জর্জিয়াকে অস্ত্র বিক্রি নিষিদ্ধ করতে রাশিয়ার উদ্যোগ
১০ সেপ্টেম্বর ২০০৮ইউরোপীয় ইউনিয়নের লাগাতার উদ্যোগে সাড়া দিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ সোমবার জানিয়েছিলেন, রাশিয়া এক মাসের মধ্যেই জর্জিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করবে৷ তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মঙ্গলবারই রুশ সেনাবাহিনী সেই কাজ শুরু করে দিয়েছে৷ জর্জিয়ার বন্দর শহর পোটি সহ বেশ কিছু এলাকা ছেড়ে তাদের চলে যেতে দেখা যাচ্ছে৷
কিন্তু অন্যদিকে মস্কো জর্জিয়ার দুই বিচ্ছিন্নতাকামী প্রদেশ - দক্ষিণ ওসেটিয়া ও আবখাজ়িয়াকে স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা দেবার পর মঙ্গলবারই তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে৷ সেইসঙ্গে ঐ দুই প্রদেশে মোট ৭,৬০০ রুশ সৈন্য স্থায়ীভাবে মোতায়েন থাকবে বলেও ঘোষণা করা হয়েছে৷ জর্জিয়া যাতে ভবিষ্যতে দক্ষিণ ওসেটিয়া ও আবখাজ়িয়ার উপর হামলা চালানোর সাহস না পায়, সেই লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত৷
রাশিয়ার কূটনৈতিক চাপ
কূটনৈতিক স্তরেও জর্জিয়ার উপর চাপ বজায় রাখতে রাশিয়া জাতিসংঘে সেদেশের কাছে অস্ত্র বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানোর উদ্যোগ নিচ্ছে৷ নিরাপত্তা পরিষদে এই মর্মে এক প্রস্তাব পেশ করে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভিতালি চুরকিন বলেন, সবার স্বার্থেই জর্জিয়াকে অস্ত্র বিক্রি নিষিদ্ধ করা উচিত৷ তাঁর অভিযোগ, গত ৬ বছরে জর্জিয়ার সামরিক বাজেট ১ কোটি ৮০ লক্ষ থেকে ৯০ কোটি ডলারের মাত্রা ছুয়েঁছে৷ নাম না করে জর্জিয়ার সামরিক সজ্জার জন্য মার্কিন প্রশাসনের সমালোচনা করেন তিনি৷ উল্লেখ্য, মূলত ইরাকে কোয়ালিশন বাহিনীর অন্যতম দেশ হিসেবে জর্জিয়ার সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত করে তুলতে ওয়াশিংটন গত কয়েক বছরে প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম সরবরাহ করে এসেছে৷ মঙ্গলবারই মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, যে সাম্প্রতিক যুদ্ধে জর্জিয়ার বিপর্যস্ত সামরিক কাঠামোর পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা খতিয়ে দেখতে এক প্রতিনিধিদল তিবলিসি সফরে যাচ্ছে৷
সমালোচনার মুখে সাকাশভিলি
জর্জিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে রাশিয়া সেনা প্রত্যাহার শুরু করায় সেদেশে কিছুটা স্বস্তির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে৷ সেইসঙ্গে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বর্তমান সঙ্কটের বিশ্লেষণের কাজও শুরু হয়ে গেছে৷ বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট মিখাইল সাকাশভিলি যেভাবে দক্ষিণ ওসেটিয়ার উপর হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেকারণে তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠছে৷ এই সিদ্ধান্তকে দায়িত্বজ্ঞানহীন আখ্যা দিয়ে প্রভাবশালী বিরোধী রক্ষণশীল দল সাকাশভিলির পদত্যাগ সহ আগাম প্রেসিডেন্ট ও সংসদ নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে৷ উল্লেখ্য, মে মাসের সংসদ নির্বাচনে বিরোধীরা সাকাশভিলির দলের বিরুদ্ধে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনেছিল৷ তাদের সেই অভিযোগের প্রতি সমর্থনের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে ইউরোপীয় নিরাপত্তা ও সহযোগিতা সংগঠন OSCE-র চূড়ান্ত রিপোর্টের মধ্যেও৷ নির্বাচনের পর প্রকাশিত প্রাথমিক রিপোর্টে সামান্য কিছু অনিয়মের অভিযোগ করা হলেও চূড়ান্ত রিপোর্টে ব্যালট বাক্সে ব্যাপক কারচুপি এবং বিরোধী সমর্থকদের উপর শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে৷
বুশ প্রশাসন যেভাবে সাকাশভিলির সরকারকে গত কয়েক বছর ধরে প্রত্যক্ষ মদত দিয়ে চলেছে, তার বিরুদ্ধে মার্কিন সংসদেও সমালোচনা শোনা যাচ্ছে৷ রিপাব্লিকান ও ডেমক্র্যাট – দুই দলেরই কিছু সাংসদ অভিযোগ করেন, এই ভ্রান্ত নীতির মাধ্যমে অকারণে রাশিয়াকে চটিয়ে দিয়ে মার্কিন স্বার্থেরই ক্ষতি করা হয়েছে৷ ডেমক্র্যাট সেনেটার শিলা জ্যাকসন লী বলেন, জর্জিয়ায় আমাদের বন্ধুদের মত রাশিয়ার বন্ধুরাও একই রকম গুরুত্বপূর্ণ৷ দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য খুঁজে বার করতে হবে৷ রিপাব্লিক্যান সাংসদ ডানা রোরবাখার বলেন, এক্ষেত্রে রাশিয়াই ঠিক কথা বলছে, আমরাই ভুল করেছি৷ জর্জিয়া এই সঙ্কট শুরু করেছে, রাশিয়া তা শেষ করেছে৷