জলবায়ু সম্মেলনে বেসরকারী সংগঠনগুলোর খসড়া চুক্তি প্রস্তাব
১৪ জুন ২০০৯কোপেনহেগেন-এ যে সম্মেলন হতে যাচ্ছে সেখানে কার্বন নির্গমন কমানোর জন্য বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যাতে একটি চুক্তির মধ্যে আসে সেজন্য চেষ্টা চলছে৷ তবে এই চুক্তিটি কি ধরণের হবে, কোন বিষয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে সেটি এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি৷ এনিয়ে চলছে বিস্তর দেন-দরবার৷ জাতিসংঘ, দেশগুলোর সরকার ছাড়াও এক্ষেত্রে বেসরকারী সংগঠনগুলো বেশ ভূমিকা রেখে চলেছে৷ এবারের বন সম্মেলনে বেসরকারী সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে একটি খসড়া চুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে দেশগুলোর জন্য৷ এই খসড়া চুক্তির পেছনে রয়েছে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর ন্যাচার বা ডব্লিউ ডব্লিউ এফ, গ্রিনপিস, ইন্ডিএ্যাক্ট, জার্মান ওয়াচ, দ্য ডেভিড সুজুকি ফাউন্ডেশন, ন্যাশনাল ইকোলজিক্যাল সেন্টার অব ইউক্রেন এর মত সংগঠনগুলো৷ সারা বিশ্ব থেকে বিশেষজ্ঞদের তারা কাজে লাগিয়েছে এই খসড়া চুক্তি প্রণয়নের জন্য৷ এই প্রথমবারের মত বেসরকারি সংগঠনগুলোর বন সম্মেলনে আসা ১৯২টি দেশের প্রতিনিধিদের সামনে এই ধরণের কোন চুক্তির প্রস্তাবনা উপস্থাপন করলো৷ এতে বিভিন্ন দেশ পরিবেশগত যে ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা করেছে সেগুলোর সঙ্গে আসল বৈজ্ঞানিক তথ্যের পার্থক্য কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়েছে৷ এ কথা বলেছেন সম্মেলনে গ্রিনপিস প্রতিনিধি দলের প্রধান মার্টিন কাইজার৷ তিনি বলেন, গ্রিনপিস সহ পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো এই বিষয়টি প্রমাণ করতে চায় যে চলতি বছরের শেষে কোপেনহেগেনে একটি জলবায়ু চুক্তিতে আসা সম্ভব৷ এই প্রস্তাবে কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ প্রথম হচ্ছে, শিল্পোন্নত দেশগুলোকে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ কার্বন নির্গমন কমিয়ে আনতে হবে৷ দ্বিতীয়ত, যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে একটি কার্বন মুক্ত অর্থনীতি গড়ে তোলার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে উন্নত দেশগুলো প্রতিশ্রুতি দেবে৷
১৬০ পৃষ্ঠা দীর্ঘ এই খসড়া চুক্তি করার ক্ষেত্রে দেখা গেছে ১৯২টি দেশের জন্য একটি বিষয়ে একমত হওয়া কতটা কঠিন৷ তবুও চেষ্টা থেমে নেই৷ পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর কথা হলো, পৃথিবীকে যদি বাঁচাতে হয় তাহলে দেশগুলোকে একটি ঐকমত্যে আসতেই হবে৷ এ ব্যাপারে মার্টিন কাইজারের কথা হলো, আমাদের সামনে যে ঝুঁকি রয়েছে সে দৃষ্টিকোণ থেকে যদি দেখা হয় তাহলে আমাদের প্রস্তাবিত খসড়া চুক্তির একটি সম্ভাবনা রয়েছে৷ যদি আমরা উল্লেখযোগ্যভাবে কার্বন নির্গমন কমাতে না পারি তাহলে আগামী ৩০ বছরের মধ্যে পৃথিবীর প্রবাল প্রাচীরগুলো হারিয়ে যাবে৷ আগামী ৫০ বছরের মধ্যে আমাজন নদীর কোন অস্তিত্ব থাকবে না৷ তাই রাজনৈতিক নানা খেলা সত্ত্বেও কিছু সত্য বিষয় রয়েছে আমাদের প্রস্তাবিত খসড়া চুক্তিতে৷ যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এবং এখন পর্যন্ত যেটি দেখা যায়নি তা হলো একটি চুক্তি করার ব্যাপারে দেশগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা৷ তবে আমরা কাজ চালিয়ে যাবো৷
বেসরকারী সংগঠনগুলো তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলেও এবারো বন সম্মেলন থেকে তেমন কোন আশানুরূপ ফলাফল দেখা যায়নি৷ জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ বা ইউএনএফসিসির নির্বাহী পরিচালক ইভো ডি বোয়ের জানিয়েছেন আগামী কোপেনহেগেন সম্মেলনে কোন চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌছানোর সম্ভাবনা কম৷ এবারের বন সম্মেলনে আলোচনার গতি প্রকৃতি দেখেই এই মন্তব্য করেছেন তিনি৷ বোয়ের জানান, ২০২০ সালের মধ্যে যে পরিমাণ কার্বন নির্গমন কমানোর জন্য বিজ্ঞানীরা চাপ দিয়ে আসছেন সেই পরিমাণ কার্বন নির্গমন কমাতে এখনো রাজি হয়নি শিল্পোন্নত দেশগুলো৷ তাই আগামী কোপেনহেগেন সম্মেলনে কোন চূড়ান্ত চুক্তির ব্যাপারে আশাবাদী নন জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন দপ্তরের এই শীর্ষ কর্মকর্তা৷
এদিকে আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ গোটা বিশ্বের ২০ কোটি লোক পরিবেশ উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন৷ বনের জলবায়ু সম্মেলনে সংগঠনটির এই আশংকার কথা জানিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়৷ ২৩টি দেশের ২৩০০ পরিবেশ উদ্বাস্তুর সঙ্গে কথা বলে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে৷
প্রতিবেদক: রিয়াজুল ইসলাম, সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারুক