জলবায়ু পরিবর্তন, আমাদের সমস্যা আমাদেরকেই দূর করতে হবে
২৪ নভেম্বর ২০০৯আমাদের যত সমস্যা, তা নিজেদেরকেই দূর করতে হবে৷ আর এই জন্য যেকোন ভাবে আসন্ন জলবায়ু সম্মেলনকে অর্থবহ করতে হবে৷ জার্মান ম্যাগাজিন স্পাইজেলে তার একটি খোলা চিঠি প্রকাশিত হয়েছে এই তো দিন দুয়েক আগে৷ সেখানে তিনি বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ইস্যুকে কোনভাবেই খাটো করে দেখা যাবে না৷ জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর মোকাবিলাই এখন সবচেয়ে বড় এজেন্ডা৷ এই সম্মেলনে ধনীদেশগুলোকে কার্বন নির্গমনের মাত্রা কমিয়ে আনার ঘোষণা দিতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোকে অর্থ সহায়তা দিতে হবে৷
প্রসঙ্গ: বাংলাদেশ
বাংলাদেশ৷ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ক্ষতির সম্মুক্ষিন হবে যে যে দেশগুলো, সেগুলোর অন্যতম৷ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক টেলি কন্ফারেন্সে বললেন, আগামী ডিসেম্বরে কোপেনহেগেন জলবায়ু সম্মেলনে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব মোকাবেলায় অনুন্নত দেশগুলোকে অর্থায়নের ব্যাপারে সুস্পষ্ট ঘোষণা চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ ওই সম্মেলনকে সামনে রেখে সম্প্রতি এক ভিডিও কনফারেন্সে বিশ্বের আট নেতার কাছে এ দাবি জানান তিনি৷ ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী লার্স রাসমুসেনের উদ্যোগে কোপেনহেগেন জলবায়ু সম্মেলনকে সামনে রেখে বিশ্বনেতাদের গুরুত্বপূর্ণ এক ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হলো এ ভিডিও কনফারেন্সে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন, ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী কেভিন রাডসহ মেক্সিকো, নরওয়ে ও ইথিওপিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যোগ দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷
ভিডিও কনফারেন্সে শেখ হাসিনা যা বললেন
কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অনুদান হিসেবে তহবিল যোগানোর ব্যাপারে উন্নত বিশ্বকে সুস্পষ্ট সমঝোতায় আসতে হবে৷তিনি বলেন, আমরা কোপেনহেগেন মিটিংয়ে ব্যর্থতা মেনে নিতে পারি না৷আমি আশাবাদী সকল উন্নত দেশগুলোকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে৷অঙ্গীকার আসতে হবে স্পষ্ট৷স্পষ্ট রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও আসতে হবে৷কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় অনুন্নত বিশ্বের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থান না নিয়ে উন্নত বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটাও জানিয়ে দেন, মূল দায়িত্বটা এখন উন্নত বিশ্বের ওপরই বর্তেছে৷বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মোকাবেলায় কোপেনহেগেন থেকে একটি অর্থনৈতিক প্যাকেজের ঘোষণা আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন৷
আরও অর্থ চাইলো বাংলাদেশ
এই সম্মেলনের ঠিক আগে জানা গেলে জলবায়ু পরিবর্তনের ধকল সামলাতে আগামী চার বছরের জন্য ধনী দেশগুলোর কাছে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার চাইছে বাংলাদেশ৷ এর আগে এ বিষয়ে যে অংক জানানো হয়েছিল, বতর্মান অংক আগের চাওয়া অর্থের দ্বিগুন৷
আগে জানানো হয়েছিল, আগামী মাসে কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর কাছে ক্ষতি পোষাতে সহায়তা হিসাবে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার চাইবে৷ কিন্তু বাংলাদেশের পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী হাসান মাহমুদ একটি সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, এই জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ৷ আর তাই এই অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য প্রয়োজন বাড়তি অর্থ৷ তারা হিসাব করে দেখেছেন, আগামী চার বছরে ধকল সামলানোর কাজেই প্রয়োজন হবে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ তিনি বলেন, আগামী মাসের জলবায়ু সম্মেলনে আমরা এই বিষয়টি বিশ্ব সমাজের সামনে উত্থাপন করবো৷ তিনি বলেন, এ কথা ঠিক যে ঐ সম্মেলনে তহবিলের বিষয়টি আমাদের কাছে প্রধান ইস্যু নয়, আমরা শিল্পোন্নত দেশগুলো যে কার্বন নির্গমন করছে, তার সরাসরি শিকার, এটা আমরা জানাবো৷ আমরা বলবো এই কারণে তাদেরকে অবশ্যই এর মাসুল গুনতে হবে, আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করতে হবে৷
জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার
বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে চৌদ্দ কোটি মানুষ সরাসরি জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হতে চলেছে৷ ইতিমধ্যে এই পরিবর্তনের কারণে বন্যা, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, খরার মত ঘটনা ঘটছে৷ এ ছাড়া সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রভাব অল্প হলেও পড়তে শুরু করেছে৷ বিভিন্ন স্থানে পানি লবণাক্ত হয়ে পড়েছে৷ নোবেল বিজয়ী জাতিসংঘের ইন্টার-গভর্মেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ বা আইপিসিসি জানিয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের অন্তত ১৭ ভাগ ভূমি তলিয়ে যেতে পারে৷ আর ২০৫০ সাল নাগাদ ৫ কোটি মানুষ হতে পারে গৃহহীন৷ পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রাপ্ত অর্থে তারা সমুদ্রের নিকটবর্তী অঞ্চলে লবণাক্ততা দূর করা, বাঁধ, রাস্তা এবং হাজারো আশ্রয় শিবির বানানো হবে, রোপন করা হবে বৃক্ষ৷ তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে কোপেনহেগেন সম্মেলনে বিশ্ব নেতারা একটি একক সিদ্ধান্তে আসবেন বলে আমরা আশা করি৷
প্রতিবেদক: সাগর সরওয়ার
সম্পাদনা: সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক