জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্ব জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব বিপন্ন
১৩ এপ্রিল ২০০৯জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ২.৮ থেকে ৪ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেলে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দারিদ্র্য এবং পুষ্টিহীনতায় অতিরিক্ত ৩ মিলিয়ন মানুষ মারা যাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে৷ এছাড়া, আরো ৪ বিলিয়ন মানুষ পানীয় জলের অভাবে কষ্ট পাবে৷ এই করুণ পরিণতি থেকে রক্ষা পেতে ইতিপূর্বে গৃহীত কিয়োটো প্রোটোকলের মেয়াদ ২০১২ সালে শেষ হয়ে যাচ্ছে৷
তাই কিয়োটো প্রোটোকলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে আগামী ডিসেম্বরে কোপেনহেগেন-এ অনুষ্ঠিত হবে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক পরিকাঠামোগত সম্মেলন৷ ঐ সম্মেলনের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা এবং দাবি দাওয়া নির্ধারণে তৎপর পরিবেশবাদীরা৷ এরই অংশ হিসেবে দুই সপ্তাহের এক আন্তর্জাতিক বৈঠকে জার্মানির বনে সমবেত হয়েছিলেন ১৯০ টি দেশের প্রায় আড়াই হাজার প্রতিনিধি৷
বন সম্মেলন শেষে অক্সফ্যাম এর বাংলাদেশ অফিসের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর জিয়াউল হক মুক্তা একান্ত সাক্ষাৎকারে ডয়চে ভেলেকে বলেন: ২০০৭ সালে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত পরিবেশ বিষয়ক সম্মেলন থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় চারটি পদক্ষেপের কথা আলোচনা হয়ে আসছে৷ এগুলো হচ্ছে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপখাওয়ানো বা অভিযোজন, এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় কর্মসূচি বাস্তবায়নে অর্থায়ন এবং প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা গ্রহণ৷
তিনি বলেন, এসব আলোচনার ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলার জন্য স্বল্পোন্নত এবং ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলো তাদের সুনির্দিষ্ট দাবি-দাওয়া তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছে৷ আর তাদের এ সব দাবি দাওয়ার প্রতি ধনী দেশগুলোর সহানুভূতি ও ইতিবাচক ইঙ্গিত লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷
জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রধানত দায়ী হচ্ছে বায়ুমন্ডলে অতিরিক্ত পরিমাণ ক্ষতিকর গ্রিন হাউস গ্যাসের উপস্থিতি৷ তাই দাবি উঠেছে, ১৯৯০ সালে ধনী দেশগুলো যে পরিমাণ গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন করতো ২০২০ সালের মধ্যে তার ৪৫ শতাংশ এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ৯৫ শতাংশ হ্রাস করতে হবে৷ এ দাবির প্রতি ধনী দেশগুলো পুরোপুরি একমত না হলেও একটি খসড়া দলিলে দেখা গেছে তারা এ দাবিটিকে অন্তত স্বীকৃতি দিয়েছে৷ ধনী দেশগুলো এখন পর্যন্ত ২০২০ সালের মধ্যে ১৯৯০ সালের তুলনায় ৪ থেকে ২০ শতাংশ গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসের ব্যাপারে সম্মত হয়েছে৷
জিয়াউল হক মুক্তা বলেন: এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নতুন পরিস্থিতিতে অভিযোজন বা খাপ খাওয়ানোর বিষয়ে ইতিপূর্বে তেমন বেশি আলোচনা হয়নি৷ এখন আমরা অভিযোজনের কৌশল কেমন হবে, অভিযোজনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ এবং প্রযুক্তি কোথা থেকে আসবে এসব বিষয়ে মতামতের জন্য আলোচনার তালিকায় নিয়ে আসতে পেরেছি৷
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা অক্সফ্যাম, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এবং বিশ্ব ব্যাংকের পৃথক পৃথক হিসাব অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় গরিব দেশগুলোতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে বছরে ৫০ বিলিয়ন থেকে ৮৬ বিলিয়ন ডলার অর্থ প্রয়োজন হবে৷ তবে এ পরিমাণ অর্থ সহায়তার বিষয়ে ধনী দেশগুলোর পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত সুস্পষ্ট কোন প্রতিশ্রুতি পাওয়া না গেলেও অনেক ধনী দেশই এজন্য তাদের বাজেটে বরাদ্দ রাখছে৷
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেন৷ তাঁর কথায়: ধনী দেশগুলো যদি গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস না করে তবে আমরা যতই অভিযোজন করি না কেন আমাদের রক্ষা নেই৷ দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে বাঁচার জন্য বিশ্বের কেউ আমাদের সহযোগিতা করুক আর না করুক, আমাদেরকে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপখাওয়ানো বা অভিযোজন করতেই হবে৷ তবে এ অভিযোজনের জন্য আমরা ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতা চাই৷
তিনি বলেন, সর্বোপরি, বর্তমানে বাংলাদেশের সরকারি মহল, রাজনীতিবিদ এবং সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি উত্থাপন করা হয়েছে৷ সেটি হলো, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের ফলে যেসব মানুষ বাস্তুহারা হচ্ছে তাদেরকে ধনী দেশগুলোতে অভিবাসনের সুযোগ দিতে হবে৷
প্রতিবেদক: হোসাইন আব্দুল হাই, সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক