ছুটিতেও সময় নেই টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি কাইজার্সলাউটার্নের শিক্ষার্থীদের
১০ জানুয়ারি ২০১১টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি কাইজার্সলাউটার্ন প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭০ সালে৷ বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে প্রায় ১২ হাজার ছাত্র-ছাত্রী৷ সবমিলে ১০টি অনুষদ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ এই অনুষদগুলোর অধীনে বিভিন্ন বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন, মাস্টার্স এবং পিএইচডি করার সুযোগ দিচ্ছে টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি কাইজার্সলাউটার্ন৷ তুলনামূলকভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে ছোট কিন্তু গবেষণা এংব স্নাতক কোর্সে পড়াশোনার জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুনাম কুড়িয়েছে টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি কাইজার্সলাউটার্ন৷
টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি কাইজার্সলাউটার্নে গ্র্যাজুয়েশন করা যায় কোন খরচ ছাড়াই৷ তবে মাস্টার্স কোর্সে টিউশন ফির প্রবর্তন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি৷ আবার পিএইচডি-র কোর্সেও কোন ফি নেই৷ মাস্টার্স কোর্সের ফি দু'রকম৷ তিন সেমেস্টার অর্থাৎ ১৮ মাসের কোর্সের ফি ১৯৫০ ইউরো এবং চার সেমেস্টার অর্থাৎ দুই বছরের কোর্সের ফি ২৬০০ ইউরো৷
মারিয়াপ্পান টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি কাইজার্সলাউটার্নে পিএইচডি করছেন৷ তিনি বৃত্তি পেয়েছেন ডিএএডি থেকে৷ দু'বছর তাঁকে জার্মানিতে থাকতে হবে৷ মারিয়াপ্পান তাঁর পিএইচডি-র কাজ শুরু করেছেন ভারতের চেন্নাইয়ে, টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট মাদ্রাজে৷ জার্মানিতে তিনি দু'বছর গবেষণা করবেন৷ তিনি এসেছেন ডিএএডি-র স্যান্ডউইচ মডেল প্রোগ্রামে৷ স্যান্ডউইচ মডেলের কর্মসূচিতে পিএইচডি-র কিছুটা সময় নিজের দেশে এবং কিছুটা সময় জার্মানিতে কোর্স করার সুযোগ দেয় ডিএএডি৷
মারিয়াপ্পান পিএইচডি করছেন গণিত বিষয় নিয়ে৷ কাইজার্সলাউটার্ন শহর সম্পর্কে তিনি বললেন, ‘‘শহরটি খুবই ছোট এবং ছবির মত সুন্দর৷ এর আগে অবশ্য আমাকে ভাষা শিক্ষার জন্য মানহাইমে থাকতে হয়েছিল৷ এই শহরটি ছোট হওয়ার কারণে পায়ে হেঁটেই সব জায়গায় যাওয়া যায়৷ এটা আমার কাছে বেশ ভাল লাগে৷ তবে ঘোরাঘুরির বেশি সময় আমি পাই না৷ বেশিরভাগ সময়ই আমাকে গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়৷''
বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে তিনি জানান, এই বিশ্ববিদ্যালয়টি গবেষণার জন্য খুবই ভাল৷ তাঁর সহকর্মীরা এবং সুপারভাইজার অত্যন্ত বন্ধুসুলভ৷ সবাই সবাইকে সাহায্য করে৷ কোন সমস্যা হলেই যে কেউ এগিয়ে আসে৷ তাঁর সুপারভাইজার সবসময়ই তার গবেষণার ওপর নজর রাখছেন, প্রতিনিয়ত সাহায্য করছেন, হাসিমুখে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন৷
মারিয়াপ্পান ডিএএডি থেকে বৃত্তি পেয়েছেন৷ ডিএএডি-র বৃত্তি পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বললেন, ‘‘আসলে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ টেকনলজি মাদ্রাজের অনেক ছাত্র-ছাত্রী জার্মনিতে এসেছে গবেষণার জন্য৷ এবং সবাই ডিএএডি থেকে বৃত্তি পেয়েছে৷ মূলত তাদের কাছ থেকেই আমি এখানে বৃত্তিসহ পিএইচডির সুযোগ সুবিধার কথা শুনি৷ আমার সিনিয়র সহকর্মীদের অনেকেই টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি কাইজার্সলাউটার্নে পিএইচডি করেছেন৷ ওঁরাই আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার জন্য৷ তখন আমি খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করি, আবেদন করি৷ আমার ইন্টারভিউ নেওয়া হয় দিল্লিতে৷ এরপর আমাকে বেছে নেওয়া হয়৷''
মারিয়াপ্পান জার্মান শিখেছেন ভারতে৷ ডিএএডি প্রথমে ভারতে দু'মাসের জন্য একটি কোর্সের ব্যবস্থা করে৷ এরপর আরকটি চার মাসের কোর্স জার্মানির মানহাইম শহরে৷ বৃত্তি প্রসঙ্গে তিনি জানান, বিদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের এই বৃত্তি ভীষণভাবে সাহায্য করে৷ কারণ প্রতিমাসে যে অর্থ হাতে দেওয়া হয় তা দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে মাস কাটানো যায়৷
যেসব ছাত্র-ছাত্রী জার্মানিতে উচ্চশিক্ষার জন্য আসতে চান তাদের উদ্দেশ্যে মারিয়াপ্পানের পরামর্শ,
‘‘জার্মানিতে গবেষণার মান বেশ ভাল৷ ভারত-বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে এই সূক্ষ্মভাবে গবেষণার সুযোগ নেই৷ কারণ, সেখানে ইন্টারনেট ল্যাব এমনকি প্রয়োজনীয় বইও মাঝে মাঝে পাওয়া যায় না৷ তবে এখানে আসার আগে অত্যন্ত পরিশ্রম করতে হবে, নিজেকে যোগ্য করে তোলার জন্য৷ তা সে রিসার্চ প্রপোজাল তৈরি করা হোক বা পিএইচডি-র স্যান্ডউইচ মডেলে আসা হোক৷ কারণ এখানে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর মাঝে সুযোগ পাওয়া সহজ নয়৷''
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক