1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় বিশেষ বাহিনী?

সমীর কুমার দে, ঢাকা১৮ জুলাই ২০১৬

‘‘ঝুঁকি মোকাবেলা করার জন্য দেশব্যাপী অ্যাসাইন্ড ফোর্স থাকা উচিৎ৷ যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটির মতো, যাদের দায়িত্বই থাকবে জননিরাপত্তা এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা,’’ মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক আব্দুর রশীদ৷

https://p.dw.com/p/1JQBN
Bangladesch Anschlag Schießerei in Dhaka
ছবি: Getty Images/M. H. Opu

ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ আরো বলেন, ‘‘এখন আমাদের যে ফোর্সগুলো আছে তারা মাল্টিপল কাজ করে৷ ফলে একটি ছেলে হারিয়ে গেল – সে কি জঙ্গিবাদে গেল, সে কোনো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হলো না সে তার মেয়ে বন্ধুকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে গেল, এটি নির্ণয় করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট নির্লিপ্ততা আছে৷ সেজন্য ওই নির্লিপ্ততা থেকে বেরিয়ে আসতে গেলে জঙ্গিবাদের টোটাল নেটওয়ার্ক নিয়ে গবেষণাভিত্তিক ইন্টেলিজেন্স প্রতিষ্ঠিত করতে হবে৷ এর জন্য দরকার একটা অ্যাসাইন্ড ফোর্স বা বিশেষ বাহিনী৷''

সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদের মতে, ‘‘আমাদের এখানে যে দু'টি হামলা হয়ে গেল সেখানে তাদের উদ্দেশ্য খুব একটা সফল হয়নি৷ সেই কারণে তাদের বেপরোয়া অবস্থান থেকে আরো হয়ত হামলা করার চেষ্টা তারা করবে৷ তবে সবচেয়ে বড় জিনিস হলো, বাংলাদেশের জনগণ জঙ্গিবাদ মেনে নিচ্ছে না৷ এটি যতক্ষণ আছে, ততক্ষণ এখানে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা অনেক সহজ৷''

ডয়চে ভেলে: সর্বশেষ ঢাকার গুলশানে এবং কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় যে হামলা দু'টি হলো এগুলো আসলে কী বার্তা দিচ্ছে?

মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ: এই হামলাগুলো করাই হয় দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য এবং তাদের যে উদ্দেশ্যগুলো আছে, এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি সে উদ্দেশ্যগুলোর একটা হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে যারা ফাঁসিতে ঝুলবেন, তাদের রক্ষা করার একটা প্রচেষ্টা৷ এই সরকারকে ইসলামিক জঙ্গিগোষ্ঠীরা বলে আসছে, এটা আনইসলামিক সরকার, তাই সরকারকে উৎক্ষাত করা৷ আরেকটি হলো, বাংলাদেশে যে উন্নয়নের ধারা আছে, সেটা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করা৷ আর অপরটি হলো, জনগণকে ভয় দেখিয়ে জয় করা৷ এই ক'টা বিষয় নিয়েই এখানে জঙ্গিবাদের আক্রমণের মাত্রাটা বেড়েছে৷ আরেকটি জিনিস এখানে দেখা যাচ্ছে, এদের অনেকেই ইসলামিক স্টেট বা আল-কায়েদার সমর্থক৷ ওদের ওখানে যে সংকোচন হচ্ছে, সেই সংকোচনের পেরিফেরালি এদিকে তার বিস্ফোরণ হচ্ছে৷ সেটির ধারাবাহিকতায় আমরা ইস্তানবুল থেকে সৌদি আরব, ঢাকা, মালয়েশিয়ায় দেখছি৷ এগুলো হলো, পেরিফেরালি বিস্ফোরণ মনে হচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্যের মধ্যে এককেন্দ্রিকতা ঘটেছে৷ সেখান থেকেই বাংলাদেশ একটা হুমকির মধ্যে পড়েছে৷''

ঢাকার গুলশানে যে ঘটনাটা ঘটে গেল, এটা তো বাংলাদেশের জন্য একটা নতুন ডাইমেনশন৷ এতে কি নতুন করে জঙ্গিদের শক্তিমত্তার দিকটা উঠে এলো?

অবশ্যই৷ তারা তাদের শক্তি দেখানোর জন্যই তো এটা করেছে৷ তাদের শক্তিটা হলো তারা তাদের পছন্দমতো জায়গায় হামলা করতে পারে – এমন একটা বার্তা তারা দিতে চেয়েছিল৷ আমি মনে করি, এই হামলার যে উদ্দেশ্য ছিল, সেটি পরাভূত হয়েছে৷ একটি হলো, আতঙ্ক ছড়ানো৷ কিন্তু আমি দেখলাম, বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ এই হামলার পর জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং তারা খুব সোচ্চার৷ এদিক থেকে তারা যে ভয় দেখিয়ে জয় করতে চেয়েছিল সেটা সম্ভব হলো না৷ আরেকটি হলো, বিদেশিদের হত্যা করে বিদেশিদের অনুকম্পা পেতে চেয়েছিল কোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠী৷ সেখানে বিদেশিদের যে অবস্থান বাংলাদেশের জঙ্গি বিরোধী তৎপরতায় তারা পাশে থাকবে৷ এর ফলে তাদের এই উদ্দেশ্যটাও সফল হয়নি৷ সেক্ষেত্রে এই উদ্দেশ্য সফল না হওয়ার জন্য আমরা পরবর্তীতে কিশোরগঞ্জে হামলা হতে দেখলাম৷ আমার মনে হয়, সেখানেও উদ্দেশ্য খুব একটা সফল হয়নি৷ সেই কারণে তাদের বেপরোয়া অবস্থান থেকে আরো হয়ত হামলা করার চেষ্টা তারা করবে৷

রশিদের সাক্ষাৎকার

আমাদের সরকারি পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে – এই ধরনের হামলাগুলো যারা ঘটাচ্ছে, তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক কোনো সম্পর্ক নেই৷ আসলে এদের আন্তর্জাতিক কানেকশন আছে, না নেই?

আসলে আন্তর্জাতিক কানেকশন বলতে যেটা বোঝায়, সেটা কিন্তু ডিফাইন করা হয়নি৷ সরকারও করেনি৷ আদর্শিকভাবে বাংলাদেশের জঙ্গিদের অনেকেই ইসলামিক খেলাফত বা শরিয়া রাষ্ট্রের পক্ষে কাজ করছেন৷ পাশাপাশি ইসলামিক স্টেট এবং আল-কায়েদা এই আদর্শে কাজ করছে৷ এটা হচ্ছে একটা আদর্শিক কানেকশন৷ এই কানেকশনটার সঙ্গে আমরা দেখছি সাইবার ওয়ার্ল্ডে তারা একটা সংযোগ স্থাপন করেছে৷ আরেকটি হচ্ছে ফিজিক্যাল৷ তাদের কোনো অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশে আল-কায়েদা বা ইসলামিক স্টেট-এর নামে অপারেট করছে কিনা৷ আমি যেভাবে দেখি, আমি কিন্তু এখনও আইএসকে বলতে শুনিনি, আমাদের সংগঠন ওখানে অপারেট করছে৷ তারা বলছে, আমাদের যোদ্ধারা করছে৷ যোদ্ধা আর সংগঠনের মধ্যে পড়ে আমরা এখন আইএস বিতর্কে চলছি৷ তবে আমার কাছে মনে হয়, আইএস বিতর্ক যত বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সে আইএস হোক আর না-ই হোক, তারা সন্ত্রাস করে নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে৷ সেটি বন্ধ করা এবং তারই কৌশল নির্ধারণে গুরুত্ব দেয়া উচিত৷ আর আমাদের এখানে যত ইসলামিক ফোর্স আছে, তাদের সবার মধ্যেই ইসলামি খেলাফত এবং শরিয়া রাষ্ট্রের নামে একটা সহিংস আচরণ এরা ‘নার্চার' করে৷ সেটি থেকে মনে হয়, যে নামেই তারা থাকুক, সেটি বাংলাদেশের সীমানার বাইরেই থাকুক আর ভেতরেই থাকুক, এদের মধ্যে যে আদর্শিক যোগাযোগ বা মিলন আছে, এখানে কোনো সন্দেহ নেই৷

পরপর দু'টি ঘটনা আমাদের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের এমন কোনো বার্তা দেয় কিনা যে, আমাদের এই নেটওয়ার্ক কোনো কাজে আসছে না?

যখন কোনো হামলা হয়ে যায়, তখন বলা হয় গোয়েন্দারা সেই হামলা ধরতে পারেনি৷ পূর্ব সংকেত দেয়নি৷ সব সময় বলা হয় এটি গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের ব্যর্থতা৷ এই ব্যর্থতা নিয়ে সব সময় ঢাক-ঢোল পেটানো হয়৷ আর ভেতরে ভেতরে ওরা যে কতগুলো হামলা ঠেকিয়ে দিয়েছে, সেটা কিন্তু আমরা জানতে পারি না৷ সে জন্য এই বিতর্কটা থেকেই যায়৷ সারা বিশ্বে আমরা দেখছি, গোয়েন্দা নজরদারির ভেতর থেকে হামলা হয়ে যাচ্ছে৷ আমি যেখানে গুরুত্ব দেব, আমাদের এই ধরনের ঝুঁকি মোকাবেলা করার জন্য আমাদের দেশব্যাপী অ্যাসাইন্ড ফোর্স থাকা উচিত৷ যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটির মতো৷ যাদের দায়িত্বই থাকবে জননিরাপত্তা এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা৷ তারা সার্বক্ষণিক এটা নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন৷ এখন আমাদের যে ফোর্সগুলো আছে, তারা মাল্টিপল কাজ করে৷ ফলে একটি ছেলে হারিয়ে গেল, সে কি জঙ্গিবাদে গেল, সে কোনো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হলো, নাকি সে তার মেয়ে বন্ধুকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে গেল – এটি নির্ণয় করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট নির্লিপ্ততা আছে৷ সেজন্য ওই নির্লিপ্ততা থেকে বেরিয়ে আসতে গেলে, জঙ্গিবাদের টোটাল নেটওয়ার্ক নিয়ে গবেষণাভিত্তিক ইন্টেলিজেন্স প্রতিষ্ঠিত করতে হলে, একটা অ্যাসাইন্ড ফোর্সের প্রয়োজন৷

আইএস বিভিন্ন জায়গায় চাপে আছে৷ তাদের নতুন আস্তানা হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ কি উঠে আসতে পারে?

সিরিয়ার আইএস বাংলাদেশে এসে শেল্টার নেবে, এটা আমি কখনোই চিন্তা করছি না৷ সেখানকার সংকোচনের কারণে তারা পেরিফেরিয়াল মুসলিম স্টেটে তারা তাদের শক্তি প্রদর্শন করে দেখাতে চাইবে আমাদের যদি উচ্ছেদ কর, তাহলে আমরা সারা বিশ্বকে অস্থিতিশীল করে দেবার ক্ষমতা রাখি৷ সেই ক্ষেত্রে তারা এগুলোকে কাজে লাগাচ্ছে৷ সে কারণে আমি মনে করছিনা সিরিয়ার আল-বাগদাদি পার্টি বাংলাদেশে এসে শেল্টার নেবে৷

বাংলাদেশে যে হামলাগুলো হচ্ছে এবং তাদের দায় স্বীকার – গুলশানের ঘটনায় আমরা দেখেছি আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর আগেই তারা বলে দিচ্ছে ভেতরে কি হয়েছে৷ এই কানেকশনটাকে আপনি কিভাবে দেখেন?

আমি এটাকে সাইবার কানেকশন বলছি৷ আমাদের এখানে বিষয়টা অনেক জটিল৷ এখানে যতগুলো জঙ্গিবাদী অপশক্তি কাজ করে এবং এখানে তো কিছু খবর বেরিয়েই এসেছে যে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এটিকে কৌশলগত সমর্থন দেয়৷ যদিও তারা এটি অস্বীকার করেছে৷ তারা সবাই যখন মিলে যায়, তাদের উদ্দেশ্যের ভেতরে একটি মিল সৃষ্টি হয়, তখন সবাই একটা হামলার জন্য প্রস্তুতি নেয়৷ যার যে ক্ষমতা আছে, সে ওখানেই প্রয়োগ করবে৷ আমি দেখছি যে, বাংলাদেশে হামলা ওই কারণেই হচ্ছে৷ সরাসরি বললে, জামায়াতের মূল অ্যাজেন্ডা হলো যুদ্ধপরাধী যারা ফাঁসির দড়িতে আছে, তাদের বাঁচানো৷ অন্য রাজনৈতিক দল যারা ক্ষমতার বাইরে আছে, তাদের উদ্দেশ্য হলো ক্ষমতা দখল করা বা ক্ষমতায় যাওয়া৷ তারপর পাকিস্তানের অ্যাজেন্ডা হচ্ছে, অ্যান্টি ইন্ডিয়া৷ সেখানে কিভাবে খোঁচানো যাবে, বাংলাদেশে ভূমি ব্যবহার করা যাবে কিনা৷ আর আইএস-এর বিষয়টা হচ্ছে, ইরাক-সিরিয়ায় সংকোচনের কারণে বর্হিবিশ্বে তারা বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে৷ এই সবগুলো যখন মিলে যায়, তখন বাংলাদেশ সুন্নি মুসলিম দেশ হিসেবে স্বভাবতই ঝুঁকিতে থাকে৷ আমার মনে হয়, আমরা সেই ঝুঁকিটাই বহন করছি৷

এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সরকারের কী করা উচিত?

আমি মনে করি, এখানে আপোষের জায়গাটা যত দেখানো যাবে, সেটি তুরস্কের মতো হবে৷ আইএস যোদ্ধাদের সবকিছু দিয়ে সহযোগিতার পর এখন তারাই সেখানে আক্রমণ চালাচ্ছে৷ তাই এদের দমন করার জন্য আপনার সব সময় একটা আক্রমণাত্মক কৌশল থাকতে হবে৷ আমি বলব, যেসব সংগঠন আছে, তাদের উচ্ছেদ করতে হবে৷ তার নেতৃত্বকে খুঁজে বের করে সেটিকে উচ্ছেদ করতে হবে৷ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, তাদের যে পৃষ্ঠপোষক আছে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে৷ এই তিনটা বিষয় যদি করা যায়, তাহলে বাংলাদেশ থেকে জঙ্গিবাদ চলে যাবে৷ সবচেয়ে বড় জিনিস হলো, বাংলাদেশের জনগণ জঙ্গিবাদ মেনে নিচ্ছে না৷ এটি যতক্ষণ আছে, ততক্ষণ এখানে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা অনেক সহজ৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য