জলবায়ু পরিবর্তন: কারো পৌষ মাস...
৬ মার্চ ২০১১উত্তর মেরুতে রয়েছে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের বিপুল ভাণ্ডার৷ বিশ্বের তেল ও গ্যাস সম্পদের এক চতুর্থাংশই রয়েছে এই আর্কটিকের তলদেশে, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷ ‘ফলে বরফ গলতে থাকলে সেই সম্পদ তুলে আনতে হবে৷ আর গলা বরফের কারণে সমুদ্র হবে জাহাজ চলাচলের উপযোগী৷ ফলে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে যাওয়া যাবে অনেকটা সহজে, কম খরচে৷' একথাই বলছেন নরওয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জোনাস গেহার স্টোর৷ সম্প্রতি ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানালেন এই তথ্য৷
গুপ্তধন
বিশাল বরফস্তরের নিচে চাপা পড়ে আছে প্রাকৃতিক সম্পদ৷ আর্কটিক, যাকে বাংলায় বলা হয় সুমেরু বা উত্তর মেরু, সেখানে বরফ গলতে শুরু করায় প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের এই সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে৷ বিজ্ঞানীদের ধারণা, উত্তর মেরুতে যেভাবে বরফ গলতে শুরু করেছে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ এখানে কোন বরফই থাকবে না৷ এই অঞ্চলের দেশ যেমন রাশিয়া এবং নরওয়ে মনে করছে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সমুদ্রপথ হতে যাচ্ছে এশিয়ায় পণ্য সরবরাহের প্রধান পথ৷
ভাগাভাগি
তবে এই অঞ্চলের সীমানা নিয়ে নরওয়ে এবং রাশিয়ার মধ্যে ছিল অনেক দিনের বিরোধ৷ বর্তমান পরিস্থিতির কারণে সম্প্রতি ব্যারেন্টস সাগরের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে রাশিয়া ও নরওয়ে৷ বলা হচ্ছে, এর ফলে দীর্ঘদিন পর এ এলাকায় খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানের পথ উন্মুক্ত হয়েছে৷ অন্যদিকে, আর্কটিক সাগরের পর্বতশ্রেণীর কোন্ অংশ কার ভাগে পড়বে, রাশিয়া ও ক্যানাডা সে সম্পর্কে জাতিসংঘের সহায়তা চেয়েছে৷
সুযোগ, না হুমকি?
নরওয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ইয়োনাস গেহার স্টোরকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, সুমেরুতে জলবায়ু পরিবর্তন - এটা সুযোগ না বড় ধরণের হুমকি, নরওয়ে কী ভাবছে? উত্তরে তিনি বললেন, ‘দেখুন এটা হুমকি, কিন্তু এই ধরণের হুমকি আমরা মোকাবিলা করতে পারি৷ আর এর জন্য আমাদের নরওয়ের মানুষের মধ্যে ঐক্যমত্য প্রয়োজন৷ প্রয়োজন এ সম্পর্কে নতুন একটি আইনের৷ একই সঙ্গে আমাদের প্রয়োজন আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সহযোগিতা৷ এতে করে মাছ ধরা থেকে খনিজ সম্পদ আহরণ পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে যেন কোন সমস্যা না হয়, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে৷ তবে এ কথাও ঠিক যে বরফ গলে যাওয়াটা আমাদের এ অঞ্চলের জন্যই কেবল যে সমস্যা সৃষ্টি করবে - তাই নয়, এটা পুরো পৃথিবীতেই একটি নেতিবাচক প্রভাব রাখবে৷ তাই আন্তর্জাতিকভাবেই বিষয়টি আলোচনা করতে হবে৷ নিতে হবে সিদ্ধান্ত৷‘
তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল সুমেরুতে খনিজ সম্পদ উত্তোলনের বিষয়ে৷ বিশেষ করে রাশিয়া এরই মধ্যে সেখানে অনুসন্ধানের কাজ শুরু করবে বলে ঘোষণা করেছে৷ তিনি এর জবাবে বললেন, ‘দেখুন, আমি এ নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই না৷ আমি শুধু বলতে চাই আমাদের প্রয়োজন একটি সমন্বিত সিদ্ধান্ত৷ যে আমরাও ব্যারেন্টস সাগরে অনুসন্ধান কাজ চালাতে চাই৷ তবে সবই হতে হবে দুই পক্ষের মধ্যে যে সমঝোতা হয়েছে, সেই সমঝোতার অনুকূলে৷'
তিনি জানালেন, ‘বরফ গলে যাবার ফলে যে পথ সৃষ্টি হবে সেই পথে ইউরোপ থেকে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যোগাযোগ সম্ভব হবে ভালোভাবে৷ এরফলে একদিকে মালামাল পরিবহণে সুবিধা হবে, সময় বাঁচবে, অর্থও সাশ্রয় হবে৷'
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উত্তর মেরুর অর্থনৈতিক সম্ভাবনার বিষয়টি নতুন করে সামনে চলে এসেছে৷ বরফ গলে যাওয়ায় কয়েক শতাব্দী ধরে আর্কটিকের বরফস্তরের নিচে চাপা পড়া প্রাকৃতিক সম্পদ সম্পর্কে অনুসন্ধান চালানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে৷ বিজ্ঞানীদের মতে, এক্ষেত্রে রাজনৈতিক উন্নয়ন ও পরিবেশগত ঝুঁকির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে৷ তা না হলে বিপদ আরও বাড়বে৷
প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক