্র রাজনীতি করলে পড়াশোনা নষ্ট হয়৷ কিন্তু দিনের পর দিন ধরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় তার উৎকর্ষ ধরে রেখেছে৷ সেটা পড়াশোনার নিরিখে, এবং ‘ন্যাক', ‘ইউজিসি' দিনের পর দিন ধরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে উৎকর্ষের প্রশংসাপত্র দিয়েছে৷ সুতরাং ছাত্র রাজনীতি কোনোভাবে পড়াশোনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, এটা আমার মনে হয় না৷''
প্রসঙ্গত সারা দেশ এমনকি বিশ্বেরও বহু দেশের উদাহরণ টেনেছেন উদ্দালক, যেখানে আজকের রাজনৈতিক নেতারা উঠে এসেছেন অতীতের ছাত্র আন্দোলন থেকে৷ হতে পারে, সেই সম্ভাবনাকেই ভয় পাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল এবং তাদের নেতারা৷ ভয় পাচ্ছেন দেশের ক্রমশ বিদ্রোহী হয়ে ওঠা যুবশক্তিকে৷ যেভাবেজওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়বা জেএনইউ-র কানহাইয়া কুমার, বা গুজরাটে হার্দিক প্যাটেলের মতো নবীন নেতারা উঠে এসেছেন যুব আন্দোলন থেকে এবং কার্যত শাসকের ঘুম কেড়ে নিয়েছেন৷ কখনও আরবান নক্সাল, কখনও দেশদ্রোহী তকমা দিয়েও তাঁদের ঠেকিয়ে রাখা যায়নি৷