জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকোপে দ্বীপরাজ্য
প্রশান্ত মহাসাগরে ভানুয়াটুর মতো ছোট দ্বীপরাজ্যগুলি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকোপে, ঠিক যেমন বাংলাদেশ৷ সাগরের পানির উচ্চতা বাড়া আর আবহাওয়ার দুর্যোগের ফলে এই ধরনের দ্বীপরাজ্যগুলির অস্তিত্ব নিয়ে টান পড়েছে৷
প্যাম ঘূর্ণিঝড়ে ভানুয়াটু বিপর্যস্ত
ঘণ্টায় ৩২০ কিলোমিটার অবধি গতির ঝোড়ো বাতাস রাজধানী পোর্ট ভিলার বাড়িঘরের টিনের ছাদ উড়িয়ে দিয়েছিল এবং উপড়ে ফেলেছিল গাছ৷ প্যাম নামের ক্যাটেগরি ফাইভ সাইক্লোনটি এক সপ্তাহ আগে ভানুয়াটুর উপর আছড়ে পড়ে৷ দ্বীপরাজ্যের প্রেসিডেন্ট বল্ডউইন লন্সডেল-এর মতে, এ ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে যোগ আছে: ‘‘আমরা দেখছি, সাগরের পানির উচ্চতা বাড়ছে, আবহাওয়ার ধরন বদলে যাচ্ছে৷’’
‘উন্নয়ন নিশ্চিহ্ন’
প্যাম ঘূর্ণিঝড় ছিল একটি ‘‘দানব’’, যা তাঁর দেশকে ধ্বংস করেছে – বলেছিলেন প্রেসিডেন্ট লন্সডেল৷ ‘‘এটা ভানুয়াটুর সরকার ও জনসাধারণের জন্য একটি বিপর্যয়৷ এত সব উন্নয়ন ঘটার পর, তার সব কিছু নিশ্চিহ্ন হয়েছে’’, বলেন লন্সডেল৷ রাজধানীর ৯০ শতাংশ বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে৷ নিহতের সংখ্যা এ যাবৎ, সরকারিভাবে – ছয়, আহত ত্রিশের বেশি৷
প্যামের আঘাত
প্যাম ঘূর্ণিঝড় দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বহু দেশকে বিধ্বস্ত করেছে৷ জাতিসংঘের বিবৃতি অনুযায়ী, কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির মধ্যে আছে ভানুয়াটু, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, কিরিবাতি, ফিজি, তুভালু এবং পাপুয়া নিউ গিনি৷
শিশুরাই শিকার
অন্তত ৬০ হাজার শিশু এই ঘূর্ণিঝড়ে নিরাশ্রয় অথবা উদ্বাস্তু হয়েছে বলে ইউনিসেফ-এর ধারণা৷ পোর্ট ভিলায় যখন প্যাম এসে আঘাত হানে, ‘‘তখন যেন প্রলয় এসেছে বলে মনে হচ্ছিল’’, বলেছেন ইউনিসেফ-এর অ্যালিস ক্লিমেন্টস, যিনি সেই সময় অকুস্থলে ছিলেন৷
অশনি সংকেত?
বহু বছর ধরে (যেমন এই ছবিতে) কিরিবাতি-র মতো ছোট দ্বীপরাজ্যগুলি জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে যুঝছে৷ সেশেল-এর প্রেসিডেন্ট জেমস মিশেল প্যাম ঘূর্ণিঝড়কে ‘‘জলবায়ু পরিবর্তনের স্পষ্ট আভাস’’ বলে বর্ণনা করেন এবং আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রসমাজকে উষ্ণায়ন সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠতে বলেন৷
জমি বাঁচানোর আকুল প্রচেষ্টা
সবচেয়ে বিপন্ন দ্বীপরাজ্যগুলির বাসিন্দারা উপকূলবর্তী এলাকাগুলিকে রক্ষা করার চেষ্টা করে আসছে, যা-তে জোয়ারে তীরের মাটি ধুয়ে না যায়৷ এই সব স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপে কিছু কাজ হলেও, ক্ষয়ের মূল কারণ – সাগরের পানির উচ্চতা বাড়া – থেকেই যাচ্ছে৷
‘প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিধ্বংসিতা বেড়েছে’
‘‘জলবায়ুর পরিবর্তন প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটার মাত্রা ও তীব্রতা বাড়িয়েছে, বিভিন্ন দেশের মানুষদের উপর যার প্রভাব পড়ছে’’, বলেন কিরিবাতি দ্বীপরাজ্যের প্রেসিডেন্ট আনোটে টং৷ বিজ্ঞানীরা অবশ্য বলেন যে, প্যাম ঘূর্ণিঝড়ের মতো একক প্রাকৃতিক ঘটনাকে পুরোপুরি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলশ্রুতি বলা চলে না৷
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের কর্মসূচি
‘‘আমাদের বিশেষ করে সবচেয়ে দরিদ্র, বিপন্ন মানুষদের সাহায্য করতে হবে’’, প্যাম ঘূর্ণিঝড়ের পর এ কথা বলেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন৷ প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধ করাটা গোটা বিশ্বের কর্তব্য – তাই এ বছর একটি নতুন জলবায়ু চুক্তি সম্পাদিত হতে চলেছে৷