যুক্তরাষ্ট্র
২৩ ডিসেম্বর ২০১২শুক্রবার জন কেরিকে পাশে রেখে বারাক ওবামা তাঁকে পরবর্তী পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা দেন৷ মার্কিন সিনেটে জন কেরি একটি বড় নাম৷ গত প্রায় তিন দশক ধরে সিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন ৬৯ বছর বয়সি জন কেরি৷ পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটিরও চেয়ারম্যান তিনি৷ বিগত ২০০৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের কাছে হেরে যান জন কেরি৷ এরপর থেকেই বিদেশ নীতি নিয়ে কাজ করে আসছেন ডেমোক্রেট এই সিনেটর৷ তাই পররাষ্ট্র মন্ত্রী পদে তাঁকে উপযুক্ত প্রার্থী হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷ ওবামা বলেন, ‘‘বিগত বছরগুলোতে জন কেরি বিশ্বের নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে সম্মান এবং আস্থা অর্জন করেছেন৷ এই দায়িত্বের জন্য তাঁর বেশি প্রশিক্ষণও দরকার নেই৷ সিনেটে তিনি ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকান সহকর্মীদের শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন৷ খুব কম লোকই জন কেরির মতো এতোজন প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীকে চেনেন এবং পররাষ্ট্র বিষয়টা ভালো বোঝেন৷ এসব কারণে তিনিই হচ্ছেন উপযুক্ত পছন্দ৷
এই জন কেরির হাত ধরেই বলতে গেলে লাইমলাইটে আসেন বারাক ওবামা৷ বিগত ২০০৪ সালের ডেমোক্রেট দলের কনভেনশনে মূল বক্তব্য দেওয়ার দায়িত্ব ওবামাকে দেন জন কেরি৷ তখন জন কেরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী৷ সেই কনভেনশনে ওবামার ভাষণ সকলের নজর কেড়ে নেয়৷ গত নভেম্বরে মিট রমনির সঙ্গে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিতর্কেও ওবামাকে ভীষণভাবে সহায়তা করেছিলেন জন কেরি৷ বিতর্কের অনুশীলনের সময় রমনির ভূমিকা পালন করেন জন কেরি৷ দুই জনের এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আগামীতেও কাজে দেবে বলে মনে হচ্ছে৷ ওবামার সম্পর্কে জন কেরির মন্তব্য, ‘‘এই প্রেসিডেন্ট বোঝেন যে আমাদের মূল্যবোধ আমাদের ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করে না বরং আরও বৃদ্ধি করে৷''
তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রী পদের জন্য জন কেরি ওবামার প্রথম পছন্দ ছিলেন না৷ জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত সুজান রাইসের নামই শোনা যাচ্ছিলো শুরু থেকে৷ তবে লিবিয়ার বেনগাজিতে মার্কিন দূতাবাসে হামলায় সুজান রাইসের ভূমিকা নিয়ে তীব্র সমালোচনা আসছিলো রিপাবলিকান শিবির থেকে৷ তাই বিতর্ক এড়াতে নিজেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রী পদের দৌড় থেকে সরিয়ে নেন সুজান রাইস৷
আগামী বছরের শুরুর দিকে নতুন পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে হিলারি ক্লিন্টনের স্থলাভিষিক্ত হবেন জন কেরি৷ বেনগাজির ঘটনার দায় দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেওয়ার পর থেকে হিলারি ক্লিন্টনের ভূমিকা বিতর্কিত হয়ে পড়েছে৷ এছাড়া তাঁর অসুস্থতাও নতুন পররাষ্ট্র মন্ত্রীর প্রয়োজনীয়তাকে বড় করে তুলেছে৷ ডেমোক্রেট শিবিরের আশা, জন কেরি ওবামার পররাষ্ট্র নীতিতে একটি নতুন জোয়ার নিয়ে আসবেন৷ কারণ গত কয়েকটি বছরে প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে নানা দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে অন্যতম নির্ধারক হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন সিনেটর কেরি৷
উল্লেখ্য, সিনেটর কেরি ১৯৭৬ সালে বস্টন কলেজ থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি নেন এবং তারপর ম্যাসাচুসেটস এ আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন৷ তিনি অ্যামেরিকার অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় ইয়েল ইউনিভার্সিটিতেও পড়াশোনা করেছেন৷ ভিয়েতনাম যুদ্ধেও তিনি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন৷ তবে দেশে ফিরে ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে আন্দোলনে শরিক হন৷
আরআই/এএইচ (রয়টার্স, ডিপিএ)