1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জঙ্গিবাদ নির্মূলে ৫৫টি রাষ্ট্রের প্রতি হাসিনার আহ্বান

২২ মে ২০১৭

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরব-ইসলামিক-অ্যামেরিকান সম্মেলনে যোগ দিয়ে সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসে অস্ত্র এবং অর্থ জোগান বন্ধে বৈশ্বিক উদ্যোগের আহ্বান জানিয়েছেন৷

https://p.dw.com/p/2dOBu
Sheikh Hasina Wajed Premierminister Bangladesch 10. Asem Summit in Mailand
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস কেবল বিশ্বের শান্তির জন্যই নয়, এটি উন্নয়ন ও মানব সভ্যতার জন্যও হুমকির কারণ৷ছবি: picture-alliance/dpa/Bildfunk

তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা অবশ্যই সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র সরবরাহ ও অর্থের উৎস বন্ধ করতে চাই৷’’

সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে রবিবার ( ২১ মে) এক দিনের এই সম্মেলনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, সৌদি আরবের নেতৃত্বে সন্ত্রাসবিরোধী জোটের ৪১টি মুসলিম রাষ্ট্রসহ ৫৫টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা অংশ নেন৷ রবিবার রিয়াদে কিং আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে আরব-ইসলামিক-অ্যামেরিকান (এআইএ) সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী৷

তিনি বলেন, ‘‘সন্ত্রাস ও চরমপন্থা কেবল বিশ্বের শান্তির জন্যই নয়, এটি উন্নয়ন ও মানব সভ্যতার জন্যও হুমকির কারণ৷ এটি কোনও দেশ, ধর্ম ও জনগণের কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ বাংলাদেশ সব ধরণের চরমপন্থার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে এবং সবসময়ই যে কোনও ধরণের একক বা সম্মিলিত সন্ত্রাস ও উৎসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে৷’’

ইসলামকে সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়ে বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘সন্ত্রাসীদের কোনও ধর্ম, বিশ্বাস বা মৌলিক পরিচয় নেই৷ আর আমরা যেকোনও ধরণের চরমপন্থা ও সহিংসতায় ধর্মকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিচার্য মনে করি না৷’’

একইসঙ্গে মুসলিম দেশগুলোর প্রতি মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি বন্ধ ও শান্তির নীতি অবলম্বনের জন্যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংলাপে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এটি সবার জন্য বিজয়-বিজয় পরিস্থিতি তৈরি করবে৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা কার্যকরভাবে দেশে গজিয়ে ওঠা উগ্রবাদীদের মোকাবিলা করছি৷ বেশ কয়েকটি সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে৷ পাশাপাশি সরকার এদের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যাপক প্রচারাভিযান চালাচ্ছে৷ জঙ্গিবাদ দমনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো প্রস্তুত এবং অস্ত্রসহ যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত৷ তারা সন্ত্রাসীদের কার্যকরভাবে মোকাবেলা করছে৷’’

রবিবার আরব ইসলামিক অ্যামেরিকান সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে শেখ হাসিনা ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়৷ ওই সময় শেখ হাসিনা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান৷ পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডোনাল্ড  ট্রাম্পের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেছেন৷ এরই এক পর্যায়ে শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান৷ উত্তরে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আমি আশা রাখি, বাংলাদেশে যাবো৷’’

যৌথ ঘোষণায় বাংলাদেশ ইরান-বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেছে৷ সম্মেলন শেষে যৌথ বিবৃতিতে ইরানকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়, ইরান সরকার মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে৷ অন্য দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে ইরানের নাক গলানোর প্রচেষ্টাকে নিন্দা জানানো হয়৷

সৌদি আরবের মাধ্যমে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী কাজে যুক্ত হওয়া বাংলাদেশের জন্য সহজ: শান্তনু মজুমদার

বাংলাদেশের এই সম্মেলনে যোগ দেয়া নিয়ে বিশ্লেষকরা নানা হিসেব কষছেন৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সৌদি আরব নিয়ে অনেক বিতর্ক থাকলেও বাংলাদেশের মুসলমানদের কাছে সৌদি রাজপরিবার অনেক সম্মান ও শ্রদ্ধার৷ তাই সৌদি আরবের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী কাজে যুক্ত হওয়া বাংলাদেশের জন্য সহজ৷ এটাই সবচেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ৷’’

বাংলাদেশের ইরানবিরোধী  অবস্থান নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘এখানে শিয়া এবং সুন্নির বিষয়টি কাজ করেছে৷ সৌদি আরবের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশ ভূমিক নিচ্ছে, যাতে দেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর চিন্তার সঙ্গে মিল থাকে৷’’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সৌদি আরবের মাধ্যমে ট্রাম্পের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা এটা নয়৷ বাংলাদেশের সেজন্য নিজস্ব ম্যাকানিজম আছে৷ এই সম্মেলনে বাংলাদেশ যোগ দিয়েছে মুসলিম বিশ্বে তার অবস্থান আরো শক্ত করতে৷’’

অন্যদিকে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল আব্দুর রশীদ (অব.) ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ মেকাবেলা করছে৷ জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে৷ বিশ্বে বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থান প্রশংসিত৷ তাই সৌদি আরবের নেতৃত্বে প্রধানত মুসলিম দেশগুলোর এই সম্মেলনের বাইরে থাকতে পারে না বাংলাদেশ৷ আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি একে আরো গুরুত্বপূর্ণ করেছে৷’’

বিশ্বে বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থান প্রশংসিত: আব্দুর রশীদ

তিনি বলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে  সৌদি আরবের একটি চুক্তি আছে৷ আর তা হলো, সৌদি আর কট্টরপন্থি বা ওহাবী ইসলামকে উৎসাহ বা সমর্থন দেবে না৷ বাংলাদেশে কট্টরপন্থিরা সৌদি ভূখণ্ড থেকে নানা ধরণের সমর্থন পেয়ে আসছে৷ তাই এখন সৌদি আরব ওই ধরণের সমর্থন যাতে বন্ধ হয়, সেই সহায়তা বাংলাদেশকে করবে৷’’

বিশ্লেষকরা আরও মনে করেন, ধর্ম এং ভূ-রাজনৈতক গুরুত্ব ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বিপূল জনশক্তি কাজ করে৷ মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা এবং আর্থিক বিষয়ে সৌদি আরবের সহায়তা বাংলাদেশের প্রয়োজন৷

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...