জাপান
২৭ ডিসেম্বর ২০১২২০০৬ সালে জাপানের সবচেয়ে কম বয়সি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শিনজো আবে৷ কিন্তু বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারেন নি তিনি৷ দায়িত্ব নেয়ার পর জনপ্রিয়তায় ব্যাপক হ্রাস, তার প্রতিক্রিয়ায় সংসদের উচ্চকক্ষ নির্বাচনে দলের পরাজয়, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের দুর্নীতি, নিজের দুর্বল শরীর – সব মিলিয়ে মাত্র এক বছর পরই তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন৷
সেই থেকেই শুরু৷ এরপর একে একে প্রায় প্রতি বছরই জাপান পেয়েছে একজন করে নতুন প্রধানমন্ত্রী৷ শিনজো আবের এবারের নিয়োগটা সেই ধারা বন্ধ করতে পারে কিনা – সেটা এখন দেখার বিষয়৷ তাই এবার সাবধানে পথ চলতে চান শিনজো আবে৷ আগামী বছর গ্রীষ্মে রয়েছে সংসদের উচ্চকক্ষ নির্বাচন৷ তার আগে তিনি নিতে চান না কঠোর কোনো সিদ্ধান্ত৷
এবার দায়িত্ব নেয়ার পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জাপানের অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে দু'জন মন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন আবে৷ একজন হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী আসো তারো৷ তাঁকে এবার অর্থমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷ এছাড়া ‘অর্থনীতি পুনরুদ্ধার' নামে নতুন একটি মন্ত্রণালয় গঠনের সিদ্ধান্তও নিয়েছেন শিনজো আবে৷ সেখানে নিয়োগ দেয়া হয়েছে সাবেক শিল্পমন্ত্রী আকিরা আমারিকে৷
বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন আবের নতুন মেয়াদের একটা বড় লক্ষ্য৷ বিশেষ করে পূর্ব চীন সাগরের কয়েকটি দ্বীপের মালিকানা নিয়ে সাম্প্রতিককালে চীন ও জাপানের সম্পর্কে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে৷ চীনে জাপানি পণ্য বর্জনের ঘটনাও ঘটেছে৷ এমন পরিস্থিতির উন্নতি করতে চান শিনজো আবে৷ তাই তো তিনি বলেছেন, চীনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি তিনি চান না৷ তবে একই সঙ্গে তিনি এও বলেছেন, ‘‘পূর্ব চীন সাগরে জাপান নিয়ন্ত্রিত দ্বীপগুলোর মালিক জাপান৷ সুতরাং, এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেয়া হবে না৷''
উত্তর কোরিয়া প্রসঙ্গে শক্ত অবস্থান নিয়ে শিনজো আবে জনপ্রিয় হয়েছিলেন এক সময়৷ তবে আবারো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর, আবের ভূমিকা কি হবে সেটা এখনো জানা যায়নি৷
এদিকে, আরেক প্রতিবেশী দেশ দক্ষিণ কোরিয়াতেও নতুন নেতৃত্ব এসেছে৷ সেখানে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন পাক গুন-শিয়ে৷ চীনের মতো দ্বীপ নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গেও জাপানের সম্পর্ক শীতল হয়েছে এ বছর৷ আর সেটা কাটাতে দক্ষিণ কোরিয়ায় একজন প্রতিনিধি পাঠানোর কথা জানিয়েছেন আবে৷
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে ওয়াশিংটন যাবার পরিকল্পনাও করছেন জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী৷ সেসময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে বৈঠকের কথা ভাবছেন তিনি৷
প্রসঙ্গত, বর্তমানে ৫৮ বছর বয়সি শিনজো আবের দাদা নোবুসুকে কিসি ছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময়কার মন্ত্রী৷ পরবর্তীতে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে কিছুকাল কারাগারেও কাটাতে হয়েছে তাঁকে৷ এরপর অবশ্য জাপানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন কিসি৷ আর শিনজো আবের বাবা শিনতারো আবে অবশ্য প্রধানমন্ত্রীত্ব পান নি কখনো৷ তিনি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ ১৯৯৩ সালে বাবার মৃত্যুর পর তাঁর আসনেই নির্বাচিত হন শিনজো আবে৷
এরকম ঐতিহ্যবাহী পরিবারে যাঁর জন্ম, সেই শিনজো আবে তাঁর প্রথম মেয়াদে সফল না হলেও এবার তিনি উতরে যাবেন, সেই আশা অনেকের৷ কেননা এবার তাঁর সঙ্গে রয়েছে দুই তৃতীয়াংশ সাংসদের সমর্থন৷
জেডএইচ/ডিজি (এএফপি, রয়টার্স, ডিপিএ)