জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বহু গাছের প্রজাতি হুমকির মুখে
২৮ জানুয়ারি ২০১১হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলছেন, দ্রুত ব্যাবস্থা গ্রহণ করা না হলে খুব শিগগিরি এইসব গাছের প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে৷ নতুন এই গবেষণা বলছে, দেবদারু বা মেপল ( যার নির্যাস থেকে চিনি ও সিরাপ তৈরি হয়) -এর মতো যেসব গাছ বাতাসের মাধ্যমে তাদের বীজ ছড়ায়, জলবায়ু পরিবর্তনে ফলে তারা সেভাবে আর তাদের বীজ ছড়াতে পারছে না৷ অর্থাৎ এইসব গাছের প্রজাতি লুপ্ত হতে বসেছে৷
হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের আলেক্সান্ডার সিলবারমান ইন্সটিটিউটের লাইফ সায়েন্স-এর প্রধান অধ্যাপক রান নাথান, তাঁর ছাত্র নির হরভিট্জ এবং অন্যান্য দেশের গবেষকরা এই গবেষণায় অংশ নেন৷ গবেষণায় মূলত আলোকপাত করা হয় জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশে গাছের বিস্তারের ওপরে৷ আশঙ্কা করা হয়, জলবায়ুর এই পরিবর্তন পরবর্তী ৫০ বছর ধরে অব্যাহত থাকবে৷ সাথে সাথে বাড়বে বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনের মাত্রা এবং কমবে বায়ুমণ্ডলে বাতাসের গতিবেগ৷
বাংলাদেশের সাংবাদিক পিনাকি রায়৷ জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করছেন৷ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের নানান প্রান্তে গাছপালার ওপরে পড়া বিভিন্ন প্রভাব সম্পর্কে তিনি বললেন, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রার তারতম্য হচ্ছে বৃষ্টিপাতের তারতম্য হচ্ছে, এর ফলে প্রভাব পড়ছে বিভিন্ন গাছের ওপরে৷ যুক্তরাজ্যের ওয়েলসে যে লার্জ ট্রি ভ্যারাইটিগুলো রয়েছে জাপানিজ লার্জ বলে, সেগুলো কেটে ফেলতে হচ্ছে , কারণ তারা মারা যাচ্ছে, এক ধরণের রোগ হবার পরে, একই ঘটনা ঘটেছিল এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে৷ সেটা হয়েছিল ওক গাছের ওপরে৷ হিমালয়ের একটা সমীক্ষায় দেখা গেছে, হিমালয়ে যেসব গাছ আছে সেগুলোর ওপরও প্রভাব পড়ছে৷ কারণ, গাছপালা, প্রাণী যগত, কীট-পতঙ্গ, একে ওপরের ওপরে নির্ভরশীল৷ অনেক গাছের পড়াগন ঘটে মৌমাছির মাধ্যমে৷ হিমালয়ে তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে তারা মাইগ্রেট করছে এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে৷ ফলে ঔসব মৌমাছি বা কীট-পতঙ্গের ওপরে যেসব গাছপালার পড়াগন নির্ভরশীল ছিল, তা ব্যাহত হচ্ছে৷''
অধ্যাপক নাথান বলেন, তাঁদের গবেষণাতে এই বিষয়টি খুব স্পষ্ট ভাবেই উঠে এসেছে যে, তাপমাত্রা পরিবর্তনের ফলে অনেক গাছপালায় হয়, শুকিয়ে যাচ্ছে, না হয় আর জন্মাচ্ছে না৷ আর এর ফলে ভবিষ্যতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের সমন্বয়ে তৈরি বনভূমিতে পরিবর্তন আসবে এবং সেই সঙ্গে বনভূমির আয়তনও কমে আসবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা প্রকৃতির একার কাজ নয়৷ এই সম্পর্কে অধ্যাপক নাথান বলেন, বিভিন্ন ধরণের পণ্যের ব্যাবহার কমিয়ে, মানবজাতির কর্মকান্ডই প্রকৃতির এই ধরণের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারবে৷ আর তার মাধ্যমেই বিশ্বে পরিবেশগত দূষণের প্রক্রিয়াও কমে আসবে৷
জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম৷ তাপমাত্রার পরিবর্তন, শীতকাল এবং গরমকালের মধ্যে ক্রমাগতভাবে বেড়ে চলা তারতম্য, সর্বোপরি জলবায়ু পরিবর্তন কী ধরণের প্রভাব ফেলেছে বাংলাদেশের প্রকৃতিতে , অর্থাৎ গাছপালার ওপরে৷ এই কথাই জানতে চেয়েছিলাম পিনাকি রায়ের কাছে৷ তিনি বলেলেন, ‘‘ খুলনায় সুন্দরবনের কাছাকাছি অঞ্চল দাকোবে হয়তো জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে লবনাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ এর ফলে ঐ অঞ্চলে গাছপালার ওপরে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে৷ অঞ্চলটিতে নারকেল, বেল, তুলশি, জবা এই ধরণের ফল ও ফুল গাছ অন্যান্য জায়গার তুলনায় অনেক কম৷ এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত প্রায় দশ বছর ধরে তাদের এই সমস্যাটি হচ্ছে৷ এবং তাদের যেসব ফলও ফুল গাছ ছিল তা ধিরে ধিরে মারা যাচ্ছে৷ এর বদলে সুন্দরবনের বিভিন্ন গাছ, যেমন গোলপাতা, কেওড়া এই ধরণের গাছ, খালপাড়ে বা নদীর পাড় দিয়ে জন্মাচ্ছে৷ এলাকাবাসী বলছেন, যে মাটিতে লবনাক্ততার পরিমান বেড়ে যাবার কারণেই এই ধরণের গাছ ঐ অঞ্চলে জন্ম নিচ্ছে৷''
প্রতিবেদন: ফাহমিদা সুলতানা
সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দোপাধ্যায়